সভাপতি পদে ভাইচুংয়ের বিরুদ্ধে লড়াই হতে চলেছে কল্যাণের। ফাইল ছবি
প্রতীক্ষা শেষ। শুক্রবার ভারতীয় ফুটবল সংস্থায় (এআইএফএফ) বহু প্রতীক্ষিত সভাপতি নির্বাচন। এই প্রথম বার এআইএফএফ-এর সভাপতি পদে বসতে চলেছেন কোনও প্রাক্তন ফুটবলার। ভাইচুং ভুটিয়া এবং কল্যাণ চৌবে এই পদে লড়তে চলেছেন। সহ-সভাপতি এবং কোষাধ্যক্ষ পদেও লড়াই হতে চলেছে। শুক্রবারই ফলাফল বেরনোর কথা। না হলে শনিবার।
প্রথমে মনে করা হয়েছিল কল্যাণ একতরফা ভাবে সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হবেন। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে প্রথম দিনই মনোনয়ন জমা দেন ভাইচুং। ফলে কল্যাণের বিরুদ্ধে নির্বাচনে জিতেই তাঁকে সভাপতি হতে হবে। সেই সম্ভাবনা অবশ্য অনেকটাই কম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্য গুজরাত ফুটবল সংস্থার প্রতিনিধি হিসাবে লড়ছেন কল্যাণ। তিনি নিজেও বিজেপি-র সক্রিয় সদস্য। তাঁকে সমর্থন করছে অরুণাচল প্রদেশ, যেখান থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু রয়েছেন। ফলে রাজনৈতিক ভাবে দেশের শাসক দলের সমস্ত সমর্থন পাবেন তিনি।
ভাইচুংয়ের লড়াই পুরোটাই একা। তিনি লড়ছেন অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য সংস্থার প্রতিনিধি হিসাবে। সমর্থন রয়েছে রাজস্থান ফুটবল সংস্থার। তবে ভাইচুংয়ের নিজের রাজ্য সিকিমই তাঁকে সমর্থন করেননি। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু রাজ্যের সমর্থন তিনি পাবেন না বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ভোটাভুটিতে হারার সম্ভাবনাই বেশি। তবে যত ক্ষণ না নির্বাচনের ফল বেরোচ্ছে, তত ক্ষণ কেউই চূড়ান্ত মন্তব্য করতে চান না। কারণ, এ ধরনের নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে হিসাব উল্টে যেতে পারে।
সহ-সভাপতির পদে লড়াই হবে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিংহের ছেলে তথা কংগ্রেস নেতা মানবেন্দ্র সিংহ এবং কর্নাটক ফুটবল সংস্থার সভাপতি এনএ হ্যারিসের। মানবেন্দ্র সভাপতি পদে সমর্থন করেছেন ভাইচুংকে। অন্য দিকে, কোষাধ্যক্ষ পদে লড়তে চলেছেন গোপালকৃষ্ণ কোসারাজু এবং কিপা অজয়। কোসারাজু ২৬ অগস্ট একটি চিঠি তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহারের কথা বলেছিলেন। তবে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ না করায় নির্বাচনে লড়তে হচ্ছে তাঁকে।
মনোনয়ন জমার পরেই সংবাদ সংস্থাকে সাক্ষাৎকারে ভাইচুং নিজের পরিকল্পনার কথা জানান। বলেন, “দুটো জিনিসের উপরে আমাদের আরও জোর দিতে হবে। প্রথমত, তৃণমূল স্তরের উন্নতি। দ্বিতীয়ত, রাজ্য সংস্থাগুলোকে আরও বেশি টাকা দেওয়া। তৃণমূল স্তরের উন্নতির কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু আমি চাই সে ব্যাপারে আরও মনোযোগ দেওয়া হোক।” ভাইচুং জানিয়েছেন, ফুটবলারদের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষপাতী তিনি। বলেছেন, “ফুটবলার-কেন্দ্রিক একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই। ফুটবলারদের আরও পরিষেবা দিতে চাই। খেলোয়াড়দের যাতায়াত এবং থাকার ব্যবস্থা আরও উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
কী ভাবে সেটা সম্ভব সেটাও বলেছেন ভাইচুং। তাঁর কথায়, “ধরুন অরুণাচল প্রদেশের ফুটবলাররা কেরলে কোনও জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাবে। সে ক্ষেত্রে ট্রেনে করে তিন দিন ওদের যেতে হবে। ওরা যাতে বিমানে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।” ভাইচুংয়ের মতে, যদি দেশের ফুটবলের পরিকাঠামোর উন্নতি হয়, তা হলে দ্রুত বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে ভারত। তিনি বলেছেন, “বয়সভিত্তিক দল হোক বা সিনিয়র দল, আগামী দিনে দুটো দলই নিজেদের যোগ্যতায় বিশ্বকাপে যেতে পারে। তার জন্য আমূল সংস্কার এবং ফুটবলের পরিকাঠামোয় বদল প্রয়োজন। রাজ্য দলগুলি থেকেই প্রতিভাবান ফুটবলাররা উঠে আসে। তাই ওদের হাতে বেশি টাকা দিতে হবে।”
তার পরেই একটি সাক্ষাৎকারে ভাইচুংয়ের পাল্টা দেন কল্যাণ। জানান, এক জন প্রাক্তন ফুটবলার হিসাবে ফুটবলারদের স্বার্থ রক্ষা তাঁর সব থেকে বড় কাজ। কল্যাণ বলেন, “ফুটবলের ভাল-খারাপ দুটো দিকই দেখেছি। ফুটবলার হিসাবে ট্রেনে শৌচাগারের পাশে বসে যেতে হয়েছে। আবার বিলাসবহুল হোটেলেও থেকেছি। এক জন ফুটবলারকে কী কী সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় সেটা আমি জানি। তাই ওদের জন্য কাজ করতে হলে কোনও বই পড়তে হবে না। আমার ২৫ বছরের ফুটবল জীবনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাব। ফুটবলারদের জন্য কাজ করব।”
সভাপতি হলে প্রতিটি রাজ্যের ফুটবল সংস্থার দিকে তিনি নজর দেবেন বলে জানান কল্যাণ। তিনি বলেন, “প্রতিটি রাজ্যে ১০,০০০ বর্গফুটের অফিস তৈরি করব। পেশাদারদের দিয়ে ফুটবলকে চালাতে হবে। সবার আগে মূল বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে।” পুরুষ ও মহিলাদের ফুটবলকে তিনি সমান গুরুত্ব দেবেন বলে জানিয়েছেন কল্যাণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy