n চর্চায়: প্রসাদ (উপরে),আগরকর ও রাজেশ চৌহান।
জাতীয় নির্বাচকদের নির্বাচনকে ঘিরে হঠাৎই চরম নাটকীয় সব মোচড় এসে পড়তে শুরু করেছে। এত দিন যিনি ফেভারিট ছিলেন, সেই লক্ষ্মণ শিবরামকৃষ্ণণের চেয়ারম্যান হওয়া তো দূরের কথা, ফটো-ফিনিশে তিনি ছিটকে যেতে পারেন কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে।
পাঁচ প্রতিনিধির জাতীয় নির্বাচক কমিটিতে দু’টি জায়গা ফাঁকা হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে এম এস কে প্রসাদ, যিনি আগের নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং মধ্যাঞ্চলের গগন খোড়ার মেয়াদ শেষ গিয়েছে। প্রায় ঠিকই হয়ে গিয়েছিল, এঁদের জায়গায় মধ্যাঞ্চল থেকে আসবেন রাজেশ চৌহান এবং দক্ষিণ থেকে শিবরামকৃষ্ণণ। বোর্ডের মধ্যে একাংশ চাইছিল, বয়সে ‘সিনিয়র’ শিবা নন, বেশি টেস্ট খেলা চৌহানকে চেয়ারম্যান করা হোক।
চৌহান এখনও ভাল মতোই দৌড়ে রয়েছেন। সম্ভবত তিনিই আসছেন মধ্যাঞ্চলের নতুন প্রতিনিধি হয়ে। কিন্তু দক্ষিণ থেকে আচমকাই শিবরামকৃষ্ণণের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছে বেঙ্কটেশ প্রসাদের নাম। দু’জনেই নির্বাচকের পদের জন্য আবেদন করেছেন। ভারতের হয়ে লেগস্পিনার শিবরামকৃষ্ণণ খেলেছেন ৯টি টেস্ট এবং ১৬টি ওয়ান ডে। বেঙ্কটেশ প্রসাদ খেলেছেন অনেক বেশি— ৩৩টি টেস্ট এবং ১৬১ ওয়ান ডে। এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে বোর্ডের প্রভাবশালী অংশে কেউ কেউ পাল্টা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, কেন শিবা? কেন প্রসাদ নন? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অধিনায়কত্বে খেলেছেন প্রসাদ। ওয়াকিবহাল মহলে কারও কারও মত, বর্তমান বোর্ড প্রেসিডেন্টের নীরব ভোট যদি প্রসাদের দিকে থাকে, তা হলেও অবাক হওয়ার নেই। চৌহান এখনও চেয়ারম্যানের দৌড় থেকে হারিয়ে যাননি। কিন্তু নাটকীয় পটপরিবর্তনের জেরে প্রসাদ যদি শিবরামকৃষ্ণণকে ছিটকে দেন, তখন চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে যাবেন প্রসাদই।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফিরছেন নেমার, চনমনে সালাহরা
এই ডামাডোলের বাজারে ভেসে থাকছেন অজিত আগরকরও। তিনিও আবেদন করেছেন নির্বাচকের পদের জন্য। তিনিও অধিনায়ক সৌরভের অধীনে খেলেছেন। ২৬ টেস্ট এবং ১৯১ ওয়ান ডে খেলা আগরকরের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা শিবরামকৃষ্ণণের চেয়ে এগিয়ে। যদি তাঁর নাম পাশ হয়ে যায়, তা হলে তিনিও চেয়ারম্যান হওয়ার দাবিদার। তথ্যাভিজ্ঞমহলের মতে, আগরকর তাঁর প্রাক্তন অধিনায়কের দিক থেকে ইতিবাচক কোনও ইঙ্গিত না-পেলে কি আর আবেদন করতে যেতেন? নির্বাচক বাছাই নিয়ে মুখ না-খুললেও চেয়ারম্যান হিসেবে বড়সড় কোনও নাম যে আনতে চান সৌরভ, তা কিন্তু শোনাই যাচ্ছিল। এবং সন্দেহ নেই আবেদনকারীদের মধ্যে বেঙ্কটেশ প্রসাদ এবং অজিত আগরকরই সব চেয়ে বড় দুই নাম।
লোঢা সংস্কারের ফলে এখন এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই যে, একটি অঞ্চল থেকে এক জন নির্বাচকই রাখা যাবে। যোগ্যতার বিচারে একই অঞ্চল থেকে দু’জন নির্বাচক আসতেই পারেন। অর্থাৎ, নিয়ম অনুযায়ী পশ্চিমাঞ্চল থেকে আগরকর এবং এখনও মেয়াদ না ফুরনো যতীন পরাঞ্জপের থাকা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু বোর্ড মহলে গরিষ্ঠ অংশ চান না, একই অঞ্চল থেকে দু’জন নির্বাচক আসুন। তা করতে গেলে একটি অঞ্চলকে সম্পূর্ণ নির্বাচকহীন করে রাখতে হয়। তাই আগরকর এলে কখনও ভারতের হয়ে না-খেলা যতীন বিদায় হবেন। বোর্ড আবার বিজ্ঞাপনেই জানিয়েছিল, দু’জন নির্বাচকের জন্য আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে। যার অর্থ, দু’জনের বেশি বদল করা নিয়ে জটিলতা আসতে পারে। তা হলে আগরকরকে আনতে গিয়ে কি তিনটি বদল করা হবে? সে-ও আর এক জটিল প্রশ্ন।
শিবরামকৃষ্ণণ আবার এন শ্রীনিবাসনের বিশেষ পছন্দের প্রার্থী। বোর্ড মহলে সকলে জানে এই তথ্য। তার পরেও যে শিবার মনোনয়ন নিরঙ্কুশ সমর্থন পাচ্ছে না, তাতে পরিষ্কার, বোর্ডের অন্দরমহলে আগের সেই একচ্ছত্র ক্ষমতা হারিয়েছেন শ্রীনি। ক্রিকেটারদের চুক্তির তালিকায় মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে রাখতে চেয়েও পারেননি। এ বার যদি শিবরামকৃষ্ণণকেও নির্বাচকমণ্ডলীতে না-আনতে পারেন, পর-পর দু’টি বড় ধাক্কা খাবেন এক সময় বোর্ডের সর্বময় কর্তা। প্রসাদ, শিবা দু’জনেই দক্ষিণের। এক জন কর্নাটকের, অন্য জন তামিলনাড়ুর। পুরনো মতে বোর্ড প্রশাসন চললে, দক্ষিণের কর্তারা নিজেদের মধ্যে বসে ঠিক করে নিতে পারতেন, কে তাঁদের অঞ্চলের প্রতিনিধি হবেন। না লাগত কোনও আবেদন, না হত কোনও ইন্টারভিউ।
কিন্তু লোঢা সংস্কারের পরে ইচ্ছা না থাকলেও নতুন প্রক্রিয়া মানতে হচ্ছে। তিন সদস্যের ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটির সামনে ইন্টারভিউ দিয়ে ঠিক হবে, কারা নতুন নির্বাচক হিসেবে আসবেন। তাই শ্রীনিদের হাতে সম্পূর্ণ ভাবে আর ম্যাচের রাশ নেই। আবার একটা অংশের মত, শ্রীনিকে এখনই অতটা হিসাবের বাইরে করে দেওয়াও ঠিক হবে না। বোর্ডের শীর্ষ নেতৃত্বকে প্রভাবিত করে ফেলতে তাঁর কত ক্ষণ লাগবে? শিবাকে নিয়ে তিনি সহজে রণে ভঙ্গ দেবেন না। এমনও হতে পারে যে, বেঙ্কটেশ প্রসাদের সঙ্গে তীব্র লড়াই হওয়ার পরে শিবাই এলেন। কিন্তু তাঁকে চেয়ারম্যান করা হল না। চেয়ারম্যান করে নিয়ে আসা হল আগরকর বা চৌহানকে। একাধিক সম্ভাবনার দরজা খোলা রয়েছে। উপদেষ্টা কমিটির প্রতিনিধিরাই বা কী করে বেশি টেস্ট খেলা ক্রিকেটারদের উপেক্ষা করবেন?
সব মিলিয়ে, আগামী কয়েক দিন নির্বাচকদের নির্বাচন ঘিরে রুদ্ধশ্বাস ‘ম্যাচ’-এর অপেক্ষা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy