প্রথম জন মনে করেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভাবনীয় হার দিয়ে নয়। ইংল্যান্ডের উপমহাদেশ সফরের বিচার হোক ভারতের বিরুদ্ধে তাদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে।
দ্বিতীয় জন আবার মনে করেন, ভারত সফর অনেক বড় ব্যাপার। অ্যালিস্টার কুকের টিমের কারও কারও ইংল্যান্ড জার্সি গায়ে তোলারই যোগ্যতা নেই। ইনি পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন, গ্যারি ব্যালান্স বা আদিল রশিদের মতো কাউকে কাউকে ইংল্যান্ড টিমের উচিত ছিল চট্টগ্রাম টেস্টের পরই দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া!
প্রথম জন— ক্রিকেট-পৃথিবীর কিংবদন্তি অলরাউন্ডার। ইংল্যান্ড ক্রিকেটের নমস্য ব্যক্তিত্ব।
দ্বিতীয় জন— খ্যাতনামা প্রাক্তন পেসার। এবং অবশ্যই ইংরেজ।
প্রথম জন, স্যর ইয়ান বোথাম।
দ্বিতীয় জন, বব উইলিস।
বাংলাদেশের কাছে মিরপুর টেস্টে বিধ্বস্ত হওয়ার পর তুলকালাম চলছে কুকের টিমকে ঘিরে। প্রশ্ন উঠে গিয়েছে যে, নবাগত মেহেদি হাসান মিরাজকে যে টিম খেলতে পারে না, তারা অশ্বিন-জাডেজা-মিশ্রকে কী খেলবে। কেউ কেউ ভবিষ্যদ্বাণীও করছেন যে, সিরিজ একপেশে জিতবে ভারত। এই অবস্থায় যে কোনও টিমের প্রয়োজন হয় কাঁধে সহমর্মিতার হাত। কুকের টিম যা পেয়ে গেল। বথাম দাঁড়িয়ে পড়লেন টিমের পাশে। ইংল্যান্ড কোচ ট্রেভর বেলিসও বলে দিলেন, ভারত সফরে তাঁর টিমের উপর বাজি রাখা ভুল হবে না। কিন্তু তা ক্ষণিকের স্বস্তি মাত্র। বব উইলিস যে বহু দিন ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার পরেও দেশজ টিমের বিরুদ্ধে আগুনে বোলিং করতে নেমে পড়বেন, কে জানত। শুধু টিমকে সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত করা তো নয়, একেবারে নাম ধরে-ধরে বাউন্সার ছুঁড়লেন উইলিস।
অথচ একটা সময় পর্যন্ত এমন দুঃসময়ে বোথামকে ইংল্যান্ডের সেরা প্রাপ্তিলাভ বলে মনে করা হচ্ছিল। এক সাক্ষাৎকারে বোথাম বলে দেন, ‘‘বিশ্বের ওই কোণে ব্যাটিংয়ের এ রকম হুড়মুড়িয়ে পড়াটা আশ্চর্য নয়। ওখানকার উইকেট সে ভাবেই তৈরি করা হয়। যাতে বল ঘোরে। টেস্ট ম্যাচে নতুন বল হাতে স্পিনারকে দেখলেই বোঝা যায়, কী হতে চলেছে।’’ প্রাক্তন ইংরেজ অলরাউন্ডার আরও ব্যাখ্যা দেন, ‘‘বাংলাদেশের জন্য এই জয়টা নিঃসন্দেহে ভাল। কিন্তু ওদের যেটা করতে হবে সেটা হল, নিজেদের দেশের বাইরেও জিততে হবে। ওটাই আসল পরীক্ষা। এখন ইংল্যান্ডকেও সেটা করতে হবে। দিনের শেষে বাংলাদেশ সফর দিয়ে ওদের অতটাও বিচার করা হবে না। কিন্তু ভারতে কী হয়, সেটা দিয়ে কুক আর ওর টিমকে মাপা হবেই।’’
ইংল্যান্ড কোচ ট্রেভর বেলিস আবার একধাপ এগিয়ে বলে দেন যে, তিনি জানেন ভারত সফর আরও কঠিন হবে। কিন্তু সেখানে ভাল ক্রিকেট খেলার ক্ষমতা এই ইংল্যান্ডের আছে। ‘‘আমাদের নিজেদের পুরো ক্ষমতা কাজে লাগাতে হবে। কারণ আমাদের সামনে এমন একটা টিম থাকবে যারা খুব ভাল এবং যারা নিজেদের ঘরের মাঠে খেলবে। আমরা জানতাম বাংলাদেশ সিরিজটা কঠিন হবে কিন্তু এটাও জানি, ভারত সফর আমাদের সবচেয়ে কঠিন কাজ,’’ বলে দেন বেলিস। তবে বেলিস স্বীকার করে নেন যে, টিমের কয়েকটা জায়গা নিয়ে এখনও প্রশ্ন আছে। পরপর চার ইনিংসে দু’অঙ্কে পৌঁছতে না পারা গ্যারি ব্যালান্স যে তালিকায় অন্যতম। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চারটে টেস্টে তাঁর গড় তিরিশ ছোঁয়নি। তার পর বাংলাদেশি স্পিন আক্রমণের সামনে দাঁড়াতে পারেননি ব্যালান্স। সে প্রসঙ্গে বেলিস বলেছেন, ‘‘আমি নিশ্চিত ব্যর্থতা নিয়ে বাকিদের চেয়ে গ্যারি বেশি হতাশ। ও এমন একজন ক্রিকেটার যে খুব কঠিন পরিশ্রম করে। যার ফোকাস অনড় এবং যে ভাল করতে মরিয়া।’’
মুশকিল হল, বেলিসের কাছে যেটা প্রশ্ন, উইলিসের কাছে সেটা আবার অন্যায়। চরম অন্যায়! যিনি ব্যালান্স নিয়ে এতটাই ক্ষিপ্ত যে প্রায় ফুঁসতে ফুঁসতে বলে দিয়েছেন, ব্যালান্স আদৌ টেস্ট ক্রিকেটের যোগ্য কি না তা নিয়ে তাঁর ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। ‘‘মনে তো হয়, বাকিরা ওকে ধরে ফেলেছে। উচিতই হয়নি বাংলাদেশ সফরে ওকে রাখা। প্রথম টেস্টের পরেই ফ্লাইটে বসিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া উচিত ছিল,’’ বলেছেন উইলিস। সঙ্গে আরও দু’জনের নাম ধরে আক্রমণ। একজন বেন স্টোকস। উইলিসের চোখে তিনি এমন একজন ক্রিকেটার, চাপে যাঁর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অন্য জন, আদিল রশিদ। ‘‘স্রেফ টিমের বোঝা একটা। ব্যালান্সের সঙ্গে ওকেও চট্টগ্রাম টেস্টের পর বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া উচিত ছিল,’’ হুঙ্কার ছুড়েছে উইলিস।
প্রাক্তন ইংরেজ ফাস্ট বোলারের রাগ অন্য জায়গায়। তাঁর মতে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে কমজোরি টিম বেছে নেমেছিল ইংল্যান্ড, তা আদতে টেস্ট ক্রিকেটের অপমান। ‘‘লজ্জাজনক বললেও কম বলা হয়। এরা স্রেফ টেস্ট ক্রিকেটের অপমান করে ছাড়ল,’’ বলে ফেলেছেন উইলিস। বুঝিয়ে দিয়ে যে, বোথাম-বেলিসরা যে দিকেই যান, তিনি নিজের রাস্তায় হাঁটবেন। সহমর্মিতা নয়, তাঁর বিচারসভায় কুকদের এমন ‘অপরাধ’-এর শাস্তি একটাই। ফায়ারিং স্কোয়াড!
আসলে নাম যদি বব হয়, কিছু না কিছু একটা হবেই। তা ডিলান হোক বা উইলিস!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy