ফণীর হাত থেকে বেঁচে রবিবারই হায়দরাবাদ ফিরেছেন। কিন্তু দেশের দ্রুততম মহিলা অ্যাথলিট দ্যুতি চন্দের আতঙ্ক যেন কাটতেই চাইছে না।
১০০ মিটারে দেশের সেরা মহিলা অ্যাথলিট বলছেন, ‘‘১৯৯৯ সালে সুপার সাইক্লোনের সময় বয়স চারও পেরোয়নি। তাই সেই স্মৃতি মনে নেই। কিন্তু প্রাকৃতিক ধ্বংসলীলা কত ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা নিজের চোখে দেখলাম। এক সময় মনে হচ্ছিল বেঁচে ফিরব না!’’
শুক্রবার সকালে ওড়িশায় ঢুকেছিল সাইক্লোন ফণী। ভয়াবহ সেই ঝড়ের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে প্রথমে কেঁদে ফেলেন দ্যুতি। টিভিতে গোটা দেশ ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছে, ঝড় চলার সময় ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজির (কেআইআইটি) হস্টেল ও অতিথি নিবাসের ভয়াবহ পরিস্থিতি। ঝড় চলার সময় সেখানে দরজা, জানালা খুলে বেরিয়ে গিয়েছিল। উড়ে গিয়েছিল অস্থায়ী ছাদও। ঝড়ের সময় সেই কেআইআইটি অতিথি নিবাসেই ছিলেন দ্যুতি চন্দ। চোখের সামনে দেখেছেন ফণীর তাণ্ডব।
হায়দরাবাদ থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে রবিবার দ্যুতি বলছিলেন, ‘‘জাজপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে মঙ্গলবার রাতে ভুবনেশ্বরে ফিরেছিলাম। মা-বাবাকেও নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গ্রামের বাড়ি ছেড়ে ওঁরা আসতে চাননি। ওড়িশার ক্রীড়া দফতর থেকে ফোন করে বলেছিল কেআইআইটি-র অতিথি নিবাসে থাকতে। বৃহস্পতিবার সকালেও কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে গিয়েছিলাম। তখনও ভাবিনি এত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হবে।’’
ঝড়ের সময় কী অবস্থা হয়েছিল? দ্যুতি বলে গেলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল। যত সময় এগোচ্ছিল, ততই হাওয়ার দাপট বাড়ছিল। শুক্রবার সকালে ঘরেই ছিলাম। সকাল দশটা নাগাদ সাইক্লোন আছড়ে পড়ে ভুবনেশ্বরে। শুরু হয় প্রকৃতির ধ্বংসলীলা। জানালা দিয়ে দেখছিলাম বাইরের প্রকৃতি ধোঁয়াটে হয়ে গিয়েছে। প্রবল বেগে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আশপাশের গাছগুলো যেন নুয়ে পড়েছে। সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি।’’
দ্যুতি বলে চলেন, ‘‘আতঙ্কে কেউ কেউ চিৎকার করে কাঁদছিলেন। কেউ ঈশ্বরের নাম করছিলেন। ফোনের লাইন কাজ করছে না। বিদ্যুৎ নেই। হাওয়ার বেগে দরজা খুলতে পারছিলাম না। হঠাৎ একটা চিৎকার শুনলাম। কোনও ঘরের দরজা খুলে হাওয়ায় উড়ে গিয়েছে। আমার ঘরের জানালায় বাতাস এমন ভাবে ধাক্কা মারছিল যেন এখনই তা খুলে বেরিয়ে যাবে। খুব ভয় লাগছিল তখন। বেশি করে চিন্তা হচ্ছিল ১০০ কিলোমিটার দূরে গ্রামের বাড়ির জন্য।’’
খানিক থেমে দ্যুতি এ বার বললেন, ‘‘দেড় ঘণ্টা পরে সাহস করে দরজা ফাঁক করে বাইরে তাকিয়ে দেখেছি, ঝনঝন শব্দ করে পাশের বিল্ডিংয়ের কাচের জানলা উপড়ে নিয়ে গেল ঝড়। দেখলাম, মোবাইল ফোনের টাওয়ার, গাছ ভেঙে পড়ছে। এমনকি গাছ থেকে নারকেলও উপড়ে নিয়ে গিয়েছিল বিধ্বংসী ঝড়। পরে জেনেছি, আমাদের অতিথি নিবাসের ফাইবারের অস্থায়ী ছাদও উড়ে গিয়েছিল।’’
দ্যুতি আরও বলেন, ‘‘শুক্রবার রাতে ঘরে বিদ্যুৎ না থাকায় আলো, পাখা বা বাতানুকূল যন্ত্র চলেনি। টাওয়ার ভেঙে পড়ায় মোবাইল কাজ করছে না। অসহ্য গরম। দুর্বিসহ অবস্থা। শনিবার সকালে ভাবছিলাম, গাড়ি চালিয়ে গ্রামের বাড়ি যাব। কিন্তু পুলিশ যেতে দেয়নি। পরে পুলিশের সাহায্য নিয়েই জাজপুর থানায় ওয়্যারলেসে যোগাযোগ করেছিলাম। বিকেলের দিকে ওঁরাই কথা বলিয়ে দিলেন মায়ের সঙ্গে। আমাদের গ্রামের বাড়ির পাঁচিল ভেঙে গেলেও বড় কোনও ক্ষতি হয়নি। নিরাপদ জায়গায় থাকায় বাবা-মা ও দিদি বেঁচে গিয়েছেন।’’
আগামী মাসেই বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় মিট। সেখানে ১০০ ও ২০০ মিটারে নামবেন দ্যুতি। সে কথা জানিয়ে ভারতের এই প্রথম সারির অ্যাথলিট বললেন, ‘‘আমার কোচ এন রমেশ শনিবার দুপুরেই ফোন করে বললেন, বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় মিটের প্রস্তুতির জন্য হায়দরাবাদে চলে আসতে। খুব কষ্ট করে উড়ানের টিকিট পেলাম। কিন্তু বিমানবন্দরের হাল দেখে কান্না পেয়ে গিয়েছিল। মেঝেতে ছড়িয়ে রয়েছে ভাঙা কাচের টুকরো।’’
কথা শেষ করেও আতঙ্ক দূর হয় না দ্যুতির। বললেন, ‘‘দোহায় ১০০ মিটারে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়ায় ২৭ এপ্রিল কলকাতায় ঝটিকা সফরে গিয়ে কালীঘাটে পুজো দিয়েছিলাম। মাথার উপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ থাকায় বোধহয় বেঁচে গেলাম এ যাত্রায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy