অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিজয়োৎসব। শুক্রবার লখনউয়ে। ছবি: পিটিআই।
দাদাদের প্রেরণা হয়ে থাকতে পারেন ভাইরা! অন্তত ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬-র পর ভারতীয় হকির প্রেক্ষিতে। ভাইদের একটা শিক্ষাদান যদি দাদাদের জন্য হয়, ঘরের মাঠে গ্যালারির প্রবল প্রত্যাশা সামলে কী ভাবে বড় ম্যাচ বার করতে হয়। তা হলে আরও একটা শিক্ষাদান হল, কী ভাবে ভয়ঙ্কর স্নায়ুর লড়াইয়ে জয়ী হতে হয়।
সর্দার সিংহেরা ২০১৪ এবং ২০১৬, পরপর দু’টো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথমটা ভুবনেশ্বরে চিরশত্রু পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার সুযোগ। দু’বার এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ঘরের মাঠে সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপ সামলাতে না পেরে ৩-৪ হেরে যান সর্দাররা। পরেরটা মাস দুই আগে লন্ডনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে প্রথম বার সেরা হওয়ার সুযোগ। ফাইনালে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর অস্ট্রেলিয়াকে নির্ধারিত সময় গোলশূন্য আটকে রেখেও টাইব্রেকারে হৃদয়বিদারক পরাজয়।
সেই অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় যুব দলকেই শুক্রবার লখনউয়ে জুনিয়র বিশ্বকাপ হকির সেমিফাইনাল ম্যাচের গোড়ায় পিছিয়ে পড়েও দারুণ ভাবে লড়াইয়ে ফিরে শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে হারিয়ে দিলেন ভারতীয় তরুণরা। স্নায়ু-যুদ্ধে একটুও টাল না খেয়ে। শ্যুটআউটের ৪-২ স্কোরলাইন ধরে সব মিলিয়ে ৬-৪ গোলে জিতল ভারত। নির্ধারিত সময়ে ২-২ থাকা ম্যাচ ষাট মিনিটের ভেতরই জিতে যেতে পারতেন মনদীপরা। কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার মাত্র তিন মিনিট আগে ভারতীয় ডিফেন্সের সহজ ভুলে সমতা ফেরান অস্ট্রেলিয়ার লাচলান শার্প।
তবে টাইব্রেকারে ভারতীয় গোলকিপার বিকাশ দাহিয়া দু’-দু’টো পেনাল্টি স্ট্রোক আটকে দিনের আসল নায়ক হয়ে ওঠেন। উল্টো দিকে ভারতীয়রা টাইব্রেকারে দেখান নিখুঁত স্ট্রোক। হরজিৎ, হরমনপ্রীত, সুমিত এবং মনপ্রীত সিংহ (জুনিয়র) পরপর চারটে গোল করায় ভারতের শেষ স্ট্রোক নেওয়ার দরকারই পড়েনি।
মূল ম্যাচেও প্রথম পেনাল্টি কর্নার থেকে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম কোয়ার্টারে এগিয়ে যাওয়া আর শেষের দিকে সমতা ফেরানো বাদ দিলে বাকি খেলায় ছিল ভারতেরই দাপট। হাফটাইমে এক গোলে পিছিয়ে থাকলেও তার পর তৃতীয় কোয়ার্টারের শেষের দিকে আর চতুর্থ কোয়ার্টারের গোড়ার দিকে পরপর দু’টো চমকপ্রদ ফিল্ড গোল করে ভারত সমতা ফেরানোর পাশাপাশি প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ ‘লিড’ও নিয়ে নেয়। প্রথমটা কঠিন কোণ থেকে রিভার্স ফ্লিকে করেন গুরজান্ত সিংহ। পাঁচ মিনিট বাদেই ভারতকে ২-১ এগিয়ে দিয়েছিলেন টুর্নামেন্টে ভারতের হায়েস্ট স্কোরার মনপ্রীত সিংহ।
কিন্তু যখন মনে হচ্ছিল, ফাইনালে ওঠা হরেন্দ্র সিংহের তরুণ ছেলেদের স্রেফ সময়ের অপেক্ষা, তখনই অস্ট্রেলিয়া ভারতীয় ডিফেন্সের মনঃসংযোগের অভাবে গোল শোধ করে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়ে যায়। একইসঙ্গে ভারতীয় হকিপ্রেমীদের ফেলে দেয় টেনশনে। যদিও সেই টেনশন বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি দাহিয়া, হরমনপ্রীতরা। রবিবার ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম। যারা অপর সেমিফাইনাল গোলশূন্য ড্র থাকার পর টাইব্রেকারে ৪-৩ হারায় গত দু’বারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে।
যদিও দীর্ঘ ১৫ বছর বাদে জুনিয়র বিশ্বকাপ হকির ফাইনালে ওঠায় ভারত ঘরের মাঠে এখন আরওই বেশি ফেভারিট! এই অবস্থায় হকি ইন্ডিয়া-র চিফ কোচ রোল্যান্ট অল্টমান্স হয়তো যুব দলকে তাতাতেই এ দিন বলেছেন, ‘‘এর পর আমাদের তরুণ ছেলেরাই ঠিক করুক রবিবার ওদের গলার পদকটা কী হবে? সোনা, না রুপো!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy