গোলের পর সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাস ইস্টবেঙ্গলের বিষ্ণুর (ডান দিকে)। ছবি: এক্স।
ইস্টবেঙ্গল ২ (বিষ্ণু, জেসিন)
মোহনবাগান ১ (সুহেল)
মরসুমের প্রথম কলকাতা ডার্বিতে জিতল ইস্টবেঙ্গল। শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মোহনবাগানকে ২-১ গোলে হারাল তারা। কেরলের জুটিতে জয় ইস্টবেঙ্গলের। গোল করলেন পি ভি বিষ্ণু এবং জেসিন টিকে। ম্যাচের শেষ দিকে মোহনবাগানের হয়ে একটি গোল শোধ করেন সুহেল ভাট।
ইস্টবেঙ্গলকে যতটা উজ্জ্বল লেগেছে, ততটাই খারাপ খেলেছে মোহনবাগান। তাদের রিজ়ার্ভ দল যে একেবারেই তৈরি নয়, সেটা বোঝা গিয়েছে তৃতীয় ম্যাচে এসেই। কলকাতা লিগে এখনও জয়ের মুখ দেখল না মোহনবাগান। অন্য দিকে, ইস্টবেঙ্গল টানা তিনটি ম্যাচ জিতল। কোচেদের মস্তিষ্কের লড়াইয়ে মোহনবাগানের ডেগি কার্ডোজ়োকে টেক্কা দিলেন ইস্টবেঙ্গলের বিনো জর্জ।
ম্যাচের আগের দিন সরাসরি না বললেও মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম একাদশে তিন সিনিয়র ফুটবলারকে রেখেছিলেন কোচ বিনো জর্জ। গোলে এসেছিলেন দেবজিৎ মজুমদার। ডিফেন্সে হীরা মণ্ডল এবং ফরোয়ার্ডে পিভি বিষ্ণুকে আনেন। লাল-হলুদ জার্সিতে অভিষেক হয় ডেভিড লালানসাঙ্গার। অন্য দিকে, মোহনবাগানের প্রথম একাদশে আসেন গ্লেন মার্টিন্স।
খেলার শুরু থেকে ইস্টবেঙ্গলই চাপে রেখেছিল মোহনবাগানকে। সবুজ-মেরুন বক্সে একের পর এক আক্রমণ ভেসে আসছিল। ন’মিনিটের মধ্যেই তিনটি শট নেয় ইস্টবেঙ্গল। তার মধ্যে বিষ্ণুর একটি শট গোলের একদম কাছ থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু খেলা যত গড়াতে থাকে, ততই বিরক্তিকর ফুটবল দেখা যেতে থাকে। খেলা দেখে মনেই হচ্ছিল, দুই দলের ফুটবলারদের মধ্যেই তালমিলের অভাব রয়েছে। এমনিতেই দুই দল তৃতীয় ম্যাচেই ডার্বি খেলতে নেমেছে। এত দ্রুত যে কোনও দলের মধ্যেই ছন্দ আসা অসম্ভব। দুই দলের খেলাতেই সেটা বার বার বোঝা যেতে থাকে। তার উপর দুই দলই এই ম্যাচে সিনিয়র ফুটবলারদের খেলানোয় তাঁদের সঙ্গেও মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয়।
এমন নয় যে দুই প্রধান সাবধানি ফুটবল খেলছিল। আক্রমণ হচ্ছিল দুই দলের তরফেই। কিন্তু প্রচুর মিস্ পাস দেখা যেতে থাকে দু’দলের ফুটবলারদের। এ ব্যাপারেও এগিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। তারা দুই উইং এবং মাঝমাঠ দিয়ে আক্রমণ করছিল। কিন্তু ফাইনাল থার্ডে ঢোকার আগেই বল বেহাত হয়ে যাচ্ছিল। মোহনবাগানের কোনও না কোনও ফুটবলার এসে বল কেড়ে নিচ্ছিলেন।
মোহনবাগানও কম যায়নি। তারা দু’টি শট নিয়েছিল। তার মধ্যে এক বার অফসাইড হন সুহেল ভাট। কিন্তু মোহনবাগানকে ভোগাচ্ছিল মিস্ পাসই। ফরোয়ার্ডে যাঁরা খেলছিলেন তত খুব বেশি বল পাচ্ছিলেন না। খেলা মূলত ঘোরাফেরা করছিল মাঝমাঠেই। তবে গোলের সুযোগ তৈরি করতে না পারলেও তাঁরা ইস্টবেঙ্গলের অনবরত আক্রমণ থামিয়ে দেন।
গোল করার লক্ষ্যে দ্বিতীয়ার্ধে সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সার্থক গোলুইকে নামিয়ে দেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ বিনো। তা শুরুতেই কাজে দেয়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারত ইস্টবেঙ্গল। সায়নের শট গোললাইন বাঁচান মোহনবাগানের এক ডিফেন্ডার। তবে এগিয়ে যেতে সময় লাগেনি ইস্টবেঙ্গলের। ৫০ মিনিটেই গোল করে তারা।
মাঝমাঠ থেকে ভাসানো লম্বা বল ডান পায়ে রিসিভ করেন বিষ্ণু। হালকা টোকায় কাটিয়ে নেন বাগানের দুই ডিফেন্ডারকে। আবার একটি বাঁ পায়ের টোকায় কাটান রাজ বাসফোরকে। তার পরেই জোরালো শটে বল জালে জড়ান। তবে মোহনবাগানের গোলকিপার রাজা বর্মন প্রথম বার দিয়ে গোল খান। থামানোর কোনও রকম প্রচেষ্টাই করেননি। তা হলে গোল বাঁচাতেও পারতেন।
গোল খাওয়ার পর মোহনবাগানের আক্রমণ আগের থেকে বাড়ে। বেশ কয়েক বার ইস্টবেঙ্গলের বক্সে ঢুকে পড়ে তারা। কিন্তু পাল্টা এগিয়ে যেতে পারত ইস্টবেঙ্গলই। ৫৯ মিনিটে পর পর বার তিন বার ইস্টবেঙ্গল খেলোয়াড়দের শট বাঁচিয়ে দেয় মোহনবাগান। সায়ন এবং জেসিন নামার পর ইস্টবেঙ্গলের বাঁ প্রান্ত অনেকটা সচল হয়ে যায়। সেই দিক থেকেই একের পর এক আক্রমণ হতে থাকে। মোহনবাগানের রক্ষণ ফালাফালা করে দিতে থাকেন ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারেরা।
সেটা ধরে রেখেই দ্বিতীয় গোল করে ইস্টবেঙ্গল। এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দোষই মোহনবাগানের রক্ষণের। গোলকিপার রাজা পাস দেন ডিফেন্ডার সৌরভকে। তিনি খুব খারাপ রিসিভ করেন। সৌরভের থেকে বল কেড়ে নেন আমন। তিনি কিছুটা এগিয়ে পাস দেন ফাঁকায় থাকা জেসিনকে। কেরলের ফুটবলারকে কেউ মার্কই করেননি। ফাঁকায় গোলে বল ঠেলে দেন তিনি।
দু’গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর দশ জনের হয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। বল কাড়ার লক্ষ্যে মোহনবাগানের ফুটবলারের উদ্দেশে লাথি চালিয়েছিলেন জোসেফ জাস্টিন। কিন্তু সেই লাথি লাগে সুহেরের পায়ে। মোহনবাগানের সেই ফুটবলার বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে রেফারি প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায় খেলা থামিয়ে ইস্টবেঙ্গলের জোসেফকে লাল কার্ড দেখান।
মোহনবাগানের ব্রিজেশ গিরি একটি সুযোগ তৈরি করে গোলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। তবে সংযুক্তি সময়ে মোহনবাগানের খেলার মধ্যে অন্তত এক গোল শোধ করার প্রবণতা দেখা যায়। সেটা পেয়েও যায় তারা। ডান দিক থেকে ক্রস ভাসিয়েছিলেন টাইসন সিংহ। সেই ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন সুহেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy