(বাঁদিকে) রোহিত শর্মা এবং যুজবেন্দ্র চহাল। ছবি: টুইটার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ় সফরের দলে ছিলেন। অথচ জায়গা হল না এশিয়া কাপের ১৭ জনের দলে। স্বভাবতই হতাশ যুজবেন্দ্র চহাল। দলে তাঁর জায়গা না পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চুপ করে থাকেননি লেগ স্পিনার চহালও। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি।
অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং নির্বাচক কমিটির প্রধান অজিত আগরকরকে শুধু চহালই অস্বস্তিতে ফেললেন, তা নয়। সোমবার দুপুর থেকেই অস্বস্তিতে পড়তে হয় এই দু’জনকে। তার জন্য কখনও উত্তেজিত হয়েছেন, কখনও বিরক্তি ধরা পড়েছে, আবার কখনও হেসে সামলেছেন দু’জনে। সোমবার এশিয়া কাপের দল নির্বাচন করে অজিত আগরকরের নেতৃত্বাধীন কমিটি। দল ঘোষণা করার পরে দীর্ঘ সাংবাদিক সম্মেলন করেন আগরকর ও রোহিত। সেখানে উঠে আসে ভারতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান দর্শন, লক্ষ্য, পরিকল্পনা। শুধু এশিয়া কাপই নয়, আসন্ন বিশ্বকাপ নিয়েও কিছু ইঙ্গিত দেন রোহিত। যেমন, জানিয়ে দেন, বিশ্বকাপে তাঁকে এবং বিরাট কোহলিকে বল করতেও দেখা যেতে পারে।
কী বললেন চহাল
এশিয়া কাপের দল ঘোষণার পর একটি টুইট করেছেন চহাল। তাতে রয়েছে একটি মেঘে ঢাকা সূর্যের ইমোজি এবং একটি সম্পূর্ণ সূর্যের ইমোজি। মাঝে রয়েছে একটি তির। যার মাধ্যমে চহাল বোঝাতে চেয়েছেন, অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরবেনই। অর্থাৎ, এশিয়া কাপের দলে জায়গা না হলেও আগামী দিনে আবার ভারতীয় দলে ফেরার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী তিনি। চহালের টুইটটি আপাতত ভাবে বিতর্কিত না হলেও, অনেকে একটি ইঙ্গিত খুঁজে পেয়েছেন। ২০১৮ সালে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার পর রোহিত ঠিক একই রকম টুইট করেছিলেন। ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশ মজা করে বলছেন, অধিনায়কের পুরনো টুইট নকল করেছেন তিনি। আবার কেউ কেউ বলছেন, এশিয়া কাপের ভারতীয় দলে সুযোগ না পাওয়ার পর অধিনায়কের ভাষাতেই রোহিতকে জবাব দিয়েছেন হরিয়ানার লেগ স্পিনার।
চহাল ছাঁটাইয়ে রোহিতের যুক্তি
চহালকে না নেওয়া প্রসঙ্গে যুক্তি দিয়েছেন রোহিত। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, এই দল এশিয়া কাপের জন্য। বিশ্বকাপের দরজা সকলের জন্য খোলা। কিন্তু প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর এবং রোহিতের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৭ জনের দলেও রাখা যায়নি দ্বিতীয় বিশেষজ্ঞ স্পিনার। দলের ব্যাটিং গভীরতায় নজর দিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়েছে। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জোরে বোলিংয়ের উপরেও। তাই বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলে চহালের সুযোগ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছেই। এশিয়া কাপের ১৭ জনের দলে জায়গা না পাওয়া ক্রিকেটার কি বিশ্বকাপের ১৫ জনের দলে সুযোগ পাবেন?
বিশ্বকাপের দরজা খোলা সবার জন্য
রোহিতের কথায় এশিয়া কাপের দলে কেউ নেই মানে সে বিশ্বকাপের দলেও থাকবে না, এমন নয়। কারণ ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্বকাপের দলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করার সুযোগ থাকবে। রোহিত বলেন, ‘‘কারও জন্যই বিশ্বকাপের দরজা বন্ধ হয়ে যায়নি। যে কোনও সময় যে কেউ দলে ঢুকতে পারে। চহাল সম্প্রতি যথেষ্ট সাদা বলের ক্রিকেট খেলেছে। আমাদের যদি মনে হয় ওকে বিশ্বকাপে প্রয়োজন, তা হলেই ডাকা হবে। একই কথা প্রযোজ্য অশ্বিনের ক্ষেত্রেও। এই মুহূর্তে সবার বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ রয়েছে।’’
ডানহাতি স্পিনার নেই ১৭ জনের দলে
নির্বাচিত ১৭ জনের দলে কোনও ডানহাতি স্পিনার নেই। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সমস্যা হবে না? আগরকর বলেছেন, ‘‘অক্ষর পটেল খুব ভাল পারফরম্যান্স করছে। কুলদীপও ভাল ফর্মে রয়েছে। দলে দু’জন রিস্ট স্পিনার রাখা কঠিন ছিল। তাই শুধু কুলদীপকেই রাখা হয়েছে।’’ অক্ষরকে নিয়ে আশাবাদী অধিনায়কও। রোহিতের যুক্তি, ‘‘আট বা নয় নম্বরে অক্ষর খুব ভাল ব্যাট করছে। মরসুমের শুরু থেকেই সাদা বলের ক্রিকেটে ভাল রান করছে। ও থাকা মানে দলে এক জন বেশি বাঁহাতি ব্যাটার থাকবে। দরকারে স্পিনারদের সামলানোর জন্য অক্ষরকে আমরা একটু উপরের দিকেও পাঠাতে পারি।’’
বিশ্বকাপে নতুন ভূমিকায় রোহিত, কোহলি
সোমবার একটি বড় ইঙ্গিত দিয়েছেন রোহিত। ডানহাতি স্পিনার না থাকা নিয়ে তাঁর ছোট্ট বক্তব্য, ‘‘আশা করছি রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি বিশ্বকাপের ম্যাচে কয়েক ওভার করে হাত ঘোরাতে পারবে।’’ অর্থাৎ, বিশ্বকাপের আসরে বাড়তি দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবেন দলের দুই সিনিয়র সদস্য।
দলে কেন পুরো ফিট না হওয়া রাহুল
১৭ জনের মধ্যে নাম রয়েছে লোকেশ রাহুলের। যিনি এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ নন। কেন এমন এক জন ক্রিকেটারকে রাখা হল এশিয়া কাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায়? আগরকর বলেছেন, ‘‘রাহুলের ফিটনেস নিয়ে একটু সমস্যা রয়েছে। আশা করছি প্রথম ম্যাচের আগেই সম্পূর্ণ ফিট হয়ে যাবে। হতে পারে প্রথম দু’একটা ম্যাচ খেলতে পারবে না। ও আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। তাই ওকে দলে রাখা হয়েছে। সতর্কতা হিসাবে দলের সঙ্গে সঞ্জুকে পাঠানো হচ্ছে।’’
ব্যাটিং অর্ডারের চার নম্বরে কে
রাহুলের মতো চোট সারিয়ে দীর্ঘ দিন পর দলে ফিরেছেন শ্রেয়স আয়ার। চোট পাওয়ার আগে ব্যাটিং অর্ডারের চার নম্বরে ভরসা হয়ে উঠছিলেন শ্রেয়স। এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপে চার নম্বর জায়গা নিয়ে কি তা হলে উদ্বেগ কমল? অধিনায়ক রোহিত এ ভাবে ভাবছেন না। কিছুটা বিরক্ত হয়েছেন প্রশ্ন শুনে। রোহিত চান দলের সবাই মিলে জিততে। কোনও এক ক্রিকেটারের উপর বাড়তি চাপ দিতে নারাজ তিনি। তাঁর সোজাসাপ্টা জবাব, ‘‘আমি চাই দলগত ক্রিকেট খেলে জিততে। হতে পারে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কোনও ব্যাটারকে খেলতে হবে। চোটের জন্য আমাদের সমস্যা হয়েছে। তবে এশিয়া কাপে আমাদের হাতে বিকল্প আছে। সবাইকে সুযোগ দেওয়া হবে। আমি চাই তারা ভাল খেলে চার নম্বরে নিজেদের জায়গা পাকা করুক।’’
ব্যাটিংয়ে কারও জায়গা নির্দিষ্ট নয়
ভারতীয় দলের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে বার বার পরীক্ষা করেছেন রোহিতেরা। এই পরীক্ষা নিয়ে অনেক সময় সমালোচনাও হয়েছে ভারতীয় ম্যানেজমেন্টের। তবে রোহিতের মতে, কোনও সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নেওয়া হয়নি। সবটাই পরিকল্পনার ফসল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দলে এমন খেলোয়াড় দরকার নেই যে শুধু এক জায়গাতেই ব্যাট করতে পারে। আমরা এমন ব্যাটার চাই যে পরিস্থিতি অনুযায়ী যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতে পারে। কারণ, এটা ক্লাব ক্রিকেট নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। তাই সবাইকে যে কোনও জায়গায় ব্যাট করার জন্য তৈরি থাকতে হবে। আমরা চাই না, কোনও ব্যাটার একটা জায়গাতেই নিজেকে আটকে রাখুক। কারও কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই।’’
তিনি আরও বলেছেন, ‘‘সকালবেলা কাউকে দুম করে বলা হয় না যে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে বা নীচে নামতে হবে। হঠাৎ করে বুমরাকে বলব না ওপেন করতে বা শুভমনকে বলব না সাত নম্বরে নামতে। আমরা অতটাও পাগল নই। আগে থেকেই ঠিক থাকে। গত কয়েক বছরে আমাদের ব্যাটিং অর্ডার দেখলে বোঝা যাবে ওপেনার বা তিন নম্বরে যারা খেলে, ধারাবাহিক ভাবে তারাই খেলছে। পাঁচ, ছয় বা সাত নম্বরের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। খালি চার নম্বরে একটু সমস্যা হয়েছে। সেটা আমাদের ঠিক করতে হবে।’’
সহ-অধিনায়ক হার্দিকই
জল্পনা ছিল সহ-অধিনায়ক কে হবেন তা নিয়ে। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পর হার্দিক পাণ্ড্যর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে আসেন যশপ্রীত বুমরা। শোনা যাচ্ছিল, এক দিনের দলের সহ-অধিনায়ক করা হতে পারে বুমরাকে। বিসিসিআইয়ের এক কর্তা বলেছিলেন, ‘‘নেতৃত্বের ক্ষেত্রে হার্দিকের থেকে সিনিয়র বুমরা। ২০২২ সালে টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে বুমরা। হার্দিকের আগে ওই ছিল এক দিনের দলের সহ-অধিনায়ক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে অনবদ্য নেতৃত্ব দিয়েছে প্রথম ম্যাচেই। তাই এশিয়া কাপ এবং এক দিনের বিশ্বকাপে হার্দিকের পরিবর্তে বুমরাকে সহ-অধিনায়ক করা হলে অবাক হব না। বুমরাকে দেখে নেওয়ার জন্যই ওকে আয়ারল্যান্ড সিরিজ়ের অধিনায়ক করা হয়েছিল।’’ যদিও শেষ পর্যন্ত সহ-অধিনায়ক নিয়ে পরীক্ষার পথে হাঁটেননি রোহিত, আগরকরেরা।
ভারতের ঘোষিত দল
দেশের মাটিতে এক দিনের বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে এশিয়া কাপের জন্য ১৭ জনের দল ঘোষণা করা হয়েছে। শ্রেয়স এবং রাহুলকে ফেরানোর পাশাপাশি নতুন মুখ হিসাবে নেওয়া হয়েছে তিলক বর্মাকে। রিজার্ভ ক্রিকেটার হিসাবে সঞ্জু স্যামসনকে রাখা হয়েছে। পাঁচ নির্বাচক ছাড়াও নির্বাচনী বৈঠকে ছিলেন কোচ রাহুল দ্রাবিড় ও অধিনায়ক রোহিত।
ভারতের ১৭ জনের দল: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, শুভমন গিল, লোকেশ রাহুল (উইকেটরক্ষক), শ্রেয়স আয়ার, হার্দিক পাণ্ড্য (সহ-অধিনায়ক), রবীন্দ্র জাডেজা, যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি, মহম্মদ সিরাজ, কুলদীপ যাদব, ঈশান কিশন (উইকেটরক্ষক), অক্ষর পটেল, শার্দূল ঠাকুর, সূর্যকুমার যাদব, তিলক বর্মা, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, সঞ্জু স্যামসন (রিজার্ভ)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy