লক্ষ্য: টোকিয়োয় পদক জিততে চান দীপক পুনিয়া। পিটিআই
ভারতীয় কুস্তি মহলে তাঁর আদরের নাম ‘কেটলি পহেলবান’। সেই দীপক পুনিয়ার আক্ষেপ সিনিয়র পর্যায়ে জীবনের প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে সোনা নিয়ে ফেরা হচ্ছে না বলে।
শনিবারেই কাজ়াখস্তানের নূর-সুলতান শহরে কুস্তির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ৮৬ কেজি বিভাগের ফাইনালে উঠেছিলেন ২০ বছরের দীপক। এত কম বয়সে কোনও ভারতীয় কুস্তিগির কোনও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠতে পারেননি। রবিবার সকালে কাজ়াখস্তানে যখন তাঁকে ফোনে ধরা হল, হতাশার সুর এই সেনাকর্মীর গলায়। কারণ গোড়ালির চোটের জন্য ফাইনালে নামতে পারছেন না। দীপক বলেন, ‘‘ফাইনালে ইরানের হাসান ইয়াজ়দানি চারাতির বিরুদ্ধে লড়াই ছিল। ও আগের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং রিয়ো অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী। আমার এক জন আদর্শ কুস্তিগির ও। কিন্তু সেই সুযোগ হারাতে হল গোড়ালির চোটের জন্য।’’ যোগ করেন, ‘‘বাঁ পা ফেলতে পারছি না। গোড়ালিতে অসহ্য যন্ত্রণা। তাই ঝুঁকি নিলাম না। রুপোতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।’’ এ দিন বিকেলে ৬১ কেজি বিভাগে রাহুল আওয়ারে ব্রোঞ্জ পাওয়ায় একটি রুপো ও চারটি ব্রোঞ্জ নিয়ে দেশে ফিরছে ভারতীয় কুস্তিগিররা।
হরিয়ানার ঝজ্জর জেলার ছররা গ্রামের বাসিন্দা দীপক এ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে শনিবার একতরফা হারিয়েছিলেন সুইৎজ়ারল্যান্ডের স্তেফান রিচমুথকে। তার আগেই কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার কার্লোস আর্তুরো মেন্দেসকে হারিয়ে অর্জন করেছিলেন অলিম্পিক্সের যোগ্যতামানও। গত তিন বছর ধরেই ছুটছে দীপকের বিজয়রথ। ২০১৬ সালে বিশ্ব ক্যাডেট মিটে চ্যাম্পিয়ন। গত মাসেই এস্তোনিয়ায় জিতেছেন জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাব। তার পরে এ বার সিনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ফিরছেন রুপো নিয়ে। কিন্তু তাতেও সাফল্য নিয়ে বিন্দুমাত্র উদ্বেলিত নন তিনি। বলে দেন, ‘‘আসল সাফল্য অলিম্পিক্সের পদক আর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সোনা। যা ভারতে একমাত্র পেয়েছেন আমার প্রেরণা সুশীল কুমার। ওই দুই প্রতিযোগিতা থেকে পদক পেলে বলব সফল হয়েছি।’’
ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে গ্রামে কবাডি খেলতেন। কিন্তু ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিক্সে ফ্রি-স্টাইল কুস্তিতে সুশীল কুমার ব্রোঞ্জ পাওয়ার পরেই বদলে যায় তাঁর জীবন! যে বিষয়ে ভারতীয় কুস্তির এই নয়া প্রতিভা বলেন, ‘‘ওই দিনটা কখনও ভুলব না। তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। বাড়ির টিভিতে দেখেছিলাম সুশীল ভাইয়ের অলিম্পিক্স পদকপ্রাপ্তি। আর তার পরে গোটা গ্রামের আনন্দ। সে দিন রাতেই ঠিক করি, আমাকেও কুস্তিগির হতে হবে। দেশের জন্য পদক জিততে হবে। সুশীল ভাইকে দেখেই কুস্তিতে এগিয়েছি।’’
বাবা সুভাষ পুনিয়া দুগ্ধ ব্যবসায়ী। দীপকের প্রিয় পানীয়ও গরুর দুধ। তাঁর ‘কেটলি পহেলবান’ নামের কারণ জানতে চাইলে হেসে জাঠ কুস্তিগীর বলেন, ‘‘গরুর দুধ খেতে ভালবাসি। ছোটবেলায় এক বার গ্রামের সরপঞ্চের দেওয়া চার কেটলি দুধ পাঁচ মিনিটে শেষ করে দিয়েছিলাম। সেই থেকে বন্ধুরা মজা করে ‘কেটলি পহেলবান’ বলে ডাকত। সেই নামটাই রয়ে গিয়েছে।’’
২০১৫ সাল পর্যন্ত গ্রামের আখড়াতেই কুস্তির প্রথম পাঠ দীপকের। তার পরে দিল্লির ছত্রশাল স্টেডিয়ামে গিয়ে যোগাযোগ করেন প্রেরণা সুশীল কুমারের গুরু মহাবলী সতপাল সিংহের সঙ্গে। গুরু সম্পর্কে দীপকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘গুরুজি আর সুশীল ভাই আমার সাফল্যের গতিটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। ২০১৬ সালে সেনায় চাকরি পেয়েছিলাম। সুশীল ভাই তখন আমাকে বলেছিল, মন দিয়ে কুস্তি লড়। একদিন চাকরি তোর পিছনে ছুটবে। সেটাই হয়েছে। গত বছর সেনাবাহিনীতেই যোগ দিয়েছি নায়েক সুবেদার পদে।’’
নতুন গাড়ি কিনেছেন কয়েক মাস আগে। বন্ধ করে দিয়েছেন বাবার বাড়ি বাড়ি দুধ দেওয়াও। বন্ধুদের মতো যখন তখন শপিং মলে, রেস্তোরাঁয় আড্ডা দিতে পারেন না বলে দুঃখ নেই। বলেন, ‘‘আগামী বছর অলিম্পিক্স। সেখানে পদক জিততেই হবে। তার পরে না হয় আড্ডা-খানাপিনা হবে।’’
ফোনে কথা শেষ হওয়ার আগে বলেন, ‘‘অলিম্পিক্সের জন্য রক্ষণ ও আক্রমণ আরও নিখুঁত করতে হবে। এখন দিনে সাড়ে সাত ঘণ্টা অনুশীলন করি। সময় আরও বাড়াতে হবে। সুশীল ভাই শনিবারেই বলে দিয়েছেন, আরও পরিশ্রম চাই। সেটাই পারে বড় সাফল্য এনে দিতে। এর কোনও বিকল্প নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy