ফাইল চিত্র।
কয়েক দিন আগে এক জাতীয় নির্বাচকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল বিমানবন্দরে। ওর কাছে জানতে চাই, তোমরা বিদেশে গেলেই ঋদ্ধিমান সাহাকে বসিয়ে ঋষভ পন্থকে সুযোগ দাও কেন? জবাবে সেই নির্বাচক পুরনো বুলিটাই বলে গেল, ‘‘ঋষভ ব্যাটটা ভাল করে, বয়সটাও কম।’’ আমার পাল্টা প্রশ্ন ছিল, ঋদ্ধির বয়স ৩৭ হতে পারে, কিন্তু ওর মতো ফিট ক্রিকেটার ক’জন আছে? আমতা আমতা করে মানতে বাধ্য হয় সেই নির্বাচক।
মঙ্গলবার সেঞ্চুরিয়নে ভারতের ব্যাটিং ধসের মধ্যে ঋষভের ব্যাটিং দেখতে দেখতে খুব আক্ষেপ হচ্ছিল। যে ছেলেটা ঘাড়ে ও রকম চোট নিয়ে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে কানপুরে অসাধারণ ইনিংস খেলে গেল, তাকে কি না বাইরে বসে থাকতে হচ্ছে! আর ভাল ব্যাটিংয়ের তকমা লেগে যাওয়া ঋষভ খেলে চলেছে আর ব্যর্থ হচ্ছে। এ দিন দ্রুততম একশো শিকারের মাইলফলকে পৌঁছলেও ঋষভের চেয়ে কিপার হিসেবে ঋদ্ধি কতটা এগিয়ে, তা নিশ্চয়ই বলতে হবে না।
ব্রিসবেনে দারুণ একটা ইনিংস খেলার পরে ঋষভের ব্যাট থেকে আমরা সে রকম কিছুই পাইনি। এ দিন দক্ষিণ আফ্রিকা ওকে পরিকল্পনা করে আউট করল। বারবার আগেই সামনের পায়ে চলে আসছিল ঋষভ (৮)। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডিন এলগার এক জন ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ ফিল্ডার রাখল। ব্যাট-প্যাড ক্যাচটা ওখানেই গেল।
বৃষ্টিতে দ্বিতীয় দিন খেলা পুরো ভেস্তে যায়। তৃতীয় দিনের খেলা শুরু হতেই ধস নামে ভারতীয় ব্যাটিংয়ে। শেষ সাতটা উইকেট পড়ে ৪৯ রানে। কে এল রাহুল (১২৩) এবং অজিঙ্ক রাহানে (৪৮) তড়িঘড়ি শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এল। দ্বিতীয় দিন বৃষ্টি হয়েছে, উইকেট পুরো ঢাকা ছিল। ফলে তৃতীয় দিন এই পিচে আর্দ্রতা ছিল। যা ধীরে ধীরে শুকোতে থাকে আর উইকেটের বাউন্সটাও বাড়তে থাকে।
রাহুল এবং রাহানে— দু’জনেই বলের বাউন্সটা ঠিক বুঝতে পারেনি। রাহানেকে দেখে মনে হল ও দ্রুত কিছু রান তুলে দলে নিজের জায়গাটা পাকা করতে চাইছে। ও রকম বাউন্স করা বলে ব্যাকফুটে স্কোয়ার ড্রাইভ মারা যায় না। এর পরে দুরন্ত প্রত্যাঘাত করল মহম্মদ শামিরা। দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের প্রথম ওভারেই দিনের সেরা বলে এলগারকে ফিরিয়ে দিল বুমরা। তার পরে সেঞ্চুরিয়নে বিধ্বংসী হয়ে উঠল শামি। বিশ্ব ক্রিকেটে খুব কম বোলারই আছে, যারা শামির মতো সিমটাকে ব্যবহার করতে পারে। হাতে আউটসুইংটাও দারুণ। এ দিন এডেন মার্করাম এবং টেম্বা বাভুমাকে ফিরিয়ে দিল দুটো অসাধারণ লেট সুইংয়ে। বল মিডল-অফ লাইনে পিচ পড়ে একটু দেরিতে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে মার্করামের স্টাম্প ভেঙে দিল আর বাভুমার ব্যাটটা ছুঁয়ে ঋষভের হাতে চলে গেল। বুমরা একটা সময় চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা হয়তো স্বস্তি পেয়েছিল। কিন্তু শামি সেই স্বস্তিকে দ্রুতই দুঃস্বপ্নে বদলে দিল। ওর ৪৪ রানে পাঁচ উইকেট কিন্তু টেস্ট জীবনের অন্যতম সেরা বোলিং হয়ে থাকবে। একই সঙ্গে টেস্টে দুশো উইকেটও হয়ে গেল শামির। সারা দিনে ১৮ উইকেট পড়ল। লুনগি এনগিডি ছ’টা উইকেট পেল ঠিকই, কিন্তু সেরা শামিই।
এ দিন দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস আরও আগে শেষ হয়ে যেতে পারত, যদি কয়েকটা ক্যাচ স্লিপ ফিল্ডারদের আগে না পড়ত। উইকেটকিপার যেখানে দাঁড়ায়, তার পিছনে থাকে প্রথম স্লিপ। প্রথম স্লিপের একটু সামনে দ্বিতীয় স্লিপ, তারও সামনে তৃতীয় স্লিপ। উইকেটকিপারের আদর্শ জায়গা হল, বল যেখানে পেটের কাছে আসবে। কিন্তু ঋষভকে দেখলাম, কয়েকটা বল নিচু হয়ে ধরল। অর্থাৎ বাউন্স আন্দাজ করতে পারেনি। ঋষভ পিছিয়ে দাঁড়ানোয় স্লিপরাও পিছিয়ে ছিল। ফলে ব্যাটের কানায় লেগে কয়েকটা বল আগে ড্রপ পড়ে যায়।
ভারতের প্রথম ইনিংসের ৩২৭ রানের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ ১৯৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে দিনের শেষে ভারতের রান ১৬-১। এখনও বাকি দু’দিন। আবহাওয়া যদি ঠিক থাকে, তা হলে ভারতের জেতা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy