ম্যাচের নায়ক ডিকা।
মহমেডান ৬ : রেলওয়ে এফসি ০
দু’নম্বর গোলটার পর রাইফেল চালানোর ভঙ্গিতে সাইড লাইনের পাশে গিয়ে সেলিব্রেশনে মাতলেন দিপান্দা ডিকা। যা দেখে প্রেসবক্সে বসে থাকা তাঁর বান্ধবী জর্জেটও অবাক। বললেন, ‘‘ডিকা তো গোলের পর ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানায়। কেন এমন করল বুঝতে পারলাম না?’’
বারাসত স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে বিধ্বংসী ফর্মে থাকা মহমেডান স্ট্রাইকার কেন তাঁর উচ্ছ্বাসের স্টাইল বদলালেন? ‘গুলি’-ই বা ছুঁড়লেন কার দিকে? ম্যাচের পর প্রশ্ন শুনে গত বার শিলং লাজংয়ের জার্সি গায়ে আই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া ফুটবলার হাসলেন। রাতের আলোয় যা আরও ঝকঝকে দেখাল। ‘‘গোল করলে ও রকম উচ্ছ্বাস দেখানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন এক ক্লাব কর্তা।’’ কিন্তু সেটা যে মুখের কথা, মনের কথা নয়, বোঝা গেল যখন হ্যাটট্রিক-সহ চার গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার সিংহাসনটা নিশ্চিত করে ফেলা ডিকা কার্যত হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন। ‘‘ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডাররা আমাকে আটকাতে পারবে না। ওদের আমি দেখে নিয়েছি। আমি ওদের বিরুদ্ধে গোল করবই, দেখে নেবেন জিতব আমরাই।’’
কিন্তু আপনাদের টিম তো খেতাবের লড়াইতেই নেই, তা হলে মোটিভেশনটা কী হবে শনিবার? ডিকার জবাব, ‘‘মোহনবাগানকে হারাতে পারিনি। ম্যাচে হার-জিত হয়ই। খেতাব না পাই সমর্থকদের কথা ভেবে একটা ডার্বি তো জিততে হবে। সব দিন কিন্তু এক রকম হয় না।’’ লিগে ইতিমধ্যেই সাত ম্যাচে ১০ গোল করেছেন ডিকা। গোলের এই বন্যা দেখে অনেকেই তাঁকে তুলনা শুরু করেছেন ময়দানে খেলে যাওয়া ইউসুফ ইয়াকুবু বা র্যান্টি মার্টিন্সের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: কোরিয়ায় দুরন্ত ফর্মে সিন্ধু, হার প্রণয়ের
রেলকে দুরমুশ করে এ দিন হাফ ডজন গোলে জিতল বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের দল। এ বারের কলকাতা লিগে যা সব থেকে বড় ব্যবধান। ডিকা ছাড়াও গোল পেলেন মননদীপ সিংহ এবং প্রহ্লাদ রায়। তাতেও হাসি নেই সাদা-কালো কোচের মুখে। বলেই দিলেন, ‘‘যত গোলেই জিতি প্রাপ্তি তো শূন্য। খেতাবটা তো জেতা হল না।’’ বিশ্বজিতের মনোভাব পুরো গ্যালারিতেই সংক্রামিত। টিমের এ রকম জয় দেখেও সবাই মনমরা। বিশ্বজিতের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাই শেখ ফৈয়জ বা শঙ্কর রায়দের ট্র্যাজিক নায়ক-ই মনে হল।
ডিকার আগুনে মেজাজ দেখে দুই প্রধানে দু’রকম আবহাওয়া। লাল-হলুদে সতর্কতা। মোহনবাগান স্বস্তি। দু’দিন পরেই খালিদ জামিলের টিমের বিরুদ্ধে নামবেন ডিকা। এ দিন যেভাবে অনায়াস দক্ষতায় সাদা-কালো স্ট্রাইকার একের পর এক গোল করে গেলেন তাতে লাল-হলুদ কোচের রক্তচাপ বাড়তে বাধ্য। আর সবুজ-মেরুনে স্বস্তি অন্য কারণে। কলকাতা লিগের পরই যে পালতোলা নৌকোর সওয়ারি হতে চলেছেন ডিকা। আই লিগে জার্সি বদল করার চুক্তিপত্রে ইতিমধ্যেই সই করে দিয়েছেন ময়দানের নতুন নায়ক।
রেলওয়ে এফসি এ বার একটি ম্যাচও জেতেনি। তাদের অবনমন নিশ্চিত। দলে কোনও বিদেশিও নেই। সেই দলকে বেলাইন করতে মহমেডান সময় নিল মিনিট কুড়ি। ১-০ করে দিলেন ডিকা। ওগবা কালুর তোলা বল মাটিতে পরার আগেই হাফ ভলিতে অসাধারণ একটি গোল করে। আর রেলের ইঞ্জিন দুমড়ে মুচড়ে ফেলতে সাদা-কালো ব্রিগেডকে অপেক্ষা করতে হল মাত্র পঁয়ত্রিশ মিনিট। সেই কালুর পাশ থেকে বল পেয়েই রেল কিপার রানা চক্রবর্তীর মাথার উপর দিয়ে বল তুলে ৩-০ করে দিলেন ডিকা। বিরতির পর হল আরও তিনটে। নিজের চারটি গোলের মধ্যে হাফ ভলিতে করা প্রথমটিকেই সেরা বাছলেন এ দিনের নায়ক। ম্যাচটা এতই এক তরফা হল যে মহমেডান কিপার শঙ্কর রায়কে প্রায় বল-ই ধরতে হল না। তাই তাঁর বদলি নামামোর সাহস দেখালেন
মহমেডান কোচ।
বারাসতে এত দিন মাঠ ভর্তি করে আসতেন সাদা-কালো সমর্থকরা। এ দিন অর্ধেকও ভর্তি হয়নি। খেতাব দৌড়ে ছিটকে যাওয়ার পর সমর্থকরা আসবেনই বা কেন? মহমেডান জার্সিতে ডিকার লিগের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকটা তাই তাঁদের মনে দাগ কাটল না। তবে ম্যাচ জিতে মনে হল দারুণ খুশি শুধু ডিকার বান্ধবী। জানালেন, ম্যাচ জিতলে তাঁকে কোনও না কোনও শপিং মলে বেড়াতে নিয়ে যান ডিকা।
আই লিগের নিলামে অংশ নিচ্ছে বেঙ্গালুরুর ওজোন এফ সি। বেঙ্গালুরুর সেই দলটির স্পটার হিসাবে শহরে এসেছেন স্ট্যানলি রোজারিও। ইস্টবেঙ্গলে কয়েক বছর আগেও কোচিং করিয়ে গিয়েছেন স্ট্যানলি। ম্যাচ শেষে বললেন, ‘‘ডিকাকে না আটকাতে পারলে ইস্টবেঙ্গল কিন্তু সমস্যায় পড়বে।’’ খালিদও নিশ্চয়ই এ দিনের মহমেডানকে দেখার পর অঙ্ক কষতে শুরু করেছেন।
মহমেডান: শঙ্কর রায় (হরপ্রীত সিংহ), অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়, রিচার্ড, হরজিন্দার সিংহ, কামরান ফারুক, শেখ ফৈয়াজ (দেবাশিস প্রধান), শ্যাম শর্মা, কালু ওগবা, প্রহ্লাদ রায়, দিপান্দা ডিকা, মননদীপ সিংহ (দীপেন্দু বিশ্বাস)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy