Daughter Bismah’s death changed former cricketer Saeed Anwar’s life dgtl
cricket
মেয়ের মৃত্যু পাল্টে দেয় জীবনের পথ, বিধ্বংসী ওপেনার সইদ আনোয়ার হয়ে যান ধর্মপ্রচারক
পড়াশোনা এবং ঘরোয়া ক্রিকেট চলছিল একসঙ্গে। শেষ অবধি পাল্লা ভারী হল ক্রিকেটেরই। আমেরিকা আর গেলেন না। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে জাতীয় দলে ডাক পেলেন সইদ আনোয়ার। ব্যাটিং-এর পাশাপাশি তিনি পার্ট টাইম বাঁহাতি স্পিনারও ছিলেন। পরে তিনি মিডল অর্ডার থেকে ওপেনিংয়ে যান।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:২৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
পারিবারিক বিপর্যয়ে সম্পূর্ণ পাল্টে যায় তাঁর জীবনের গতিপথ। বিদায় জানাতে হয় ক্রিকেটকেও। বিক্ষিপ্ত কেরিয়ার সত্ত্বেও সইদ আনোয়ারকে বলা হয় পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ ওপেনারদের মধ্যে অন্যতম।
০২১৭
আনোয়ারের জন্ম ১৯৬৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, পাকিস্তানের করাচিতে। তাঁর বাবা ক্লাবস্তরের ক্রিকেটার ছিলেন। তবে তিনি ক্রিকেটকে পরে পেশা হিসেবে নেননি। তিনি ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার।
০৩১৭
বাবার কাজের জন্য আনোয়ারের শৈশব কেটেছে বিভিন্ন দেশে। ভাগ্যের সন্ধানে তাঁর বাবা পাকিস্তান থেকে সপরিবারে ইরানের তেহরানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে সৌদি আরব। তখন আনোয়ারকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল করাচিতে, দাদু ঠাকুমার কাছে।
০৪১৭
করাচিতেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি আনোয়ারের। তবে অনেকদিন অবধি তাঁর ক্রিকেটার হওয়ার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। করাচির এনইডি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে কম্পিউটার সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক হন আনোয়ার। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা যাবেন বলে ভেবেছিলেন তিনি।
০৫১৭
পড়াশোনা এবং ঘরোয়া ক্রিকেট চলছিল একসঙ্গে। শেষ অবধি পাল্লা ভারী হল ক্রিকেটেরই। আমেরিকা আর গেলেন না। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে জাতীয় দলে ডাক পেলেন সইদ আনোয়ার। ব্যাটিং-এর পাশাপাশি তিনি পার্ট টাইম বাঁহাতি স্পিনারও ছিলেন। পরে তিনি মিডল অর্ডার থেকে ওপেনিংয়ে যান।
মোট ৫৫ টেস্টে সইদ আনোয়ারের রান ৪০৫২। ৪৫.৫২ গড় নিয়ে সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ১৮৮। ২৪৭টি ওয়ান ডে ম্যাচে মোট সংগ্রহ ৮৮২৪ রান। ৩৯.২১ গড় সমেত সর্বোচ্চ রান ১৯৪। উইকেট পেয়েছেন ৬টি।
০৮১৭
অসুস্থতার কারণে বারবার তাঁর কেরিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শারীরিক অসুস্থতার জেরে তিনি ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান দলে থাকতে পারেননি। ১৯৯০-এর ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৩-এর ফেব্রুয়ারি অবধি তিনি মাত্র পাঁচটি ওয়ান ডে খেলেছিলেন। তার মধ্যে একবারও দুই অঙ্কের রানে পৌঁছতে পারেননি।
০৯১৭
১৯৯৬ সালে বিয়ে করেন সইদ আনোয়ার। তাঁর স্ত্রী লুবনা একজন চিকিৎসক। সে বছরও অসুস্থতায় ব্যাহত হয় তাঁর পারফরম্যান্স। আনোয়ারের চিকিৎসা করেছিলেন তাঁর স্ত্রী। কিন্তু তাঁর ঠিক কী হয়েছিল, জানা যায় না। সুস্থ হয়ে অবশ্য দুরন্ত ফর্মে বাইশ গজে ফিরে আসেন সইদ আনোয়ার।
১০১৭
পেপসি ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপে ১৯৯৭ সালের ২১ মে ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৪ রান করেন সইদ আনোয়ার। প্রচণ্ড গরমে তাঁর পায়ে ক্র্যাম্প ধরে গিয়েছিল। তিনি রানার নিয়ে ইনিংস শেষ করেন। ওই ম্যাচে পাকিস্তানের আর কোনও ব্যাটসম্যান সে ভাবে রান করতে পারেননি। পাকিস্তানের মোট রান ছিল ৩২৭। জবাবে, রাহুল দ্রাবিড়ের লড়াকু ১০৭ রান সত্ত্বেও ওই ম্যাচে ভারত ৩৫ রানে পরাজিত হয়।
১১১৭
১৩ বছর ধরে সইদ আনোয়ারের ওয়ান ডে তে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড অক্ষত ছিল। জিম্বাবোয়ের চার্লস কভেন্ট্রি-ও এই স্কোর করেন। তাঁদের যুগ্ম রেকর্ড ভেঙে যায় সচিন তেন্ডুকরের ব্যাটে। ২০১০-এ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০০ রানে অপরাজিত থাকেন সচিন।
১২১৭
ভারত-বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সইদ আনোয়ারের পারফরম্যান্স বরাবর অসাধারণ। সব ধরনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাঁর গড় ৬৪.৩৩, ভারতের বিরুদ্ধে ৪৪.৯২ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৭.৯৫। তাঁর ৩১টি আন্তর্জাতিক শতরানের মধ্যে ১৫টি এসেছে এই তিন দেশের বিরুদ্ধে খেলে। ১৯৯৭ সালে তিনি উইজডেন পত্রিকার বিচারে বর্ষসেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন।
১৩১৭
২০০১ সালে মুলতানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়। এই টেস্টের শেষ দিনে এক পারিবারিক বিপর্যয়ে তছনছ হয়ে যায় সইদ আনোয়ারের জীবন। দীর্ঘ অসুখের পরে মারা যায় তাঁর তিন বছরের শিশুকন্যা, বিসমাহ। এরপর থেকে সইদ আনোয়ারের কাছে জীবনের অর্থই পাল্টে যায়।
১৪১৭
ক্রিকেট ছেড়ে সইদ আনোয়ার মন দেন ধর্মপ্রচারে। তাঁর একমাত্র সঙ্গী হয় ধর্মপুস্তক। সন্তানশোক ভুলতে ধর্মের বাণীতেই সান্ত্বনার আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি।
১৫১৭
২০০৩ সালে আবার ক্রিকেটে ফিরেছিলেন সইদ আনোয়ার। খেলেছিলেন বিশ্বকাপ। তাঁর জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে নিজের বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে সইদ আনোয়ারের স্কোর ছিল ৪০ রান। তার আগের ম্যাচ ছিল ভারতের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে পাকিস্তান ৬ উইকেটে হারলেও আনোয়ার শতরান করেছিলেন। সেই রান তিনি উৎসর্গ করেছিলেন বিসমাহ-র স্মৃতিতে।
১৬১৭
১৯৯৬, ১৯৯৯ এবং ২০০৩। তিনটি বিশ্বকাপেই সইদ আনোয়ারের দু্র্ধর্ষ পারফরম্যান্স ছিল। বিশ্বকাপের ২১টি ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ছিল ৯১৫ রান। গড় ৫৩.৮২।
১৭১৭
সাতটি টেস্ট এবং এগারোটি ওয়ান ডে-তে অধিনায়কত্বও করেছেন সইদ আনোয়ার। তবে অধিনায়ক হিসেবে তিনি কোনওদিন সে ভাবে সাফল্য পাননি। এখনও অবশ্য সাফল্য-ব্যর্থতা-পরিসংখ্যান থেকে বহু দূরে ধর্মপ্রচারক হিসেবে দিন কাটাচ্ছেন অতীতের এই বিধ্বংসী ওপেনার।