Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
সুভাষকে ‘গো ব্যাক’

ইস্টবেঙ্গলকে আটকে দিল শুভমের হাত

কলকাতা লিগের দ্বিতীয় ম্যাচ। সেই ম্যাচেই পয়েন্ট নষ্টের পরে যেভাবে পুলিশকে লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে লাল-হলুদ সমর্থকদের সরাতে হল তাতে প্রশ্ন উঠে গেল, ইস্টবেঙ্গলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের ভাবনায় আদৌ কী সায় আছে মশালধারীদের?

ক্ষোভ: সুভাষের সামনে ক্ষুব্ধ সমর্থকেরা। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ক্ষোভ: সুভাষের সামনে ক্ষুব্ধ সমর্থকেরা। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০৬
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল ০ কাস্টমস ০

কাস্টমস গোলকিপার শুভম সেনের মুখে যখন শুক্রবারের ম্যাচ শেষে কয়েক হাজার ওয়াটের আলো, তখন ইস্টবেঙ্গল তাঁবুর গেটে বিক্ষোভের আগুন থেকে স্লোগান উঠে গিয়েছে, ‘সুভাষ ভৌমিক গো ব্যাক’।

কলকাতা লিগের দ্বিতীয় ম্যাচ। সেই ম্যাচেই পয়েন্ট নষ্টের পরে যেভাবে পুলিশকে লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে লাল-হলুদ সমর্থকদের সরাতে হল তাতে প্রশ্ন উঠে গেল, ইস্টবেঙ্গলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের ভাবনায় আদৌ কী সায় আছে মশালধারীদের?

আই লিগের জন্য কলকাতা লিগ বিসর্জন দিতেও তিনি প্রস্তুত, মরসুমের শুরুতে ঘোষণা করেছিলেন সুভাষ! এ দিন দেখা গেল সেটা মানতে নারাজ ইস্টবেঙ্গল সদস্য-সমর্থকরা তো বটেই, এমনকী কর্তারাও। টানা আট বার খেতাব জেতার পরেও তারা ঘরোয়া লিগ হাতছাড়া করতে নারাজ। ম্যাচের পর সুভাষ এ দিন ফের বলে দিয়েছেন, ‘‘ওরকম বিক্ষোভ অনেক দেখেছি। অনেক গো ব্যাক স্লোগান শুনেছি। আবার শুনতে রাজি। ২০০২তেও পোর্ট ট্রাস্টের সঙ্গে ড্র-এর পরে শুনেছিলাম। তারপর কী হয়েছিল? আট বার তো ইস্টবেঙ্গল কলকাতা লিগ পেয়েছে, তাতে কোনও লাভ হয়নি। আল আমনাকে আমি শুরু থেকে নামাবো না যখন বলেছি, সেটাই পরের ম্যাচগুলেতো বজায় থাকবে।’’ টিডি এ সব বলার মিনিট পনেরোর মধ্যেই অবশ্য উল্টো কথা শোনা গিয়েছে ক্লাবের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকারের মুখে। তিনি আবার বলে দিয়েছেন, ‘‘কলকাতা লিগও আমরা জিততে চাই। টিডিকে বলব আমনাকে যেন পরের ম্যাচে শুরু থেকেই নামায়।’’

কলকাতা লিগ নিয়ে টিডি এবং ক্লাব কর্তাদের অবস্থান ভিন্ন মেরুতে, এটা কাস্টমসের কাছে পয়েন্ট নষ্টের পরেই প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। তার প্রতিফলন ঘটেছে এ দিনের ম্যাচেও। গোল না পেয়ে লাল-হলুদ জার্সি যখন দিশাহারা, তখন দেখা গিয়েছে, গ্যালারি থেকে মাঠে নেমে গিয়ে শীর্ষ কর্তা দেবব্রতবাবু দলের টিডি সুভাষকে কিছু বলছেন। এর পরই দেখা যায়, সিরিয়ান মিডিও মাঠে নামছেন। সঙ্গে ব্র্যান্ডন ফার্নান্দেজও। দু’তরফেই অবশ্য ফুটবলার নামানোর জন্য চাপের কথা অস্বীকার করেছে। সুভাষ বলেছেন, ‘‘আমনাকে নামানোর সিদ্ধান্ত আমার।’’ আর ক্লাবের শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, ‘‘দলে কোনও বদল হবে কী না তা জানতে চাইছিলাম টিডির কাছে।’’

বিরতির পরে আমনা বা ব্র্যান্ডনকে নামিয়েও অবশ্য ইস্টবেঙ্গল জিততে পারেনি। নব্বই মিনিটের সঙ্গে দু’অর্ধ মিলিয়ে অতিরিক্ত সময় আরও তেরো মিনিট। অর্থাৎ সব মিলিয়ে জেতার জন্য গগনদীপ বালিরা পেয়েছিলেন প্রায় একশো তিন মিনিট। তাতেও কাস্টমসের গোলকিপারকে টপকাতে পারেননি লালরিন্দিকা রালতেরা। হুগলির ছেলে শুভম অতি মানব হয়ে শুষে নিয়েছেন সুভাষ ব্রিগেডের সব ইচ্ছাশক্তি। প্রায় দশ বছর ময়দানে খেলছেন ম্যাচের সেরা শুভম। তিন বার ছিলেন বাংলার সন্তোষ ট্রফি দলে। মহমেডানেও খেলেছেন। এখনও চাকরি জোটেনি। আমনা, কাসিম আইদারাদের মতো কোটিপতি ফুটবলার থামিয়ে দিয়ে শুভমের মন্তব্য, ‘‘ব্যারোটো, ও়ডাফার বিরুদ্ধে খেলেছি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছি।’’

উত্তরপাড়ার নেতাজি ব্রিগেড ক্লাবের শুভমের হাতে আটকে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। আবার উল্টোদিকে মরসুমের প্রথম ধাক্কা খাওয়ার জন্য সুভাষের দলের তিন ফুটবলার গগনদীপ বালি, লালরাম চুলোভা এবং লালরিন্দিকা রালতেকেও তোলা যেতে পারে কাঠগড়ায়। এমন সব গোলের সুযোগ ওঁরা হাতছাড়া করেছেন, যা ক্ষমার অযোগ্য। আসলে ইস্টবেঙ্গলে যে গোল করার লোকই নেই। কর্তারা তাড়াতাড়ি বিদেশি স্ট্রাইকার আনাতে না পারলে সুভাষকে আরও ‘গো ব্যাক’ শুনতে হবে। কাস্টমস কোচ রাজীব দে ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠের দুই পাসার লালরিন্দিকা এবং কাসিমের পিছনে মার্কার লাগিয়ে অকেজো করে দিয়েছিলেন শুরু থেকেই। প্রথমার্ধের ইস্টবেঙ্গলকে তাই দেখে মনে হয়েছে কাস্টমসের মাঝমাঠের চেক পোস্টের সামনে পরে রীতিমতো দিশাহারা। দ্বিতীয়ার্ধে আমনা এবং ব্র্যান্ডন নামার পরে লাল-হলুদের আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ে। উইং প্লে শুরু হয়। শুরু হয় ডাউন দ্য মিডল দৌড়ও। তখন অবশ্য রক্ষণের সামনে দেওয়াল তুলে দিয়েছে কাস্টমস। তিন বিদেশির সঙ্গে সৌরভ দাশ, অমিত রায়, রাকেশ ধারার মতো বঙ্গসন্তানরাও তখন মশাল নেভাতে মরিয়া। তাদের চেষ্টা সফল। গ্যালারি থেকে উড়ে আসা জলের বোতলও ওঁদের দমাতে পারেনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE