টিকিটের দাবিতে শুক্রবার ইডেনের সামনে ক্রিকেটপ্রেমীদের বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই।
আগেই কলকাতায় চলে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরে চলে এলেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরাও। তাঁরা শহরে পৌঁছনোর পর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে ভিজল শহর। ৫ নভেম্বর ইডেন গার্ডেন্সে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ সুষ্ঠু ভাবে হওয়া নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে তৈরি হল আশঙ্কা। তবু শহরের ক্রিকেট উত্তাপ কমার লক্ষ্মণ নেই। বরং টিকিটের কালোবাজারির অভিযোগ, চাহিদা-যোগানের বিস্তর ফারাক আর পুলিশি তদন্ত মিলিয়ে সরগরম থাকল কলকাতা ময়দান।
ক্রিকেটপ্রেমীদের অভিযোগ
কলকাতায় ম্যাচের টিকিট নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই বিক্ষোভ চলছে। ক্রিকেটপ্রেমীদের অভিযোগ, অনলাইনে যে সংস্থা বিশ্বকাপের ম্যাচগুলির টিকিট বিক্রি করছে তাদের পাশাপাশি, সিএবি এবং বিসিসিআই কর্তারা টিকিট সরিয়ে দিয়েছেন। সেই টিকিট কালোবাজারে চলে গিয়েছে। ময়দান এবং এন্টালি, কলকাতা পুলিশের এই দুই থানায় মোট সাতটি এফআইআর হয়েছে সিএবি এবং অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা ওই সংস্থার বিরুদ্ধে।
পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য
কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেছেন, “টিকিটের কালোবাজারি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। বুধবার যে অভিযোগ জমা পড়েছিল, তার উত্তর সিএবি দিয়েছে। কিন্তু আমাদের আরও বিশদে জানতে হবে। আমরা তাই আবার উত্তর দিতে বলেছি। কী ভাবে টিকিট বুক করা হয়, সেটাও জানতে হবে। সিএবি এবং যে সংস্থার মাধ্যমে টিকিট বিক্রি হচ্ছে, তাদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়েছে।”
স্নেহাশিসকে পুলিশি তলব
বিশ্বকাপ টিকিটের কালোবাজারির তদন্তে নেমে এ বার কলকাতা পুলিশ ডেকে পাঠাল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (সিএবি)-এর সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। সিএবির পক্ষ থেকে অবশ্য কলকাতা পুলিশের এই ডেকে পাঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। ডাক পাঠানো হয়েছিল অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা একটি সংস্থার প্রতিনিধিদের। শুক্রবারই তাঁরা হাজিরা দিয়েছেন ময়দান থানায়।
হিমশিম খাচ্ছে সিএবি
ইডেন গার্ডেন্সে আগামী রবিবার ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের টিকিটের জন্য প্রথম থেকেই হাহাকার। স্টেডিয়ামে আসন সীমিত। অথচ টিকিটের চাহিদা আকাশছোঁয়া। তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সিএবি কর্তারা। অভিযোগ, সিএবির সদস্যদের অধিকাংশই টিকিট পাননি। ক্ষুব্ধ ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশ সিএবি এবং অনলাইনে টিকিট বিক্রি কর সংস্থার বিরুদ্ধে কালোবাজারির অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করেছেন। তারই ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশের গুন্ডাদমন শাখা।
কালোবাজারির অভিযোগে গ্রেফতার
কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, টিকিটের কালোবাজারির অভিযোগে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ৯৪টি টিকিট। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ৯০০ টাকার টিকিট ৮০০০ টাকায় বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে তিন জনকে। তাদের নাম শুভ্রদীপ ভট্টাচার্য, সুমন সর্দার এবং সন্দীপন লাহা। তাঁদের কাছ থেকে ১৭টি টিকিট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া চড়া মূল্যে টিকিট বিক্রির অভিযোগে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়েছে হর্ষ গুপ্ত এবং হর্ষিত আগরওয়াল নামে দু’জনকে। তাঁদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে আটটি টিকিট। তাঁদের বিরুদ্ধে অনলাইনে বিপুল দামে টিকিট বিক্রি করার অভিযোগ জমা পড়েছে হেয়ার স্ট্রিট থানায়। বৃহস্পতিবারই এন্টালি থানা এলাকার মৌলালি মাজ়ারের কাছ থেকে ইসলামুল হোড়া (ওরফে টিঙ্কু) এবং হেমাল শাহ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৫ নভেম্বরের খেলার ১০টি টিকিট। এ ছাড়াও একাধিক অভিযোগের তদন্ত চলছে।
সিএবির বক্তব্য
সিএবি কর্তারা জানাচ্ছেন, তাঁদের কার্যত কিছু করার নেই। সিএবির সভাপতি স্নেহাশিসের বক্তব্য, ‘‘বিশ্বকাপ আইসিসির ইভেন্ট। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) একটি সংস্থাকে অনলাইনে টিকিট বিক্রি করার দায়িত্ব দিয়েছে। সিএবি শুধু ম্যাচের আয়োজক। আমরাও টিকিট পেয়েছি অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা ওই সংস্থার মাধ্যমে। চাহিদার তুলনায় অনেক কম টিকিট পেয়েছি আমরা। ফলে ক্লাব, অনুমোদিত সংস্থা, সদস্যদের নির্ধারিত কোটা কমাতে হয়েছে।’’ পুলিশি তলবের বিষয়টিও অস্বীকার করা হয়েছে সিএবির পক্ষ থেকে।
পাশে সৌরভ
প্রায় একই কথা শোনা গিয়েছে বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখেও। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের খেলার টিকিটের চাহিদা প্রচুর। সবাই খেলা দেখতে চান। কিন্তু স্টেডিয়ামের আসন সংখ্যা নির্দিষ্ট। তাই সবাই টিকিট পাবেন না এটাই স্বাভাবিক। চাহিদা প্রবল বলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’ টিকিটের কালোবাজারির অভিযোগের প্রসঙ্গেও বিসিসিআই এবং সিএবির পাশে দাঁড়িয়েছেন সৌরভ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘টিকিট বাইরে চলে যাওয়ার পর তার নিয়ন্ত্রণ বিসিসিআই বা সিএবির থাকে না। বাইরে কোথায় কী হচ্ছে, সেটা জানাও ক্রিকেট কর্তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সিএবির পক্ষে টিকিটের কালোবাজারি আটকানো সম্ভব নয়। কর্তারা তো আর মহমেডান মাঠে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। এই দায়িত্ব পুলিশকেই নিতে হবে। ফুটবল বিশ্বকাপেও এমন হয়। একটা ম্যাচের টিকিট ১৭ লাখ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। যার আসল দাম ছিল আড়াই লাখ টাকা।”
মুখ খুললেন রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি হাওড়ার বালিটিকুরিতে সাংবাদিক বৈঠকে ব্যঙ্গ করে বলেন, টিকিট কোথায় রয়েছে তা বোধহয় ব্যোমকেশ বক্সীকে খুঁজে বার করতে হবে। মনোজ বলেছেন, “টিকিট কোথায় সেই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র ব্যোমকেশ বক্সী দিতে পারবেন। আমি কিছু জানি না।” তিনি আরও জানান, সিএবি একটি স্বশাসিত সংস্থা। তাদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কোনও লেনদেন নেই।
কালোবাজারির সঙ্গে বেটিংও
উত্তর কলকাতার গিরিশ পার্কে একটি পুরনো বাড়ির ভিতরে দেদার চলত ক্রিকেট বেটিং। ইডেনে রবিবারের ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ ঘিরে যখন শহরে উন্মাদনা তুঙ্গে, ঠিক তখনই শুক্রবার খাস কলকাতার পুরনো পাড়ার এক ক্যাফেটেরিয়া থেকে বেটিং চক্র খুঁজে বার করল কলকাতা পুলিশ। গ্রেফতার করা হল ওই চক্রের অন্যতম পাণ্ডা এক যুবককে। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত স্থানীয় যুবকের নাম অভিষেক জয়সওয়াল (২৮)। গিরিশ পার্ক এলাকার মদন চ্যাটার্জি লেনের ‘ক্যাফে ভ্যালেন্টিনো’তে তল্লাশি চালায় পুলিশ। স্কাইফেয়ার এবং স্কাইএক্সচেঞ্জ জাতীয় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মাস্টার আইডি তৈরি করে বেটিং চক্র চালাতেন তিনি। এর পাশাপাশি নিজের গ্রাহকদের এই সমস্ত বেটিংয়ের ওয়েবসাইটে আইডি বানিয়েও দিতেন অভিষেক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy