হর্ষ-বিষাদ: ম্যাচের পরে ইডেনে দুই অধিনায়ক। নিজস্ব চিত্র
ঘটনাটা ২০০২ সালের। আমি তখন বাংলার কোচ। ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে আমাদের ম্যাচ চলছে। দেখলাম, লম্বা চুলের একটা ছেলে ওপেন করতে নেমে খুব মারছেন। আমাদের বোলিং আক্রমণ তখন খুবই ভাল। আমি গিয়ে এক জন বোলারকে স্লোয়ার দিতে বললাম। কিন্তু দেখলাম, ওই স্লোয়ারও বাউন্ডারির বাইরে ফেলে দিলেন ওই ব্যাটসম্যান।
তখন জানতাম না ছেলেটার নাম। পরে শুনলাম। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ঝাড়খণ্ডের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।
বৃহস্পতিবার কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচটা ঘিরে টিকিট নিয়ে যে রকম উন্মাদনা দেখলাম, সেটা আগে কখনও দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না। আর এই উন্মাদনার কারণ কিন্তু ঝাড়খণ্ডের সেই ছেলেটা। হ্যাঁ, সেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনিই।
ইডেনেও ধোনির জন্য গলা ফাটানোর লোক কম ছিল না। ধোনি ব্যাট করতে নামা মাত্রই টিভি-তে দেখলাম, হঠাৎ করে এক জন কেকেআরের জার্সিটা খুলে ফেললেন। ভিতরে সিএসকের হলুদ জার্সি! একটা সময় তো গ্যালারি প্রায় হলুদ হয়ে গিয়েছিল। এ রকম সমর্থন আমি কিন্তু সচিন তেন্ডুলকরের জন্যও দেখিনি। কিন্তু দিনটা ধোনির ছিল না। ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের সামনে কেকেআরকে জিতিয়ে দিলেন এক তরুণ এবং এক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। শুভমান গিল এবং দীনেশ কার্তিক। চেন্নাইয়ের পাঁচ উইকেটে ১৭৭ রান ১৪ বল বাকি থাকতে চার উইকেট হারিয়ে তুলে নিল কলকাতা। ৩৬ বলে ৫৭ করে অপরাজিত থাকলেন গিল। ১৮ বলে অপরাজিত ৪৫ করলেন কার্তিক। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ধোনিকে দেখতে হল, ভারতীয় ক্রিকেটে আরও এক জন ফিনিশার তৈরি হয়ে গিয়েছেন। পরের বছর বিশ্বকাপে ধোনি তো থাকবেনই, সঙ্গে কিন্তু কার্তিকের জায়গাও পাকা বলে দেওয়া যায়।
সুস্থ না হওয়ায় নীতীশ রানা এই ম্যাচে খেলতে পারেননি। ফলে ব্যাটিং অর্ডারে ওপরে উঠে আসেন শুভমান। সেটা যেমন অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারের পক্ষে ভাল হল, তেমন কেকেআরের পক্ষেও। মাথা ঠান্ডা রেখে ম্যাচটাকে জিতিয়ে দিলেন শুভমান। আমি অনেক আগে থেকেই বলে আসছি, এই ছেলেটাকে ব্যাটিং অর্ডারে ওপরে তোলা উচিত। এর পরে আশা করি শুভমানের জায়গায় পাকা হয়ে গেল।
এই আইপিএলে কার্তিকও কিন্তু অবাক করছেন। শ্রীলঙ্কায় ভারতকে জেতানোর পরে ওঁর আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গিয়েছে। কার্তিকের সব চেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হল, ফিল্ডিং দেখে শট খেলেন। অর্থাৎ ফিল্ডিংয়ের ফাঁক খুঁজে বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দেন। যে জন্য কার্তিকের বিরুদ্ধে ফিল্ডিং সাজানো বেশ কঠিন কাজ।
কার্তিকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলে গেলেন শুভমান। ওঁকে দেখলাম, সব ক্রিকেটীয় শট খেলছেন। পাওয়ার হিটিংয়ে রাস্তায় হাঁটেননি। কেকেআর শিবিরকে ধন্যবাদ দেব, বেশ কয়েক জন তরুণ ক্রিকেটারকে সুযোগ দেওয়া জন্য। যাঁদের মধ্যে থেকে এক ভবিষ্যতের তারকাকে পেয়ে গেলাম আমরা। তবে শুভমানের পাশে শিবম মাভির কথাও বলব। এই ছেলেটা ওঁর গতিতে শেন ওয়াটনস, ফ্যাফ ডুপ্লেসিদের সমস্যায় ফেলে দিচ্ছিলেন। তবে চেন্নাইকে বড় রান তোলা থেকে আটকে দিলেন নাইট স্পিনাররা। বিশেষ করে সুনীল নারাইন। চার ওভারে ২০ রান দিয়ে নিলেন দু’উইকেট। নারাইন বনাম ধোনির লড়াইয়ে আবার জিতে গেলেন ক্যারিবিয়ান স্পিনার।
কার্তিকের অধিনায়কত্বও আমার খুব ভাল লেগেছে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বোলারদের খুব দারুণ ব্যবহার করলেন। বিশেষ করে স্পিনারদের। পাওয়ার প্লে-তে তো স্পিনের ব্যবহার আমরা দেখছি। কার্তিক পাশাপাশি ইনিংসের শেষের দিকেও স্পিনার নিয়ে এলেন। চেন্নাই ইনিংসের শেষ তিন ওভার করলেন স্পিনাররা। যার মধ্যে উনিশ নম্বর ওভারে বল করতে এসে নারাইন দিলেন মাত্র চার রান। ধোনি থাকা সত্ত্বেও। নারাইন ম্যাচের সেরা হওয়ায় তাই আমি অবাক নই। তবে কার্তিক আর শুভমানও সমান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেলেন।
চেন্নাই এ বারের আইপিএলে দারুণ খেলছে। লিগ টেবলে আগের দিনও এক নম্বর দল ছিল। কিন্তু ইডেনে ধোনির দলকে খুবই সাধারণ দেখাল। শুধু ম্যাচের প্রথম কয়েকটা ওভার ছাড়া আধিপত্য নিয়েই কিন্তু জিতল কলকাতা। এই জয়ের ফলে প্লে-অফে ওঠার দিকে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন কার্তিকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy