মেসি সর্বকালের সেরা হতে পারেন, কিন্তু এখন তাঁকে বার বার টেক্কা দিচ্ছেন এমবাপে। —ফাইল চিত্র
বিশ্বকাপের ফাইনালে লড়াই আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্সের। বা বলা ভাল লিয়োনেল মেসি বনাম কিলিয়ান এমবাপের। দু’দলের দুই ১০ নম্বর জার্সিধারির একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার লড়াই। শেষ হাসি কে হাসবে তা জানা যাবে রবিবার রাতে। কিন্তু ফাইনালে নামার আগে এখনকার ফর্মের বিচারে এগিয়ে এমবাপে। হতে পারেন মেসি এ বারের বিশ্বকাপে স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন, একা দেশকে ফাইনালে তুলেছেন, তার পরেও বলতেই হয়, এমবাপে এখন মেসির থেকে অনেকটাই এগিয়ে।
দেশের হয়ে গত বছর কোপা আমেরিকা জিতেছিলেন মেসি। হতে পারে আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের ট্রফি খরা তিনি কাটিয়েছেন, কিন্তু তার আগে! একের পর এক প্রতিযোগিতায় ব্যর্থতা সঙ্গী হয়েছে তাঁর। সমালোচকরা বলতেন, ক্লাবের জার্সিতে মেসি যতটা উজ্জ্বল, দেশের জার্সিতে তার ধারেকাছেও না। আর্জেন্টিনার ফুটবল ভক্তরাও দিনের পর দিন সমালোচনা করেছেন মেসির। একের পর এক ব্যর্থতার চাপ সামলাতে না পেরে ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে হারের পরে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরই নিয়ে ফেলেছিলেন মেসি। অবসর কাটিয়ে ফিরেছেন। এ বার হয়তো তিনি ভাল খেলছেন, কিন্তু এখনও শেষ ধাপ পার হওয়া বাকি।
অন্য দিকে বিশ্ব ফুটবলে এখন তর্কাতীত ভাবে সেরা ফুটবলার এমবাপে। শুধু ক্লাব নয়, দেশের হয়েও একই রকম খেলছেন তিনি। প্রথম বার বিশ্বকাপ খেলতে নেমে রাশিয়ায় বিশ্বকাপ জিতেছেন। ফাইনালে গোল করেছেন। এ বারের বিশ্বকাপে ফ্রান্স দলে যে বেশ কয়েক জন ফুটবলার নেই সেই অভাব বুঝতে দিচ্ছেন না এমবাপে। তাঁকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিপক্ষ রক্ষণ। যে ভাবে প্রান্ত ধরে তিনি দৌড়চ্ছেন তাতে তাঁকে উসেইন বোল্টের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। বল নিয়ে বা বল ছাড়া, দু’ক্ষেত্রেই ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে এমবাপেকে। প্রতিপক্ষ কোচ তাঁকে নিয়ে আলাদা করে পরিকল্পনা করছেন। বোতলবন্দি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু পারছেন কি? বার বার রক্ষণ ভেঙে ছিটকে বেরিয়া যাচ্ছেন তিনি। ভাবখানা এমন, নিজের রাজত্বে ঘুরছেন। তাঁকে আটকাবে, সাধ্য কার?
১৮ বছরের ফুটবল কেরিয়ারে দেশের হয়ে না পারলেও ক্লাব ফুটবলে খেলার বিচারে অবশ্য মেসি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। তিনিই কি সর্বকালের সেরা, সেই তর্ক চলেছে। অনেকে পেলে, মারাদোনার থেকেও এগিয়ে রেখেছেন তাঁকে। হতে পারে। কিন্তু বর্তমানের মেসি সেই মেসির ছায়া মাত্র। মাঝেমধ্যে এক-আধটা দৌড়, বিশ্বমানের পাস তাঁর পা থেকে হয়তো বেরচ্ছে, তাতেই হয়তো উতরে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা, পৌঁছে গিয়েছে বিশ্বকাপের ফাইনালে। কিন্তু সেই চেনা ঝলক কি দেখাতে পারছেন মেসি? তার অন্যতম কারণ বয়স। বর্তমান ফুটবলে ৩৫ বছরে ধারাবাহিকতা দেখানো অতটাও সহজ নয়। বয়স মেসির বিপক্ষে যাচ্ছে। তিনি বলেই হয়তো এই বয়সে একটা দেশকে ফাইনালে তুলছেন।
মেসি অনেকটাই বিরাট কোহলির মতো। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক এখন আর আগের ছন্দে নেই। পাঁচ বছর আগে যেমন ব্যাট হাতে তিনি নামলেই অর্ধশতরান বা শতরান লেখা থাকত, এখন আর তেমন থাকে না। কিন্তু তার পরেও গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে সেমিফাইনালে তোলার পিছনে ছিলেন তিনিই। প্রতিযোগিতায় সব থেকে বেশি রান করেছিলেন। কিন্তু আগে তাঁকে দেখে বিপক্ষ যে ভয়টা পেত, সেটা হয়তো এখন আর পায় না। বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তর্কাতীত ভাবে সর্বকালের সেরা কবি। কিন্তু এই প্রজন্মের কাছে হয়তো বেশি গ্রহণযোগ্য জয় গোস্বামী। ঠিক সে ভাবেই বর্তমান ফর্মের বিচারে মেসিকে টেক্কা দিচ্ছেন এমবাপে।
ফাইনালের লড়াই বৃদ্ধ রাজা বনাম তরুণ যুবরাজের। এক জন তাঁর রাজত্বের সায়াহ্নে। শেষ বার চেষ্টা করছেন শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা জেতার। অন্য জন মাত্র ২৩ বছরেই সবাইকে টেক্কা দিয়েছেন। ধীরে ধীরে বিস্তার করছেন নিজের রাজপাট। যদি এ ভাবেই তিনি খেলে যেতে পারেন তা হলে হয়তো কেরিয়ারের শেষে তাঁকেই বলা হবে সর্বকালের সেরা। সেটা তিনি হতে পারবেন কি না তার জবাব দেবে ভবিষ্যৎ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy