ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের নতুন মরসুমের তালিকায় তিনি ব্রাত্য। কিন্তু ডু ডং-কে ইস্টবেঙ্গলের ব্রিটিশ কোচ চাইলেই যে বাদ দিতে পারবেন না, সেটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে ক্লাবের কোরিয়ান মিডিওর চুক্তিপত্রেই!
ডংয়ের যে চুক্তিপত্রের কপি আনন্দবাজারের হাতে শনিবার এসেছে, তাতে স্পষ্ট লেখা— ক্লাবের সঙ্গে আরও তিন বছরের চুক্তি আছে গত মরসুমে লাল-হলুদে আসা এই বিদেশি ফুটবলারের। চুক্তিপত্র অনুযায়ী এই তিন বছরের মেয়াদ ১ জুলাই ২০১৬ থেকে ৩১ মে ২০১৯। শুধু তাই নয়, মেয়াদকালের আগে তাঁকে ছেঁটে ফেলার কোনও ‘ক্লজ’ও সেই চুক্তিতে উল্লেখ নেই। তাই মর্গ্যানের ‘না-পসন্দ’ বিদেশিকে নিয়ে এখন চরম বিড়ম্বনায় ইস্টবেঙ্গল কর্তারা!
ডংকে রাখা হবে, না সাহেব কোচের দাবি মেনে ছেঁটে ফেলা হবে? জবাবে ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদার বললেন, ‘‘আমি যা বলার বলে দিয়েছি। ডং নিয়ে প্রশ্ন থাকলে আমাদের ক্লাবের ফুটবল সচিবের সঙ্গে কথা বলুন।’’ ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য আবার অনড়! এখনও তাঁর দাবি, ‘‘মর্গ্যান চাইলে ডং থাকবে, না হলে নয়।’’ তা হলে ডংয়ের সঙ্গে ক্লাবের যে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি আছে, তার কী হবে? প্রশ্ন শুনে প্রায় পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ছেন সন্তোষবাবু, ‘‘কোথায় সেটা লেখা দেখলেন? ডংয়ের সঙ্গে যে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হয়েছে, কোনও প্রমাণ আছে? আমি আবার বলছি, কোচ চাইলে ও থাকবে, না হলে নয়।’’
কিন্তু বাস্তব অন্য তথ্য দিচ্ছে। চুক্তির কপিতে ডং শুধু ২০১৮-’১৯ মরসুম পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারই নন, আগামী মরসুম থেকে প্রতি বছর তাঁর বেতন এক হাজার মার্কিন ডলার করে বৃদ্ধির কথাও লেখা রয়েছে। যেমন ২০১৬-’১৭ মরসুমে তাঁর বেতন মাস পিছু ৯ হাজার ডলার হলে পরের দু’মরসুম সেটা বেড়ে হবে যথাক্রমে মাসিক ১০ হাজার ও ১১ হাজার ডলার। এর সঙ্গে কলকাতায় তাঁর ফ্ল্যাট ভাড়া বাবদ মাসিক ৩০ হাজার টাকা পেমেন্ট তো আলাদা থাকছেই। ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫-এ ডংয়ের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের হওয়া চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে সই রয়েছে ক্লাবের পক্ষে সচিব কল্যাণ মজুমদার ও সাক্ষী হিসেবে অ্যালভিটো ডি’কুনহার।
ডং-ইস্যুতে লাল-হলুদ কর্তাদের ‘মর্গ্যান-অন্ত প্রাণ’ মনোভাবকে মোটেও ভাল চোখে দেখছেন না ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলাররা। বিশেষ করে ইস্টবেঙ্গলে সাহেব কোচের দ্বিতীয় ইনিংসের গোড়াতেই তীব্র ব্যর্থতা ভুলতে পারছেন না গৌতম সরকার, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়রা। ভাস্কর দিন দুই আগেই মর্গ্যানকে একহাত নিয়েছিলেন আনন্দবাজারে। এ দিন গৌতমও বলে দিলেন, ‘‘এ মরসুমে ডং যেমন খেলেছে, ওকে আমি র্যান্টির চেয়েও এগিয়ে রাখব। কোচকে টিম নির্বাচনে অবশ্যই স্বাধীনতা দিতে হবে। তবে যে ফুটবলার টিমের হয়ে সবচেয়ে ভাল পারফর্ম করেছে, তাকে পরের মরসুমে বাদ দিলে তো টিমেরই ক্ষতি। মর্গ্যান একটা সময় হয়তো ইস্টবেঙ্গলকে ট্রফি দিয়েছে। কিন্তু এখন ওর ঝুলিতে শুধুই ব্যর্থতা। এমন একটা কোচ যদি ভাল ফুটবলারকে ছেঁটে ফেলে উল্টো-পাল্টা ছেলে রিক্রুট করে, তার দায় কে দেবে?’’ লাল-হলুদ কর্তারা অবশ্য যথারীতি বিদেশি কোচের পাশে। কিন্তু তাঁরা যতই বলুন, চুক্তিপত্র মেনে চললে ডং-কে কিন্তু ছেঁটে ফেলা যাবে না! বরং খাতায়-কলমে তাঁকে বাদ দেওয়া অসম্ভব। যদি না ডংয়ের সঙ্গে কোনও বিরাট বোঝাপড়ার রাস্তায় হাঁটেন ক্লাব কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy