দিলীপ বেঙ্গসরকর। —ফাইল চিত্র।
‘বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কখনও হারেনি ভারত’। গর্ববোধ করার এই উক্তি প্রথম ম্যাচেই ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল বিরাট-বাহিনীর। বাবর আজ়মদের বিরুদ্ধে দশ উইকেটে হারের ধাক্কা কি এত সহজে কাটিয়ে ওঠা যায়? পরের ম্যাচেই আবার প্রতিপক্ষ নিউজ়িল্যান্ড। আইসিসি-র প্রতিযোগিতায় যারা ভারতের সবচেয়ে বড় কাঁটা। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক দিলীপ বেঙ্গসরকর মনে করেন, প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হারের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই ভারত পড়ে গিয়েছে আরও বড় পরীক্ষার সামনে। তাই হয়তো এই আত্মসমর্পণ।
ভারতের হারের বেশ কিছু কারণও তুলে ধরলেন বেঙ্গসরকর ও সৈয়দ কিরমানি। প্রথমটি অবশ্যই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে হার। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে দীর্ঘ আইপিএল প্রতিযোগিতার পরেই বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে ভাল ক্রিকেট উপহার দেওয়ার চ্যালেঞ্জকে। তৃতীয় কারণ, ভুল শট নির্বাচন ও দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার মনোভাব।
ভারতের এই হার কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না বেঙ্গসরকর। তাঁর কণ্ঠস্বরে ফুটে উঠছিল হতাশা। আনন্দবাজারকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘হারের সমালোচনা করতে কখনও ভাল লাগে না। কিন্তু পরাজয় অনেক রকমের হয়। কেউ হারে লড়াই করে, কেউ আত্মসমর্পণ করে। এই ভারতীয় দল কিন্তু আত্মসমর্পণ করল। লড়াই করার মানসিকতা ওদের মধ্যে দেখতে পেলাম না।’’ যোগ করেন, ‘‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে দশ উইকেটে হারের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা একেবারেই সহজ নয়। আপনাকে বুঝতে হবে ভারতের বিরুদ্ধে হেরে পাকিস্তানও কিন্তু ২০১৯ সালে ভাল কিছু করতে পারেনি। যতই বলুক বাইরের আলোচনা প্রভাব ফেলে না, কিন্তু এ ধরনের হার অনেক বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।’’
প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক মনে করেন, সূচি গঠনের সময় আরও একটু সচেতন থাকতে হবে প্রত্যেককে। বিশ্বকাপের আগেই আইপিএলের মতো এত বড় একটি প্রতিযোগিতা খেলা হলে মানসিক চাপ বাড়তে বাধ্য। তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি আগের মতো নেই। ম্যাচ শেষে বাইরে বেরিয়ে কেউ আনন্দ করতে পারে না। জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থাকায় মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠার কোনও সুযোগ নেই। কী করে আগের ম্যাচের সব কিছু ভুলে নতুন লড়াইয়ের জন্য তৈরি হবে দল? তাদের চিন্তা-ভাবনা করার সময় এবং জায়গাও তো দিতে হবে। কয়েক দিনের মধ্যেই দু’টো বড় প্রতিযোগিতার চাপ সামলানো সহজ নয়। আইপিএলের পরেই শুরু হল প্রস্তুতি ম্যাচ। তার পরেই বিশ্বকাপ। কেউ বিশ্রাম পেয়েছে?’’
ভারতের হারে কোনও ব্যক্তিকে দোষারোপ করতে চান না বিশেষজ্ঞেরা। তবে বেঙ্গসরকরের বলতে দ্বিধা নেই, ব্যাটারদের ব্যর্থতাই হারের মূল কারণ। বলছিলেন, ‘‘হঠাৎ ওপেনিং জুটি পরিবর্তনের কারণ খুঁজে পেলাম না। প্রস্তুতি ম্যাচে রোহিত রান করেছিল। তাকে কেন ওপেনিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হল না? ঈশান কিশান অনভিজ্ঞ। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের চাপ সামলাতে পারেনি। বাকিদের মধ্যেও অভিজ্ঞতার প্রতিফলন দেখতে পেলাম না। ঋষভ পন্থ এত কঠিন পরিস্থিতি থেকে টেস্ট জিতিয়েছে। সে কী করে সোজা একটি বল লেগসাইডে চালাতে গেল?’’
পন্থের উপরে দোষারোপ করতে না চাইলেও প্রাক্তন উইকেটকিপার কিরমানি বলছেন, ‘‘ওকে দ্রুত শিখতে হবে কী করে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করতে হয়। দল ওর থেকে কী চাইছে, সেটা বুঝতে না পারলে সফল হওয়া সম্ভব নয়। আইপিএল আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এখানে বিদেশি ক্রিকেটারেরা কি সমান তাগিদের সঙ্গে সব ম্যাচ খেলে? কিপিংয়ের সঙ্গেই ব্যাটার হিসেবে ওর গুরুত্ব কতটা, সেটা দ্রুত বুঝতে হবে। প্রতিভা থাকলেই হয় না। কী ভাবে সেই প্রতিভাকে কাজে লাগাব, সেটাও বুঝতে হবে।’’ প্রাক্তন ভারতীয় পেসার কারসন ঘাউড়িও হতাশ। বলছিলেন, ‘‘মানছি বোলারদের কিছু করার ছিল না। কিন্তু আর অশ্বিনের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে কেন খেলানো হবে না? সি ভি বরুণ এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য তৈরি নয়।’’
তিন জনের মধ্যে কেউই ভারতের সেমিফাইনাল যাত্রার বিষয়ে ইতিবাচক নন। অঙ্কের বিচারে বিরাট-বাহিনীর শেষ চারের যাত্রা এখনও যে খাদের কিনারে গিয়েই আটকে রয়েছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy