বিশ্বকাপ চলাকালীনই ক্যানসারের উপসর্গ দেখা গিয়েছিস যুবরাজের শরীরে ফাইল চিত্র।
সালটা ২০১১, এপ্রিল মাস। ভারতের মাটিতে এক দিনের বিশ্বকাপে একের পর এক ম্যাচে দলকে জেতাতে বড় ভূমিকা নিচ্ছেন ভারতীয় অলরাউন্ডার যুবরাজ সিংহ। কিন্তু খেলার মাঝে মধ্যেই দেখা যাচ্ছে তিনি কাশছেন। দৌড়তে গিয়ে হাঁফ ধরছে। সেই নিয়েই টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন। বিশ্বকাপ জেতার কয়েক দিন পরেই ভারতীয় সমর্থকদের জন্য খারাপ খবরটা আসে। ক্যানসারে আক্রান্ত তাঁদের নায়ক যুবরাজ। তবে কি ক্রিকেট কেরিয়ার শেষ? সুস্থ হয়ে উঠবেন তো? এমন প্রশ্নই উঠছিল তাঁদের মনে। শুধু ক্যানসারকে হারিয়ে ওঠা নয়, ফিরে এসে ফের ব্যাট হাতে ক্রিকেটের ২২ গজ শাসন করেছিলেন তিনি। রবিবার, সেই যুবরাজের ৪০ তম জন্মদিন।
এক জন ক্যানসার চিকিৎসক হিসেবে বলতে পারি, যুবরাজের যে ক্যানসার হয়েছিল তা বিরল নয়, বরং ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সি পুরুষদের অনেকের মধ্যেই এই ক্যানসার দেখা যায়। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলা হয় ‘মিডিয়াস্টিনাল সেমিনোমা ক্যানসার’। সাধারণত বুকের একেবারে মাঝখানে (মিডিয়াস্টিনাল) দু’টি ফুসফুসের মাঝে এটি হয়ে থাকে। তবে মিডিয়াস্টিনালে টিউমার হলেই তা ক্যানসার নয়। টিউমার যদি নন-ম্যালিগন্যান্ট হয় তা হলে তা ক্যানসার নয়। কিন্তু ম্যালিগন্যান্ট হলে তা ক্যানসার।
যুবরাজের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হয়েছিল। সেমিনোমা হল ‘জার্ম সেল’ টিউমার। এই জার্ম সেল সাধারণত দেখা যায় পুরুযদের জননেন্দ্রিয়ে। কিন্তু কখনও কখনও সেই কোষের কিছু অংশ মিডিয়াস্টিনালে দেখা যায়। জননেন্দ্রিয়ের বাইরে এই ধরনের জার্ম সেল দেখা গেলে তাকে আমরা বলি ‘এক্সট্রাগোনাডাল’। সাধারণত ভ্রুণ অবস্থা থেকে এই কোষগুলি তৈরি হয়।
ক্যানসারের চিকিৎসা দু’রকমের। ‘রেডিয়েশন’ এবং ‘কেমোথেরাপি’। কখনও যে কোনও একটি মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। আবার কখনও রোগীকে দুটোই দিতে হয়। যুবরাজের কেমোথেরাপি হয়েছিল। তৃতীয় কেমো-র পরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয় তাঁকে। তবে প্রথমে তিনি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করান। পরে আধুনিক অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসায় তাঁর ক্যানসার সারে।
এক জন চিকিৎসক হিসেবে বলছি, যুবরাজের যে ক্যানসার হয়েছিল তা ধরা পড়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা হলে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে তা সেরে যায়। আমাদের রাজ্যেও এই ধরনের চিকিৎসার সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে। নীলরতন সরকার, আরজি কর, মেডিক্যাল কলেজের মতো হাসপাতালে এই ক্যানসারে আক্রান্ত অনেক রোগী আসেন। তাঁদের বেশির ভাগকেই চিকিৎসার পরে সারিয়ে তোলা হয়। তাঁদের মধ্যে অনেকেই হয়তো আর্থিক ভাবে সচ্ছ্বল নন। তবে তাঁরাও চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। এই ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময় যোগ্য।
অনেকেই হয়তো ভাবেন যুবরাজ ক্রিকেটার হওয়ায় অনেক তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে আমি তো এরকম অনেককে দেখেছি যাঁর ওজন কম, পুষ্টির অভাব রয়েছে, তার পরেও তো তাঁরা সুস্থ হয়ে ওঠেন। হ্যাঁ, ক্রীড়াবিদরা স্বাস্থ্যের প্রতি বেশি সচেতন হন। তাঁদের শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মেদ নেই। শারীরিক ক্ষমতাও সাধারণ মানুষের থেকে বেশি থাকে। তার জন্য হয়তো কেমোথেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে অনেক সহজে লড়াই করতে পেরেছেন যুবরাজ। অন্যদের ক্ষেত্রে তাতে একটু সমস্যা হয়। তবে ক্যানসার সারিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য মনের জোর খুব প্রয়োজন। সেখানে যুবরাজ যে ভাবে ফের খেলার মাঠে ফিরেছেন তার জন্য তাঁকে কুর্নিশ জানাতেই হবে।
একটাই কথা বলার, যদি কেউ দেখেন বেশ কিছু দেন ধরে কাশি, শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছে, তা হলে চিকিৎসকের কাছে যান। বুকের এক্স-রে করলেই ধরা পড়বে মিডিয়াস্টিনালে কোনও সমস্যা হয়েছে কি না। যদি ক্যানসার হয় তা হলেও ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। ঠিক মতো চিকিৎসা হলেই আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
লেখক পেশায় ক্যানসার চিকিৎসক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy