Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Virat Kohli

T20 World Cup: ৬-০! ১৩-০! এগিয়ে থাকার চাপে জেতার আগেই হেরে বসে নেই তো কোহলীরা

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের অদৃশ্য চাপ বরাবর বড় ভূমিকা নিয়ে এসেছে। কখনও তা প্রকট, কখনও প্রচ্ছন্ন থেকেছে। এই ম্যাচ ক্রিকেটীয় যুক্তির ধার ধারে না।

বিরাট কোহলী।

বিরাট কোহলী। ফাইল ছবি।

অনির্বাণ মজুমদার
শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২১ ১১:০৪
Share: Save:

কেউ বলছেন ৬-০ হবেই। কেউ আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সঙ্গে একদিনের ক্রিকেটের বিশ্বকাপকে যোগ করে বলছেন, ১৩-০ হবে। কেউ আবার ধরি মাছ, না ছুঁই পানি গোছের মানসিকতা থেকে বলছেন, এই ম্যাচ হারলেও সেমিফাইনালে উঠতে, বা তারপরে চ্যাম্পিয়ন হতে কোনও সমস্যা হবে না। ৬-০ না হলে পাড়ায় যাতে হাস্যকর হতে না হয়, তাই নিজেকে একটু নিরাপদ জায়গায় রাখা।

অনেকটাই এগিয়ে থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করছে বিরাট কোহলীর ভারত। খাতায়-কলমে কোহলীরা যে সত্যিই এগিয়ে, এটা বোঝার জন্য সুনীল গাওস্করের অভিজ্ঞতা, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মাথা না থাকলেও চলবে। এটা সত্যি, সত্যি, সত্যি।

ভারতের এতখানি এগিয়ে থাকার কারণ অবশ্যই আইপিএল। এই সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতেই আইপিএল শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই কোহলী, রোহিতরা বিশ্বকাপ খেলতে নেমে পড়েছেন। ভারতীয় দলের ১৫ জন ক্রিকেটারের এ বারের আইপিএল-এ মোট ম্যাচ খেলার সংখ্যা যেখানে ২০০-র উপর, সেখানে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা শূন্য।

এগুলো সব তথ্য, পরিসংখ্যান, কাগজ-কলমের হিসেব। গাওস্কর-ইমরান, আজহার-মিয়াঁদাদ, সৌরভ-আক্রম, কোহলী-বাবররা যতই বলুন, এই ম্যাচ আর পাঁচটা ম্যাচের মতোই, গীতা-কোরানে হাত রেখে এই কথা বলতে বললে তাঁরা দু’বার ভাববেন। ২০১৬ সালে আইসিসি-র তৎকালীন সিইও ডেভ রিচার্ডসন এমনি এমনি বলেননি, তাঁরা সব সময় চেষ্টা করেন ভারত এবং পাকিস্তানকে এক গ্রুপে রাখতে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের এই অদৃশ্য চাপ বরাবর বড় ভূমিকা নিয়ে এসেছে। কখনও তা প্রকট হয়েছে, কখনও প্রচ্ছন্ন থেকেছে। তাই এই ম্যাচ ক্রিকেটীয় যুক্তির ধার ধারে না। এই ম্যাচে কাউকে ‘ফেভারিট’-এর তকমা দিতে গেলে ‘পূর্বাভাস না মিললে তার দায় আমার নয়’, এই বিধিসম্মত সতর্কীকরণও তার সঙ্গে দেওয়া আবশ্যিক।

যত দিন যাচ্ছে এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দুই দেশের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের অস্থিরতা, কাশ্মীরে একের পর এক জঙ্গি আক্রমণ। যেহেতু খেলাধুলো কোনও বিচ্ছিন্ন সামাজিক ঘটনা নয়, ক্রিকেটাররাও সমাজের বাইরে নন, তাই এই সবের প্রভাব দুই দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে পড়তে বাধ্য। গত কয়েক বছরে প্রতিটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের মতো এ বারও রাজনৈতিক মহল থেকে দাবি উঠেছে, এই ম্যাচ ভারতের না খেলাই উচিত। কোহলীরা যত পেশাদারই হোন, এ সবের ন্যূনতম প্রভাব তাঁদের উপর পড়বে না, তা হয় না। আর এই ম্যাচে ওইটুকুই বিরাট ফারাক গড়ে দেয়। বারবার দিয়েছে। শেষ বলে জাভেদ মিয়াঁদাদের হাতে চেতন শর্মার ছয় খাওয়াই হোক, বা বিশ্বকাপে সচিন তেন্ডুলকরের ক্যাচ আব্দুল রজ্জাকের ফেলে দেওয়াই হোক, এগুলো তারই প্রমাণ।

ক্রিকেটীয় যুক্তিতে আসা যাক। এ বার ইতিবাচক বা নেতিবাচক, দুই দিক থেকেই ভারতের সামনে সবথেকে বড় বিষয় হয়ে উঠতে পারেন কোহলী নিজেই। তিনি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়বেন। এমনিতেই বড় কোনও প্রতিযোগিতা জিততে পারেননি বলে কোহলীকে প্রায়ই খোঁটা শুনতে হয়। শেষ বেলায় এই না জেতার তকমাটা তিনি গা থেকে প্রবল ভাবে ঝেড়ে ফেলতে চাইবেন। অধিনায়ককে বিশ্বকাপ তুলে দিয়ে বিদায় জানাতে চাইবেন বাকিরা। এই উচাটন রোহিত শর্মা, রবিচন্দ্রন অশ্বিনদের মধ্যে যতটা না থাকবে, তার থেকে কয়েক গুণ বেশি থাকবে সূর্যকুমার যাদব, বরুণ চক্রবর্তীর মতো বিশ্বকাপের আসরে অনভিজ্ঞ নতুনদের। আর ভারত এবার নতুনদের উপরই বেশি ভরসা করছে।

অধিনায়কত্ব ছাড়ার বিষয়টা কোহলীর কাছে কতটা চাপের, সেটা শনিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে বোঝা গিয়েছে। এই নিয়ে কোহলীকে প্রশ্ন করা হলে মাথা গরম করে তিনি বলেন, ‘‘আমি তো যা বলার খোলাখুলি বলেছি। এর মধ্যে কোনও লুকোছাপা নেই। এরপর যদি কিছু মানুষের মনে হয়, আমি সবটা বলিনি, কিছু লুকিয়েছি, তা হলে আমার কিছু করার নেই।’’ এটা যে চাপের বাষ্পীভবন, সেটা স্পষ্ট।

পাকিস্তানের কথায় আসা যাক। পাকিস্তানী ক্রিকেটাররা আইপিএল-এর স্বাদ না পেলেও তাঁদের নিজস্ব পাকিস্তান সুপার লিগ আছে। সেখানেও বিদেশি ক্রিকেটাররা চুটিয়ে খেলছেন। সেখানেও প্রতিযোগিতার মান খুব একটা কম নয়। তাদের অধিনায়ক বাবর আজম পিএসএল খেলাকেই তাঁদের সবথেকে বড় শক্তি বলছেন।

শেষ তিন বছরে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে বাবর আজমের মতো এত রান আর কেউ করেননি। কোহলীও না। তথ্য আরও একটা আছে। ২০১৮ সাল থেকে ধরলে প্রথমে ব্যাট করে যে আটটি ম্যাচে কোহলীরা ১৬০ রানের কম করেছেন, তার প্রত্যেকটিতে হারতে হয়েছে।

সবথেকে বড় কথা, এই ৬-০, ১৩-০-র আবহে পাকিস্তানের ১৫ জনের উপর চাপের বোঝাটা সত্যিই কম। তাঁদের যে হারানোর কিছু নেই। সবাই তো তাঁদের হারিয়েই দিয়েছেন।

তাই প্রশ্নটা উঠছে, জেতার আগেই হেরে বসে নেই তো কোহলীরা?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy