শৌচাগার পরিষ্কার করতে হয়েছিল রোহিতদের। —ফাইল চিত্র
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মাঝে হঠাৎ হোটেল বিতর্ক ব্রিসবেনে। ভারতীয় দল অনুশীলন ম্যাচ খেলার জন্য গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার সেই শহরে। কিন্তু রোহিত শর্মাদের নিম্ন মানের হোটেলে রাখা হয়। সেই ঘটনা অবশ্যই ভারতীয় দলকে মনে করিয়ে দিতে পারে ২০২১ সালের স্মৃতি। সে বার শৌচাগার পরিষ্কার করতে হয়েছিল রোহিতদের।
টেস্ট সিরিজ় খেলতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিল ভারত। সেই সিরিজ়ের শেষ ম্যাচ ছিল ব্রিসবেনে। করোনার মধ্যেই চলছিল সে বারের সিরিজ়। ভারত প্রথমে রাজি ছিল না ব্রিসবেন যেতে। শেষ পর্যন্ত বিসিসিআইকে রাজি করায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু সেখানে পৌঁছে শুরু হয় বিতর্ক। হোটেলে রোহিত শর্মা, অজিঙ্ক রাহানেদের সব কিছু নিজেদের করতে হয়েছিল। এমনকি শৌচাগারও নিজেদের পরিষ্কার করতে হয়েছিল। সে বার রোহিতরা হোটেলকে ‘জেলখানা’ বলেছিলেন।
হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল তৎকালীন বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। ভারতীয় দলের এক সদস্য বলেছিলেন, ‘‘আমরা ঘরে বন্দি হয়ে রয়েছি। আমাদের নিজেদেরই সব কাজ করতে হচ্ছে। শৌচাগার পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে বিছানা পরিষ্কার, সব আমরা করছি। কাছাকাছি একটা ভারতীয় রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আসছে। সেটা আমরা হোটেলে যে তলায় রয়েছি, সেখানে দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঘরের বাইরে আমাদের বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আমরা জেলে আছি।’’ হোটেল ফাঁকা থাকলেও ঘরের বাইরে বেরোতে দেওয়া হয়নি রোহিতদের। বন্ধ করে রাখা হয়েছিল জিম, রেস্তরাঁ, ক্যাফে এবং সুইমিং পুলও। সব কিছু নিয়ে মারাত্মক ক্ষুব্ধ ছিল ভারতীয় দল।
এ বারেও বিতর্ক সেই ব্রিসবেনেই। বিশ্বকাপ শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে সেখানে যায় ভারতীয় ক্রিকেট দল। এ বারেও আয়োজকদের ব্যবস্থায় খুশি হননি ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা। আইসিসির প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন দলগুলিকে যে মানের হোটেলে রাখার কথা, ব্রিসবেনে ভারতীয় দলের হোটেল সেই মানের ছিল না। আয়োজক অস্ট্রেলিয়া দলকে প্রত্যাশিত মানের হোটেলে রাখা হলেও, ভারতীয় দলের থাকার ব্যবস্থা করা হয় তুলনায় নিম্ন মানের হোটেলে। অথচ যে হোটেলে অ্যারন ফিঞ্চ, ডেভিড ওয়ার্নাররা ছিলেন সেখানেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল পাকিস্তান দলের।
ব্রিসবেনে ভারতীয় দলকে যে হোটেলে রাখা হয়, তার ঘরগুলি ছিল তুলনায় ছোট। হোটেলে জিম, সুইমিং পুল থাকলেও বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া একটি দলের উপযোগী নয় সেগুলি। আসবাবপত্র, খাবারের মানও যথাযথ ছিল না বলে অভিযোগ। হোটেলের বিভিন্ন পরিষেবাও প্রত্যাশিত মানের ছিল না। হোটেলটি ব্রিসবেনের যে জায়গায় অবস্থিত, তা-ও পছন্দ হয়নি রোহিত, কোহলিদের। ব্রিসবেনের হোটেল নিয়ে অপছন্দের কথা ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে আইসিসিকে জানানো হয়েছিল। তা-ও হোটেল পরিবর্তন করে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
হোটেলে ঢোকার পরেই সেখানকার ব্যবস্থা দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেন ভারতীয় দলের একাধিক ক্রিকেটার। কারণ এমন নিম্ন মানের হোটেলে থাকতে অভ্যস্ত নয় ভারতীয় দল। কখনই ভারতীয় ক্রিকেটারদের এই ধরনের হোটেলে রাখা হয় না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতায় থাকার ব্যবস্থা কী করে নির্দিষ্ট মানের থেকে কম মানের হোটেলে করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন একাধিক ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ায় আরও ভাল আতিথেয়তা আশা করেছিলেন তাঁরা।
ভারতের পরবর্তী ম্যাচ সিডনিতে। বৃহস্পতিবার সেখানে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে খেলবেন রোহিতরা। সেই শহরে খাবার নিয়ে সমস্যায় পড়েছে ভারত। একটি ইংরাজি সংবাদপত্রের দাবি, মঙ্গলবার আয়োজকদের মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা পছন্দ হয়নি ভারতীয় দলের। স্টেডিয়ামে না খেয়ে হোটেলে ফিরে যায় ভারতীয় দল।
ঘণ্টা দুয়েক কঠোর অনুশীলনের পর সাজঘরে ফেরেন রোহিত, কোহলিরা। খিদেয় তখন তাঁদের পেটে ছুঁচোয় ডন দিচ্ছে। স্নান সেরে খেতে যান ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা। কিন্তু খাবার ঘরে গিয়েই মেজাজ হারালেন কোহলি, রোহিতরা। কারণ আইসিসির তরফে যে মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তা পছন্দ হয়নি ভারতীয় দলের। দলের কয়েক জন ক্রিকেটার মাংসের টুকরো মুখে দিয়ে দেখেন, তা প্রচণ্ড ঝাল। দলের জন্য যে পরিমাণ খাবার রাখা হয়েছিল, তা অপর্যাপ্ত ছিল বলেও অভিযোগ। তাতেই মেজাজ হারান রোহিত, কোহলিরা। এখানেই শেষ নয়।
খাদ্যতালিকায় ছিল কয়েক রকম ফল এবং স্যান্ডউইচের নানা রকম উপকরণ। খাবার টেবিলে রাখা বোর্ডে লেখা ছিল, ‘নিজের স্যান্ডউইচ নিজে তৈরি করে নিন।’ তা দেখে ক্লান্ত ক্রিকেটাররা বিরক্তি প্রকাশ করেন। আইসিসির ব্যবস্থা করা খাবার না খেয়েই হোটেলে ফিরে যান তাঁরা। ভারতীয় দলের এক সদস্য বলেছেন, ‘‘খাবারের মান প্রত্যাশিত ছিল না। তা ছাড়া কঠোর অনুশীলনের পর আমাদের স্যান্ডউইচ তৈরি করে নিতে বলা হয়!’’ এক জনকে বলতে শোনা যায়, ক্রিকেটের আয়ের সিংহভাগই ভারত থেকে আসে। তার পরেও ভারতীয় দলের সঙ্গে আইসিসির এই আচরণ সঙ্গত নয়।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিতে শুরু করেছে ভারত। রোহিতদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকার কথা। কিন্তু আয়োজকদের ব্যবস্থায় যে গাফিলতি দেখা যাচ্ছে, তা বার বার সমস্যায় ফেলছে ভারতকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy