Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
S Sreesanth

ডিউস বলকে কথা শোনানো শ্রীসন্থ নিজেই অবাধ্য, খামখেয়ালি জীবনে সঙ্গী শুধুই বিতর্ক

আগ্রাসী মানসিকতা দেখাতে গিয়ে বার বার শ্রীসন্থ সীমা ছাড়িয়েছেন অজান্তে। তিনি ততটাও হয়তো খারাপ নন, যতটা তাঁর ভাবমূর্তি। মুহূর্তের খেয়ালের দাসত্ব করে নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেই চলেছেন।

picture of S Sreesanth

এস শ্রীসন্থ। ছবি: টুইটার।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৫০
Share: Save:

তাঁর বাড়ির ট্রফি ক্যাবিনেটে রয়েছে দু’টি বিশ্বকাপের সোনার পদক। যা ভারতের তাবড় ক্রিকেটারের কাছে নেই। তবু ক্রিকেটের থেকে খেলার বাইরের ঘটনাতেই বেশি প্রচার পেয়েছেন শান্তাকুমারণ শ্রীসন্থ। ক্রিকেটের পাশাপাশি, সিনেমা এবং টেলিভিশনের জগতেও স্বচ্ছন্দ যাতায়াত কেরলের প্রাক্তন ক্রিকেটারের। সক্রিয় রাজনীতিতে আছেন। শ্রীসন্থ বিতর্কেও আছেন।

মাথায় ব্যান্ড। এলোমেলো চুল। ছিপছিপে চেহারা। কেরলের প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে টেস্ট খেলেছেন। এক সময় তাঁরই ২৪ ঘণ্টা কেটেছে দিল্লির তিহার জেলে। তিনিই আবার কেরলের শেষ বিধানসভা নির্বাচনে তিরুঅনন্তপুরম কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী। যিনি লাল ডিউস বলকে নিয়ন্ত্রণ করতেন অনায়াসে, তিনিই নিজের ক্রিকেটজীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। ক্রিকেট ছেড়েছেন। তবু বিতর্ক তাঁর সঙ্গ ছাড়েনি। শখের ক্রিকেট খেলতে গিয়েও বিতর্ক, বিবাদে জড়াচ্ছেন। লেজেন্ডস ক্রিকেটে শ্রীসন্থ ঝামেলায় জড়িয়েছেন জাতীয় দলের প্রাক্তন সতীর্থ গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে। যার সঙ্গে দীর্ঘ দিন এক সাজঘর ভাগ করে নিয়েছেন, তাঁর সঙ্গেই তীব্র বাদানুবাদ!

শ্রীসন্থের অভিযোগ, লেজেন্ডস লিগের ম্যাচে গম্ভীর তাঁকে ‘ফিক্সার’ বলে কটাক্ষ করেছেন। সমাজমাধ্যমে গম্ভীরকে একহাত নিয়েছেন তিনি। জন্ম দিয়েছেন নতুন বিতর্কের। যার সঙ্গে জড়িয়ে আর এক বড় বিতর্ক। আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের তিন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠেছিল ২০১৩ সালে। অভিযুক্তদের মধ্যে সব থেকে বড় নাম ছিলেন শ্রীসন্থ। গ্রেফতার হয়েছিলেন দিল্লি পুলিশের হাতে। বিচারাধীন অবস্থায় তাঁকে দিন কাটাতে হয়েছে তিহার জেলের অন্ধকারে। যেখানে জায়গা হয় দেশের ডাকসাইটে অপরাধীদের, সেখানেই বন্দি থাকতে হয় দু’টি বিশ্বকাপজয়ী দলের জোরে বোলারকে। শ্রীসন্থ কি সত্যিই অন্যায় করেছিলেন? তিনি কখনও অভিযোগ স্বীকার করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে অকাট্য কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে দিল্লির পটিয়ালা হাউস কোর্ট শ্রীসন্থকে গড়াপেটার অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছিল। যদিও গড়াপেটার অভিযোগে তাঁকে সাত বছর নির্বাসিত থাকতে হয়েছে। ভোগ করতে হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দেওয়া শাস্তি। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে নির্বাসন মুক্ত করে। তার পর ২০২০ সালে আবার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ফিরেছিলেন।

দেশের ক্রিকেট মহলকে তোলপাড় করে দেওয়া ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ ওঠার আগেও আইপিএলে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল শ্রীসন্থকে ঘিরে। সেটা ২০০৮ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবং পঞ্জাব কিংস ইলেভেনের ম্যাচ। জাতীয় দলের সিনিয়র সতীর্থ হরভজন সিংহের সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছিলেন শ্রীসন্থ। কেন্দ্রে ছিল স্লেজিং। জাতীয় দলের তরুণ সতীর্থের আচরণে ক্ষুব্ধ হরভজন সপাটে চড় মেরেছিলেন শ্রীসন্থকে। কেরলের ক্রিকেটারের কান্নার ছবি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে। ক্রিকেট বিশ্বে।

ক্রিকেট মাঠে স্লেজিং নতুন কিছু নয়। হরভজন কখনও প্রতিপক্ষ দলের ক্রিকেটারকে স্লেজিং করেননি, এমনও নয়। তবু সে দিন কোনও কারণে মেজাজ ঠিক রাখতে পারেননি ভাজ্জি। পরে তিনি স্বীকার করেছিলেন, এতটা বাড়াবাড়ি না করলেও পারতেন। বছর দুয়েক আগে হরভজন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘যেটা হয়েছিল ভাল হয়নি। আমি ভুল করেছিলাম। আমার জন্য আমার সতীর্থকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছিল। আমিও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ছিলাম। যদি আমাকে একটা ভুল শুধরে নিতে হয়, তা হলে মাঠে শ্রীসন্থের সঙ্গে সেই আচরণ শুধরে নিতে চাই। ওই ঘটনাটা ঘটা অবশ্যই উচিত হয়নি। যখনই বিষয়টা নিয়ে ভাবি, মনে হয়, ওটার কোনও প্রয়োজন ছিল না।’’

হরভজন মেনে নিয়েছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলেন। তাঁর আচরণ সঠিক ছিল না। প্রাক্তন অফ স্পিনারের মতোই কি সবাই ভাবেন? শ্রীসন্থ কি সব সময় দোষ ছাড়াই বিতর্কে জড়ান। প্রশ্ন আছে। দীর্ঘ দিন ধরে আছে। সেই প্রশ্নই আরও এক বার প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে লেজেন্ডস লিগে গম্ভীরের সঙ্গে ঝামেলা। জোরে বোলারেরা সাধারণ ভাবে কিছুটা আগ্রাসী মেজাজের হয়ে থাকেন। পৃথিবীর সব দেশের জোরে বোলারদেরই একটা আলাদা চরিত্র আছে। শ্রীসন্থ ব্যতিক্রম নন। তবু তিনি ব্যতিক্রম। বার বার নজিরবিহীন বিতর্কে জড়িয়ে ব্যতিক্রম।

২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে মিসবা উল হকের ক্যাচ শ্রীসন্থ ঠান্ডা মাথায় তালুবন্দি করতেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। সেই ঠান্ডা মাথার শ্রীসন্থকে ক্রিকেট মাঠে দেখতে চেয়েছেন সতীর্থেরা, কোচেরা, ক্রিকেটপ্রেমীরা। শ্রীসন্থ কখনও পেরেছেন। কখনও পারেননি। আগ্রাসী মানসিকতা দেখাতে গিয়ে সীমা ছাড়িয়েছেন নিজের অজান্তেই। লেজেন্ডস লিগ ক্রিকেটের নতুন ভিডিয়োও শ্রীসন্থের পক্ষে যাচ্ছে না। সেখানেও দেখা যাচ্ছে, তিনিই বার বার গম্ভীরের দিকে তেড়ে তেড়ে গিয়েছেন। পরে গম্ভীর আগ্রাসনের জবাব দেওয়ায় সহ্য করতে পারেননি। সমাজমাধ্যমে গম্ভীরকে আক্রমণ করে বসেছেন। মুখ খুলিয়েছেন স্ত্রীকে দিয়েও!

২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভারতকে একার হাতে টেস্ট জিতিয়ে ছিলেন শ্রীসন্থ। সে দেশের মাটিতে সেটাই ছিল ভারতের প্রথম টেস্ট জয়। শ্রীসন্থের দক্ষতা ভারতকে একাধিক ম্যাচ জিততে সাহায্য করেছে। ২০১০ সালে ডারবানে বক্সিং ডে টেস্টে তাঁর দুরন্ত বোলিং এখনও মনে রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের। জোরে বোলার শ্রীসন্থের প্রতিভা নিয়ে কখনও সংশয় ছিল না। ক্রিকেটজীবনে পর্যাপ্ত সুযোগও পেয়েছেন। সাফল্য পেয়েছেন। আবার বিতর্কে জড়িয়েছেন।

ভারতীয় ক্রিকেট শ্রীসন্থের ভাবমূর্তি কিছুটা আলাদা। ‘ব্যাড বয়’। ততটাও হয়তো খারাপ নন, যতটা তাঁর ভাবমূর্তি। খামখেয়ালি, আবেগপ্রবণ শ্রীসন্থ বোধহয় নিজেকে ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারেননি। মুহূর্তের খেয়ালের দাসত্ব করতে গিয়ে নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেই চলেছেন দু’বারের বিশ্বজয়ী।

অন্য বিষয়গুলি:

S Sreesanth IPL Controversy BCCI match fixing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy