কোহলি-হার্দিকের ১১৩ রানের জুটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় এনে দিল ভারতকে। ছবি: টুইটার।
৯০ হাজার ২৯৩ জন দর্শকের সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযানের শুরুটা দুর্দান্ত হল বিরাট কোহলির। মেলবোর্নের ২২ গজে ব্যাটিং বিপর্যয় সামলেও বিরাট জয় পেলেন রোহিত শর্মাদের। নাটকীয় ম্যাচে পাকিস্তানের ৮ উইকেটে ১৫৯ রানের জবাবে ভারত করল ৬ উইকেটে ১৬০ রান। প্রায় একার হাতে শেষ বলে ভারতকে রুদ্ধশ্বাস জয় এনে দিলেন কোহলি। ৫৩ বলে তাঁর অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংসে ভর করে পাকিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দিল ভারত।
অস্ট্রেলিয়ার উইকেট, আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে ৬ অক্টোবর সে দেশে চলে গিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। পার্থ, ব্রিসবেন, মেলবোর্নে তিন দফায় চলেছে প্রস্তুতি। তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে ভারতীয় দল। তবু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহদের সামনে বিধ্বস্ত ভারতীয় ইনিংস। মেলবোর্নের মতো বড় মাঠে ১৬০ রানের লক্ষ্য সহজ নয়। গ্যালারি ভর্তি দর্শকের সামনে শুরুতে হয়তো সেই চাপই নিতে পারলেন না রোহিতরা। শুরুতেই আউট হলেন সহ-অধিনায়ক লোকেশ রাহুল (৪)। তাঁর পরেই সাজঘরে ফিরলেন রোহিতও (৪)। আগ্রাসী মেজাজে শুরু করেও বড় ইনিংস খেলতে পারলেন না সূর্যকুমার যাদবও। ১০ বলে ১৫ রান করে আউট হলেন সূর্যকুমার। দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং অর্ডারে বদল করে ভারতীয় দল। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হয় অক্ষর পটেলকে। বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে নামিয়ে দ্রুত কিছু রান তুলে নিতে চেয়েছিলেন রোহিতরা। সেই পরিকল্পনাও কাজে এল না। বিরাট কোহলির ভুলে রানআউট হয়ে গেলেন অক্ষর (২)। সেই ক্ষতি অবশ্য পুষিয়ে দিলেন প্রাক্তন অধিনায়ক। দীপাবলির আগে ভক্তদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের অন্যতম সেরা ইনিংস উপহার দিলেন তিনি। ভারতীয় ইনিংসের শুরুতে জয়ের আশায় থাকা বাবর আজ়মদের হতাশায় ডুবিয়ে দিলেন। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের জয়ের পরিসংখ্যান আরও উন্নত করলেন।
ভারতীয় ইনিংসের প্রথম ছয় মারলেন হার্দিক পাণ্ড্য ১২তম ওভারে। শুরুতে কোহলি মূলত উইকেটের এক দিক আগলে রাখেন। রবিবার শুরুর দিকে ব্যাটে বলে ঠিক মতো হচ্ছিল না প্রাক্তন অধিনায়কের। পরের দিকে অবশ্য হাত খুলে পাক বোলারদের শাসন করতে শুরু করেন কোহলি। হার্দিকের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটের জুটিতে পাল্টা লড়াই পৌঁছে দিলেন পাক শিবিরে। তাঁদের জুটি উঠল ১১৩ রান। সেই জুটিই গড়ে দিল অনবদ্য জয়ের ভিত। হার্দিক ৩৭ বলে ৪০ রান করে আউট হলেও দেশকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন কোহলি। তাঁর ৮২ রানের ঝকঝকে ইনিংসে রয়েছে ছ’টি চার এবং চারটি ছক্কা। উইকেটের চার দিকে অনায়াস শট মারলেন কোহলি। পাকিস্তানের কোনও বোলারই তাঁর আগ্রাসন আটকাতে পারলেন না। হার্দিক মারলেন একটি চার এবং দু’টি ছয়। জয়ের জন্য ভারতের শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬ রান। চাপে মুখে লাইন, লেংথ ঠিক রাখতে পারলেন না পাক স্পিনার মহম্মদ নওয়াজ়। হার্দিক এবং দীনেশ কার্তিকের উইকেট নিলেও দু’টি ওয়াইড এবং একটি নো বল করে ভারতের কাজ সহজ করে দিলেন।
পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে সফলতম হ্যারিস রউফ ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিলেন। নওয়াজ় ২ উইকেট নিলেন ৪২ রান দিয়ে। ভাল বল করলেও উইকেট পেলেন না চোট সারিয়ে দীর্ঘ দিন পর মাঠে ফেরা শাহিন। ২৩ রানে ১ উইকেট নাসিমের।
টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন রোহিত। শুরুতেই বাবর (শূন্য) এবং মহম্মদ রিজ়ওয়ানের (৪) উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে ধাক্কা দিলেন আরশদীপ সিংহ। জোড়া ধাক্কা খেয়ে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। তিন নম্বরে নামা শান মাসুদ এবং চার নম্বরে নামা ইফতিকার আহমেদ পাক ইনিংসের হাল ধরেন। যে মিডল অর্ডার নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল, সেই মিডল অর্ডারই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ভরসা দিল বাবরের দলকে। দু’জনেই অর্ধশতরান করলেন। ইফতিকার ধীরে শুরু করেও পরে আগ্রাসী ব্যাটিং করলেন। তাঁর ৩৪ বলে ৫১ রানের ইনিংসে রয়েছে দু’টি চার এবং চারটি ছক্কা। উইকেটের এক দিক শেষ পর্যন্ত আগলে রাখলেন মাসুদ। শেষ পর্যন্ত পাঁচটি চারের সাহায্যে ৪২ বলে ৫২ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি। পাকিস্তানের অন্য কোনও ব্যাটার সাফল্য না পেলেও মাসুদ এবং ইফতিকারের ইনিংসে ভর করেই মূলত পাকিস্তান ১৬০ রানের লক্ষ্য রাখে ভারতের সামনে। শেষ দিকে শাহিন খেললেন ৮ বলে ১৬ রানের ছোট ঝোড়ো ইনিংস। তিনিই পাক ইনিংসের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। আর কেউ দু’অঙ্কের রান করতে পারলেন না। শাহিনের পর সর্বোচ্চ মহম্মদ নওয়াজের ৯।
আরশদীপ ছাড়াও ভারতের হয়ে ভাল বল করলেন হার্দিক পাণ্ড্য, ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ শামিরা। আরশদীপ ৩২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিলেন। যদিও সেই ১৯তম ওভারে দিলেন ১৪ রান। ভারতের সফলতম বোলার অবশ্য হার্দিক। ৩০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিলেন তিনি। ভুবনেশ্বর ২২ রানে ১ উইকেট এবং শামি ২৫ রানে ১ উইকেট নিলেন। যদিও হতাশ করলেন অক্ষর পটেল। এক ওভার বল করে ২১ রান দিলেন বাঁহাতি স্পিনার। ইফতিকারের আগ্রাসনের সামনে লাইন-লেংথ হারিয়ে ফেললেন অক্ষর। তাঁকে পরে আর আক্রমণে আনার সাহসই পেলেন না অধিনায়ক রোহিত। অন্য স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৩ ওভার বল করে দিলেন ২৩ রান।
পাকিস্তানের ইনিংসে অশ্বিনের বলে মাসুদের একটি শট স্পাই ক্যামে লাগায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রোহিত, হার্দিকরা। বলটি স্পাই ক্যামে না লাগলে ১৫তম ওভারেই আউট হয়ে যেতে পারতেন অপরাজিত অর্ধশতরান করা মাসুদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy