বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সহজ জয় ভারতের। ছবি: পিটিআই।
প্রথম দিন মাত্র ৩৫ ওভার খেলা হয়েছিল। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিনে একটিও বল খেলা হয়নি। তার পরেও টেস্টে ফলাফল হল। নেপথ্যে ভারতের লাল বলে ‘টি-টোয়েন্টি ম্যাচ’ এবং বোলারদের দাপট। কানপুরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত টেস্ট জিতে নিল ৭ উইকেটে।
প্রথম দিন খেলা শুরু হয় এক ঘণ্টা দেরিতে। ম্যাচের মাঝে বৃষ্টি আসে। মধ্যাহ্নভোজের সময় বাদ দিলে ঘণ্টা তিনেক খেলা হয়। টেস্টে মধ্যাহ্নভোজ এবং চা বিরতির সময় বাদ দিলে এক দিনে ছ’ঘণ্টা খেলা হয়। অর্থাৎ পাঁচ দিনে ৩০ ঘণ্টা। সেখানে কানপুরে ভারত টেস্ট জিতে নিল মাত্র ১৪ ঘণ্টায়।
টেস্টের প্রথম দিনে ৩৫ ওভারে ১০৭ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। দু’দিন নষ্ট হওয়ার পর চতুর্থ দিনে ব্যাট করতে নেমে ২৩৩ রানে শেষ হয়ে যায় তাদের ইনিংস। ৭৪.২ ওভার ব্যাট করে তারা। ভারত ব্যাট করতে নেমেই বুঝিয়ে দেয় তারা টেস্ট জয়ের লক্ষ্য নিয়েই খেলতে নেমেছে। প্রথম ওভারেই যশস্বী জয়সওয়াল তিনটি চার মারেন। রোহিত শর্মা প্রথম দু’টি বলেই ছক্কা মারেন। তাঁরা বুঝিয়ে দেন দ্রুত রান তুলে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠানোই লক্ষ্য। শুধু রোহিত বা যশস্বী নন, ভারতের সব ব্যাটারই এই লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে শুরু করেন। ইংল্যান্ডের ‘বাজ়বল’ মনে করিয়ে দিলেন তাঁরা। বাংলাদেশের বোলারেরা বুঝতেই পারছিলেন না ভারতের রান আটকাবেন কী ভাবে। ভারতের প্রথম ছ’জন ব্যাটারের মধ্যে পাঁচ জনের স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০-র বেশি। যশস্বী ৫১ বলে ৭২ রান করেন। রোহিত ১১ বলে ২৩ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। ৩৫ বলে ৪৭ রান করেন বিরাট কোহলি। লোকেশ রাহুল ৪৩ বলে ৬৮ রান করেন। তাঁদের দাপটেই ৫২ রানের লিড নেয় ভারত। ইনিংস ডিক্লেয়ার করে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে দেন রোহিত।
এই মানসিকতাটাই ভারতকে আলাদা করে দিল বাংলাদেশের থেকে। হাতে মাত্র আড়াই দিন থাকলেও যে ম্যাচ জেতার জন্য লড়াই করা যায়, সেটাই বুঝিয়ে দিলেন রোহিতেরা। টি-টোয়েন্টি যুগে প্রতি ওভারে ৮ রানের বেশি তোলা অবাক করে দেওয়া কোনও ঘটনা নয়। কিন্তু কানপুরের কালো পিচে বল যখন হাঁটুর উপরে উঠছে না, সেই সময় লাল বলে এমন দ্রুত রান তোলা যথেষ্ট কঠিন। সেই কাজটাই সহজে করে গেলেন রোহিতেরা। সেই ইনিংসই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়।
ভারত মাত্র ৫২ রানে লিড নিলেও বাংলাদেশ বড় রান তুলে পাল্টা চাপ তৈরি করতে পারল না। ওপেনার শাদমান ইসলাম ৫০ রান করেন। কিন্তু জাকির হাসান (১০), মোমুনিল হক (২), অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত (১৯), লিটন দাস (১), শাকিব আল হাসানেরা (০) রান পাননি। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনটি করে উইকেট নেন বুমরা, অশ্বিন এবং জাডেজা। আর আকাশ দীপ তুলে নেন বাংলাদেশের হয়ে রান করা একমাত্র শাদমানকে। ভারতীয় বোলারদের সকলে মিলে উইকেট তোলায় চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ভারতের সামনে ৯৫ রানের লক্ষ্য রাখে তারা।
পঞ্চম দিনে দু’টি সেশনেই খেলা শেষ হয়ে যায়। ভারতীয় দল ৯৫ রান করতে নেয় মাত্র ১৭.২ ওভার। রোহিত শর্মা (৮) এবং শুভমন গিল (৬) বেশি রান করতে পারেননি। কিন্তু যশস্বী (৫১) এবং বিরাট (২৯) মিলে ভারতকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। যশস্বী আউট হলেও বিরাট অপরাজিত থেকে যান। ঋষভ পন্থ চার মেরে ম্যাচ জেতান।
প্রথমে চেন্নাই তার পর কানপুর, বাংলাদেশের উপর আধিপত্য নিয়ে জিতল ভারত। যখন যেমন ভাবে চেয়েছে, তেমন খেলেছে ভারত। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে প্রথম দিকের ব্যাটারেরা রান না পেলেও দলকে বড় রান তুলতে সাহায্য করেন অশ্বিন। শতরান করেন তিনি। তাঁর সঙ্গী ছিলেন জাডেজা। তাঁদের জুটি ভারতকে জয় এনে দেয়। কানপুরে দেখা গেল বল হাতে অশ্বিন-জাডেজা জুটি ভারতকে জেতাচ্ছেন। এমন দু’জন অলরাউন্ডার ভারতের শক্তি অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। সিরিজ়ের সেরা হলেন অশ্বিন।
কানপুরে ম্যাচের সেরা যশস্বী। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচে তিনটি অর্ধশতরান করলেন তিনি। সব চেয়ে বেশি রান করেছেন যশস্বীই। ১৮৯ রান করেন তিনি। তরুণ ওপেনার ভারতীয় দলের সম্পদ হয়ে উঠছেন। রোহিত রান না পেলেও যশস্বী ভারতকে প্রতি ম্যাচেই ভরসা দিচ্ছেন।
তরুণ যশস্বী ম্যাচের সেরা এবং অভিজ্ঞ অশ্বিন সিরিজ় সেরা। তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার এই মিশেল ভারতীয় দলকে সমৃদ্ধ করছে। আগামী দিনে নিউ জ়িল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়গুলিতে যা কাজে লাগবে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও ভারত সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy