স্টেডিয়ামে হঠাৎ দেখা। আড্ডায় জমে গেলেন দীপেন্দু বিশ্বাস ও দেবজিৎ ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
এই তো সে দিন। ন্যু ক্যাম্প, বের্নাবাউয়ের মাঠে বসে খেলা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল দীপেন্দু বিশ্বাসের। সেই মাঠের সঙ্গে নাকি এই যুবভারতী স্টেডিয়ামের বিন্দুমাত্র পার্থক্য নেই! বিশ্বের সেরা সেরা সে সব স্টেডিয়ামের সঙ্গে এ মাঠ সমানে সমানে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে।
এই স্টেডিয়ামকে ছোটবেলা থেকে দেখছেন দীপেন্দু। দাপিয়ে খেলেছেন এখানে। এমনকী, ভোল পাল্টে যাওয়া এই স্টেডিয়াম নতুন রূপে সেজে তোলার প্রথম মুহূর্ত থেকে গোটা পর্বটাতেই তিনি ছিলেন। সামনে থেকে এ ভাবে পাল্টে যেতে দেখে উচ্ছ্বসিত দীপেন্দু।
উচ্ছ্বসিত প্রাক্তন ফুটবলার দেবজিৎ ঘোষও। অনেক দিন পর আনন্দবাজারের ডাকে নতুন স্টেডিয়ামে এসে রীতিমতো চমকে গেলেন তিনি। দীপেন্দুকে সামনে পেয়ে বলেই ফেললেন, ‘‘এটা কী দেখছি! এমনটা বিদেশে দেখেছি। আমি তো চিনতেই পারছি না। গর্ব হচ্ছে। দারুণ কাজ করেছিস তোরা দীপু।’’ তোরা বলতে, এ রাজ্যের সরকার। কারণ, দীপেন্দু এখন সেই সরকারি দলের শরিক। তিনি তো বিধায়ক!
মুখোমুখি দেবজিৎ-দীপেন্দু। জমে গেল আড্ডা। দেখুন ভিডিও
—আচ্ছা, সেই বিখ্যাত ডার্বিটার কথা মনে আছে তোর দীপু?
—মনে থাকবে না আবার! এক লাখ ২০ হাজারের গ্যালারিতে সে বার ১০ হাজার লোক বাড়তি ছিল।
—তবে, তখন মাঠটা ভাল ছিল রে। এখন হয়তো আরও ভাল। কিন্তু, বাকি পরিষেবা একেবারেই পাতে দেওয়ার মতো ছিল না।
আরও পড়ুন
ফুটবলের মক্কা সাজছে বিদেশি ঢঙে, যুবভারতী টেক্কা দেবে এতিহাদকেও
বিশ্বকাপের জন্য কতটা তৈরি যুবভারতী?
—সে আর বলতে! টয়লেটগুলোর দশাও কেমন ছিল বলো। এখন সব ভোল বদলে গিয়েছে। এমনকী যুব আবাসেরও।
—মাঠে বসার জায়গা ছিল না। বেরনোর জায়গা নেই। চারদিকে কাদা।
—সে সব এখন অতীত। এমন স্টেডিয়াম মানুষ টিকিট কেটে দেখতে আসবে।
প্রাক্তন সতীর্থকে দেখে তাই হাজারো প্রশ্ন, অতীত, উচ্ছ্বাস, স্বপ্ন এবং সংশয়ের কথা পেড়ে ফেললেন। স্টেডিয়াম চত্বরে হাঁটতে হাঁটতেই জমে গেল দু’জনের আড্ডা। ফুটবল জীবনের অনেকটা সময় তো দু’জনের একসঙ্গে কেটেছে।
যুবভারতীর মূল গেট দিয়ে ঢোকার মুখেই দেখা মিলবে তাঁর।
এমন কথা যে স্টেডিয়ামকে ঘিরে বলে চলেছেন দুই ফুটবলার, তাকে ঘিরে এ বঙ্গের মানুষের হাজারো স্মৃতি। ভাল-মন্দ মিশিয়ে। শুধু ডার্বি বা ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান বা মহামেডান? না, তা নয়। এই স্টেডিয়ামের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে মারাদোনা, অলিভার কান, বেবেতো, বেটো থেকে লিওনেল মেসির। সেখানেই এ বার যুব বিশ্বকাপের আসর। কে বলতে পারে এক দিন বড়দের বিশ্বকাপও হবে না এই স্টেডিয়ামে। তেমন স্বপ্ন তো দেখছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সে দিন ফিফার হাতে স্টেডিয়াম তুলে দেওয়ার পরে উত্তরবঙ্গের উত্তরকন্যা থেকে ‘নয়া’ যুবভারতীর উদ্বোধনের সময় সেই স্বপ্নের কথা প্রকাশ্যে বলেও ফেলেছেন তিনি।
তবে, দীপেন্দুর যেন স্বপ্নপূরণ হয়ে গিয়েছে। সেই ভাল লাগাই জানালেন দেবজিৎকে।
—পাঁচটা যে বক্স হয়েছে স্টেডিয়ামে সেটা দেখলে চমকে যাবে। প্রেস বক্স থেকে ভিআইপি বক্স সব টক্কর দেবে ম্যানচেস্টার, বার্সেলোনার সঙ্গে।
—আরিব্বাস! সে তো একটা অসম্ভব ভাল ব্যাপার। ফার্স্ট ডিভিশন খেলার সময় থেকে এখানে খেলার স্বপ্ন দেখতাম। পরে খেলেছি। আবার খেলার লোভ হচ্ছে রে! বিশ্বকাপ শেষে স্থানীয় ডার্বি ফিরুক এখানেই। কী বল!
—সে তো বটেই। সঙ্গে কলকাতার একটি দ্রষ্টব্য জায়গাও হয়ে উঠুক এই স্টেডিয়াম। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, চিড়িয়াখানার মতো টিকিট কেটেই ভ্রমণার্থীরা দেখতে আসুক যুবভারতী। ঠিক যে ভাবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ন্যু ক্যাম্পে হয়।
রাতের যুবভারতীতে আলোর খেলা।
তবে, ১ লাখ ২০ হাজারের গ্যালারি নিয়ে একটা সময়ে এই স্টেডিয়াম কিন্তু বিশ্বের সব স্টেডিয়ামের সঙ্গে পাল্লা দিত। কিন্তু, এখন তা প্রায় ৬৭ হাজারে নেমে এসেছে। তাতে ক্ষতি নেই হয়তো। সংশয়টা অন্য জায়গায়। দেবজিৎ সেটাই জিজ্ঞেস করলেন দীপেন্দুকে। যে ভাবে একশো কোটিরও বেশি টাকা খরচ করে সাজা হয়েছে যুবভারতীকে, সেটা ধরে রাখা যাবে তো? রক্ষণাবেক্ষণ করে আরও কয়েক দশক তার ভালত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব কি?
দীপেন্দু আস্বস্ত করলেন দেবজিৎকে— ‘‘নবান্ন যারা দেখে, আপাতত এই স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকবে তাদের উপরেই।’’ শুনে হয়তো স্বস্তি পেলেন দেবজিৎ। বাংলার ফুটবল কি স্বস্তি পাবে? যুব বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর থেকেই তার জবাব মিলবে। তার আগে কিছু দিন স্বপ্ন দেখতে দোষ কী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy