মুম্বই এফসি-২ (স্টিভন, আশুতোষ)
ইস্টবেঙ্গল-২ (র্যান্টি, মেন্ডি)
ক্রিস গেইল, ডোয়েন ব্র্যাভোদের দেখা পাওয়া গেল বারাসত স্টেডিয়ামে!
তবে বাইশ গজে নয়। ফুটবল মাঠে। সদ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পেশ্যাল সেই নাচটা এখন জনপ্রিয় বিশ্বজুড়ে। মঙ্গলবার আই লিগের ম্যাচে গোলের পর ক্যারিবিয়ান স্টাইলে নাচতে দেখা গেল ফুটবলারদেরও।
তবে গেইলদের মতো নাচলেও শেষ হাসিটা তাঁদের মতো করে হাসতে পারলেন না র্যান্টি মার্টিন্সরা। উল্টে শিলংয়ে এ দিনই মোহনবাগান ড্র করে খেতাব দৌড়ে যে সুযোগ ইস্টবেঙ্গলের সামনে এনে দিয়েছিল, কয়েক ঘণ্টা পরেই তা হাতছাড়া করে বসল বিশ্বজিৎ-ব্রিগেড।
পাহাড় থেকে সমতল— বাংলা ফুটবলজুড়ে এ দিন শুধু হতাশা। আর আই লিগে অ্যাডভান্টেজ বেঙ্গালুরু।
কাকতালীয় ভাবে ইস্ট-মোহনের নিজেদের ম্যাচের স্কোরলাইনটাও হুবহু এক। ২-২। যদিও এর পরেও লাল-হলুদ কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য আশাবাদী। ‘‘আমাদের আশা শেষ হয়ে যায়নি। এর পর বেঙ্গালুরু ম্যাচ। ওই অ্যাওয়ে ম্যাচের রেজাল্ট আবার অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। তবে বেঙ্গালুরুতে জিততে না পারলে আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়া মুশকিল,’’ এ দিন বললেন তিনি।
অবনমন বাঁচানোর লড়াইয়ে মুম্বই টিমকে যতটা মরিয়া দেখাল, খেতাব দৌড়ে থাকা ইস্টবেঙ্গলের শরীরী ভাষায় সেই তাগিদটা যেন ছিল না এ দিন। শুরু থেকেই গোলের সহজ সুযোগগুলো হেলায় নষ্ট করেছে তারা। আর লাল-হলুদ ডিফেন্সের অবস্থা তো আই লিগের শুরু থেকেই কঙ্কালসার। এত নড়বড়ে রক্ষণ নিয়ে ভারতসেরা হওয়ার স্বপ্ন দেখাটাও হয়তো একটু বাড়াবাড়ি। ম্যাচের পর র্যান্টি বলেও গেলেন, ‘‘২-১ লিড আমাদের ধরে রাখা উচিত ছিল। ডিফেন্সে সবাই তো দাঁড়িয়ে পড়ল!’’
লাল-হলুদের অজুহাত সেই রেফারি। মুম্বইয়ের দ্বিতীয় গোলটা নিয়ে অবশ্য সামান্য বিতর্ক থাকতে পারে। আশুতোষ অফসাইডে ছিলেন বলে দাবি ইস্টবেঙ্গল শিবিরের। বিশ্বজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন, ‘‘লাইন্সম্যান ফ্ল্যাগ তুলেও নামিয়ে নেন। ওটা অফসাইড ছিল বলেই মনে হয়েছে।’’ নিজেদের পিঠ বাঁচাতে রেফারির দিকে আঙ্গুল তোলাটা সবচেয়ে সহজ। সব দলই সময়-অসময়ে করে। তবে ম্যাচের কাঁটাছেড়া করতে বসলে ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্স নিয়ে কতগুলো প্রশ্নও উঠছে। বিশ্বজিৎ অবশ্য তাঁর নিজের মতো করে সেগুলোর উত্তরও দেন।
১) কেন তিন দিন আগের ডার্বির জোড়া গোলদাতা ডং এ দিন হাফটাইম পর্যন্ত বেঞ্চে? বিশ্বজিতের দাবি, ‘‘ওটা আমাদের স্ট্র্যাটেজির মধ্যে ছিল।’’
২) ডংকে দ্বিতীয়ার্ধে নামালেও সঞ্জুর বদলে কেন? সঞ্জুই তো তার আগে বারবার আক্রমণে উঠছিলেন। র্যান্টির গোলটাও সঞ্জুর পাস থেকে। বিশ্বজিত বলছেন, ‘‘সঞ্জু-অবিনাশের মধ্যে পরের জন ভাল খেলছিল বলে প্রথম জনকে বসিয়েছি।’’
৩) অসংখ্য গোলের সুযোগ নষ্ট করা সত্ত্বেও মেন্ডি পুরো নব্বই মিনিট মাঠে কেন। যদিও তিনি একটা গোল পেয়েছেন, তবে যে দু’টো গোল নষ্ট করেছেন, তা অমার্জনীয়। বিশ্বজিতের ব্যাখ্যা, ‘‘মেন্ডি ছাড়া আমার কোনও বিকল্প ছিল না। সব পজিশনে খেলতে পারে। তাই পুরো ম্যাচ খেলিয়েছি।’’
বারাসতে এ দিন ঝড় উঠেছিল। খালিদ জামিলের ছেলেদের আক্রমণের ঝড়েও একটা সময় দিশেহারা হয়ে পড়ে ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্স। সেই সময় স্টিভন ডায়াসের সৌজন্যে প্রথম গোল মুম্বইয়ের। আবার ক্ষণিকের কালবৈশাখীর মতোই মুম্বই-আক্রমণের ঝড়ও গোলের পর হঠাৎই থেমে যায়। লিড ধরে রাখতে পুরোপুরি রক্ষণাত্মক খেলতে শুরু করে মুম্বই। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সমতা ফেরান র্যান্টি।
যদিও ডার্বি জেতার পর আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যে সুযোগ এসেছিল, সেটা নিজেদের দোষেই প্রবল কঠিন করে তুলল ইস্টবেঙ্গল। শেষ ল্যাপের তিন ম্যাচের মধ্যে বিশ্বজিতের টিমের দু’টো অ্যাওয়ে— বেঙ্গালুরু, শিলংয়ের মতো কঠিন দলের বিরুদ্ধে। যাদের ঘরের মাঠে হারানো এ বার খুব কঠিন হচ্ছে। আর ইস্টবেঙ্গলের ঘরের মাঠে ওডাফার স্পোর্টিং ক্লুবের সঙ্গেও লড়াইটা কিন্তু সহজ হবে না। তার উপর র্যান্টির হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট নতুন করে চিন্তা বাড়িয়েছে বিশ্বজিতের। চোটের তালিকায় মেন্ডি, রবার্ট, লোবো, অর্ণব। ড্রয়ের পর হতাশ লাল-হলুদ সমর্থকরা যেন ধরেই নিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল আর পারবে না। তাদের বক্তব্য, মুম্বইয়ের মতো টিমকে ঘরের মাঠে যারা হারাতে পারে না, অ্যাওয়ে ম্যাচে বেঙ্গালুরুকে কী হারাবে!’’
যার জবাব এখন একমাত্র দিতে পারেন র্যান্টিরাই।
ইস্টবেঙ্গল: লুইস ব্যারেটো, রবার্ট (সৌমিক), বেলো, অর্ণব, রাহুল, অবিনাশ, লোবো (শেহনাজ), মেহতাব, সঞ্জু (ডং), মেন্ডি, র্যান্টি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy