Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ

‘তোমার কাছে হেরে আমি গর্বিত’, ছেলেকে বললেন বাবা

কলকাতা লিগে বুধবার সেই বাবা বনাম ছেলের দ্বৈরথ ছিল বারাসতে। যা কলকাতা ময়দানে অভিনব। যে লড়াই জিতে ছেলে রাজদীপ বাবাকে ধরে কেঁদে ভাসালেন।

নায়ক: এ ভাবেই মহমেডানের আক্রমণ রুখে দিলেন এরিয়ান গোলরক্ষক সৌভিক। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নায়ক: এ ভাবেই মহমেডানের আক্রমণ রুখে দিলেন এরিয়ান গোলরক্ষক সৌভিক। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৮ ০৫:১০
Share: Save:

মহমেডান ০ • এরিয়ান ১

হাওড়ার চ্যাটার্জিহাটের একই বাড়ি থেকে সকালবেলা বেরিয়েছিলেন কলকাতা লিগের দুই দলের দুই টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। মহমেডানের রঘু নন্দী ও এরিয়ানের রাজদীপ নন্দী। সম্পর্কে যাঁরা বাবা-ছেলে।

কলকাতা লিগে বুধবার সেই বাবা বনাম ছেলের দ্বৈরথ ছিল বারাসতে। যা কলকাতা ময়দানে অভিনব। যে লড়াই জিতে ছেলে রাজদীপ বাবাকে ধরে কেঁদে ভাসালেন। রঘুর চোখও তখন ছলছল করছে। ছেলেকে অভিনন্দন জানিয়ে ময়দানের পোড় খাওয়া ফুটবল প্রশিক্ষক বলে গেলেন, ‘‘তোমার কাছে হেরে আমি গর্বিত।’’

বাবা চলে যাওয়ার পরে বিজয়ী এরিয়ানের টিডি রাজদীপ চোখ মুছে বলতে শুরু করলেন, ‘‘এরিয়ানের এই দলটার নব্বই শতাংশই বাবার তৈরি। তিনিই আমার কোচিং-গুরু। তাই অনেকেই বলেছিলেন আজ নাকি ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ লড়াই’ হবে। আমি হেরে গেলে সেই মুখগুলি সরব হত। তা না হওয়ায় ভাল লাগছে।’’

প্রথমার্ধের ৩৭ মিনিটে এমানুয়েলের গোলে হেরে ফিরলেও এ দিন মহমেডান কিন্তু শুরুটা মন্দ করেনি। প্রেসিং ফুটবল খেলে চেপেও ধরেছিল এরিয়ানকে। কিন্তু তার পরেও রঘু নন্দীর দলকে হেরে ফিরতে হল তিনটি কারণে।

এক, গোলের সামনে গিয়ে তাদের বিদেশি ফুটবলার প্রিন্স ওয়েল এমেকার খেই হারিয়ে ফেলা। দুই, আগের এফসিআই ম্যাচের মতোই রঘুর দল নিয়ে কিছু অনড় মনোভাব। তিন, এরিয়ান গোলকিপার সৌভিক সাঁতরা। হাওড়ার আমতার এই ছেলেটি এ দিন এরিয়ান গোলে দুর্ভেদ্য না হলে ৪-১ জিতে ফিরতে পারত মহমেডান। ম্যাচ সেরা তিনিই।

ম্যাচের শুরুতেই এরিয়ান গোলকিপারকে ফাঁকা পেয়ে গিয়েছিলেন এমেকা। কিন্তু সেই বল তিনি গোলে রাখতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধে রাহুল কেপির বাড়ানো বলে ফ্লিক করলেই গোল এই পরিস্থিতিতেও তিনি বল গোলে ঠেলতে পারেননি। এ ছাড়াও বারে লেগে ফেরে জুয়েল রাজার হেড এবং প্রসেনজিৎ চক্রবর্তীর দুরপাল্লার শট। ম্যাচ শেষে মহমেডান টিডি বলেই গেলেন, ‘‘এমেকা বড় দলের জার্সি পড়ার যোগ্যতা এখনও অর্জন করেনি। আর এত সুযোগ নষ্ট হলে জেতা যায় না।’’

মহমেডান টিডি এ দিনও ফের সেই বাজি আর্মান্দকে দুই স্টপারের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। কবে তিনি বুঝবেন, বাজি আক্রমণ ভাগের পিছনে দাঁড়ালে চাপে পড়বে বিপক্ষ। ফলে আক্রমণে বল সরবরাহ ঠিক হচ্ছিল না। আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াতে উঠে যাচ্ছিলেন স্টপার ল্যান্সিন ত্যুরে। আর জুয়েল রাজাকে এ দিন উইং থেকে সরিয়ে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে রেখেছিলেন রঘু। কিন্তু জুয়েল এখন অচল আধুলি। ট্যাকল, কভারিংয়ে মরচে ধরেছে। গোলের সময় মহমেডান বক্সের সামনে এরিয়ানের শুভঙ্কর সর্দার যখন ছোট্ট টোকায় বল বাড়াচ্ছেন এমানুয়েলকে, তখন কোথায় জুয়েল! হেলায় জোরালো শটে গোল করেন জে জে ওকোচার ভক্ত এমানুয়েল। জুয়েলকে তুলে নিতে হয় প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই।

ম্যাচের রেফারি দেবাশিস মান্ডি হাসির খোরাক হলেন এ দিন। এরিয়ান গোলকিপার মাটিতে পড়ে রয়েছেন, দেখেও তিনি খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। এরিয়ান ফিজিয়ো মাঠের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও খেলা চালিয়ে গেলেন তিনি। যা বোঝাল, মাসখানেক আগে বিশ্বকাপের রেফারিং দেখার পরেও দেবাশিসরা নিজেদের বদলান না ।

মহমেডান: প্রিয়ন্ত সিংহ, তন্ময় ঘোষ, ল্যান্সিন ত্যুরে, প্রসেনজিৎ পাল, কামরান ফারুক, বাজি আর্মান্দ, দীপেন্দু দুয়ারি (রাহুল কেপি), সত্যম শর্মা, প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী (সুমিত দাস), জুয়েল রাজা (মহম্মদ আমিরুল), প্রিন্সওয়েল এমেকা।

এরিয়ান: সৌভিক সাঁতরা, রাজু কোলে, কোরুমা সেইদৌউ ম্যাডি, সন্দীপ পাত্র, সুজয় মন্ডল, বিবেক সিংহ (মহম্মদ ফরিদ), প্রীতম রায়, কুণাল ঘোষ (ঋষি ছেত্রী), শুভঙ্কর সর্দার, ডায়মন্ড আর্থার, এজিয়োগু চিনেডু এমানুয়েল (বেলো রজ্জাক)।

অন্য বিষয়গুলি:

Football Mohammedan Raghu Nandi Rajdeep Nandi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE