কাসেমিরোর গোলের পরে তাঁকে ঘিরে উচ্ছ্বাস ব্রাজিলের ফুটবলারদের। ছবি: রয়টার্স
ডিফেন্স, ডিফেন্স আর ডিফেন্স। এই তিন মন্ত্রে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল সুইৎজারল্যান্ড। ম্যাচের ৮৩ মিনিট পর্যন্ত সেই কাজে সফলও হয়েছিল তারা। নেমার না থাকায় আক্রমণের ছন্দ কিছুটা হলেও হারিয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারল না সুইৎজারল্যান্ড। অবশেষে কাসেমিরোর পায়ে ভাঙল সুইস রক্ষণ। ডান পায়ের দুরন্ত শটে গোল করে দলকে মূল্যবান ৩ পয়েন্ট এনে দিলেন তিনি। এই জয়ের পরে দু’ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ জি-র শীর্ষে ব্রাজিল। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই বিশ্বকাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেলেন তিতের ছেলেরা।
খেলার প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণ শুরু করে ব্রাজিল। বাঁ প্রান্তে ভিনিসিয়াসকে ব্যবহার করে আক্রমণ তুলে আনার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু বড় বিপদ হয়নি সুইৎজারল্যান্ডের গোলে। রক্ষণ মজবুত করে রেখেছিল সুইৎজারল্যান্ড। ফলে আক্রমণ করলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি ব্রাজিল। অন্য দিকে প্রতি-আক্রমণে খেলার পরিকল্পনা করে নেমেছিলেন সুইস কোচ মুরাত ইয়াকিন।
বল নিজেদের দখলে রেখে আক্রমণে উঠে আসছিল ব্রাজিল। মূলত বাঁ প্রান্ত থেকেই হচ্ছিল সব আক্রমণ। ভিনিসিয়াস নিজের গতি ব্যবহার করছিলেন। কিন্তু ফাইনাল থার্ডে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলছিল সেই সব আক্রমণ। ১৮ মিনিটের মাথায় পাকুয়েতার ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি রিচার্লিসন। নইলে এ বারের বিশ্বকাপে নিজের তিন নম্বর গোল করতে পারতেন তিনি।
২৬ মিনিটের মাথায় গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন ভিনিসিয়াস। বক্সের ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ান রাফিনহা। বক্সে অরক্ষিত ছিলেন ভিনিসিয়াস। সামনে ছিলেন শুধু গোলরক্ষক ইয়ান সোমার। পায়ে বলে সংযোগ ভাল হয়নি ভিনিসিয়াসের। বল বাঁচিয়ে দেন সোমার। চার মিনিট পরেই বক্সের বাইরে থেকে সরাসরি গোলরক্ষকের হাতে শট মারেন রাফিনহা।
৩০ মিনিটের পরে খেলায় ফেরার চেষ্টা করে সুইৎজারল্যান্ড। বলের দখল রেখে প্রান্ত ধরে আক্রমণ তুলে আনার চেষ্টা করে তারা। মূলত ডান প্রান্ত ধরে আক্রমণ করছিল তারা। কিন্তু ব্রাজিলের অর্ধে সুইস ফুটবলারের সংখ্যা কম থাকায় আক্রমণ থেকে ফসল তুলতে পারছিল না সুইৎজারল্যান্ড। প্রথমার্ধের শেষে কর্নার থেকে সুযোগ পায় ব্রাজিল। রাফিনহার ক্রসে গোলের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গোল আসেনি। প্রথমার্ধে গোলশূন্য অবস্থায় সাজঘরে যায় দু’দল।
বিরতিতে দলে বদল করেন ব্রাজিলের কোচ তিতে। পাকুয়েতাকে তুলে নিয়ে রদ্রিগোকে নামান তিনি। আক্রমণে আরও গতি বাড়ানোর চেষ্টা করে ব্রাজিল। কিন্তু সজাগ ছিল সুইৎজারল্যান্ডের রক্ষণ। ৫২ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের প্রথম আক্রমণ তুলে আনে সুইৎজারল্যান্ড। বাঁ প্রান্ত থেকে ডান প্রান্তে ভারগাসের উদ্দেশে বল বাড়ান জাকা। ভারগাস সেই বল ধরে বক্সে পাঠান। কিন্তু সুইৎজারল্যান্ডের কোনও ফুটবলার বল পাওয়ার আগেই বিপন্মুক্ত করেন ব্রাজিলের অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা।
৫৬ মিনিটে আবার সুযোগ নষ্ট করে ব্রাজিল। এ বার দোষী রিচার্লিসন। বাঁ প্রান্ত ধরে বক্সে ঢোকেন ভিনিসিয়াস। ডান পায়ের আউট স্টেপে বল রাখেন তিনি। রিচার্লিসন পা ঠেকাতে পারলেই গোল হত। কিন্তু পারেননি তিনি।
প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা শুরু করে সুইৎজারল্যান্ড। ব্রাজিলের বক্সের কাছে মাঝেমধ্যেই পৌঁছে যাচ্ছিল তারা। চাপ কিছুটা বেড়ে যায় অ্যালিসন বেকারের উপর। কিন্তু সব আক্রমণ আটকে যায়। গোল পায়নি সুইৎজারল্যান্ড।
৬৪ মিনিটের মাথায় সুইৎজারল্যান্ডের জালে বল জড়িয়ে দেন ভিনিসিয়াস। রদ্রিগোর পাস থেকে ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে বক্সে ঢুকে ডান পায়ের শটে গোল করেন তিনি। প্রথমে রেফারি গোল দিলেও পরে ভার প্রযুক্তির সাহায্যে বাতিল হয় সেই গোল। আক্রমণ তৈরি করার সময় অফসাইডে ছিলেন রিচার্লিসন। সেই কারণে গোল বাতিল হল। ভিনিসিয়াস অফসাইডে না থাকলেও সতীর্থের ভুলের খেসারত দিতে হয় তাঁকে।
গোল করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ব্রাজিল। অ্যান্টনি ও গ্যাব্রিয়েল জেসাসকে নামিয়ে আক্রমণের গতি আরও বাড়ানোর চেষ্টা করেন তিতে। কিন্তু মরিয়া খেলছিল সুইৎজারল্যান্ডের রক্ষণও। কোনও ভাবেই তাতে ফাটল ধরানো যাচ্ছিল না। অবশেষে গোল করে ব্রাজিল। বাঁ প্রান্ত ধরে ভিনিসিয়াস-রদ্রিগো যুগলবন্দিতে বক্সের মধ্যে বল পান কাসেমিরো। ডান পায়ে জোরালো শট মারেন তিনি। সুইৎজারল্যান্ডের ডিফেন্ডারের শরীরে লেগে সেই বল জালে জড়িয়ে যায়। কিছু করার ছিল না সোমারের।
ব্যবধান আরও বাড়াতে পারত ব্রাজিল। শেষ কয়েক মিনিটে অ্যান্টনি, রদ্রিগোরা সুযোগ পান। কিন্তু গোল করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে জিতেই মাঠে ছাড়ে ব্রাজিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy