প্রার্থনা: বিরাটকে রানে ফিরতে দেখে খুশি পন্টিং। রয়টার্স, ফাইল চিত্র
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩৫ রান করলেও রিকি পন্টিং মনে করেন, ওই ইনিংসেই ফর্মে ফেরার লক্ষণ দেখিয়েছেন বিরাট কোহলি। প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক বলেও দিয়েছেন, কোহলিকে রানের মধ্যে ফিরতে দেখে খুবই ভাল লাগছে তাঁর।
আইসিসি রিভিউ অনুষ্ঠানে পন্টিং বলেছেন, ‘‘প্রথমেই বলি, ওকে রানের মধ্যে ফিরতে দেখে দারুণ লাগছে। একেবারেই অবাক হইনি যে, রান তাড়া করতে নেমে রানগুলো করল বিরাট। এ আর নতুন কী! আমরা সকলেই তো জানি, রান তাড়া করার সময় বিরাট কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে!’’ ৩৪ বছরের কোহলি গত তিন বছর ধরে কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচে সেঞ্চুরি করেননি। হালফিলে আরও বেশি করে সংগ্রাম করছেন রান করার জন্য। গত রবিবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এশিয়া কাপের ম্যাচে পুরনো সেই বিধ্বংসী মেজাজে দেখা না গেলেও অল্প রানের দ্বৈরথে ৩৫ রানের ইনিংসও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
এশিয়া কাপে খেলতে এসেই কোহলি ফাঁস করেছিলেন, ব্যাটে রান না থাকায় অন্ধকার সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি, ঘরভর্তি লোকের সামনেও নিজেকে একাকী, নিঃসঙ্গ মনে হয়েছে। সে সব দেখেছেন পন্টিং। বলেছেন, ‘‘আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় ওর কথাবার্তা পড়ে বুঝলাম, খুব অন্ধকার একটা অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। অনেক পুরুষের মতোই হয়তো সে সব নিয়ে কথা বলতে চায়নি ও। চায়নি কারও সঙ্গে ওর ভিতরের যন্ত্রণা ভাগ করে নিতে।’’ যোগ করেন, ‘‘এ বার ও ব্যক্তিগত সে সব কথা বলতে শুরু করেছে। ভাগ করে নিতে চাইছে। আমার মনে হয়, এই খোলামেলা হওয়ার সিদ্ধান্ত ওকে চাপমুক্ত করছে। এর ফলে নিজের ভিতর থেকে সব কিছু আবার উপভোগ করতে শুরু করবে ও।’’
পন্টিং প্রার্থনা করছেন, ক্রিকেটপ্রেমীদের স্বার্থে কোহলি যেন খুব শীঘ্রই স্বমেজাজে ফিরতে পারেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আশা করব, ওর সেরা ফর্মে খুব দ্রুতই ফিরবে বিরাট। বিশেষ করে যেন বিশ্বকাপে ও নিজের দক্ষতার চূ়ড়োয় থাকতে পারে।’’ প্রসঙ্গত, পন্টিংয়ের দেশ অস্ট্রেলিয়াতেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসছে। অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বলছেন, ‘‘আমি চাইব অস্ট্রেলিয়ায় এসে বিশ্বকাপে যেন বিরাট ওর সেরা ফর্ম দেখায় আর প্রতিযোগিতার সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে থাকে।’’ তার পরেই মজা করে যোগ করেছেন, ‘‘তবে এটাও দেখতে হবে যাতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ও বেশি রান না করে ফেলে।’’
কোভিড অতিমারির মধ্যে খেলোয়াড়দের জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে বন্দি থাকতে হচ্ছে। মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোহলি নিজে এশিয়া কাপ শুরুর আগে সম্প্রচারক চ্যানেল স্টার স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ভিতরে-ভিতরে তিনি ক্লান্ত, বিধ্বস্ত ছিলেন। তবু লোক দেখানোর জন্য চনমনে থাকার মুখোশ পরে ছিলেন। বলেন, খুবই নিঃসঙ্গ লাগত তাঁর নিজেকে। পন্টিংকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি নিজে কখনও এ রকম মানসিক অবসাদের শিকার হয়েছিলেন কি না। নিজের কেরিয়ারের শেষ দিকে রানের জন্য তাঁকেও লড়াই করতে হচ্ছিল। পন্টিং বলেন, ‘‘যখন সব কিছু ঠিক যায় না, যখন তুমি আগের মতো রান করতে পারছ না, তখন সত্যিই মানিয়ে নেওয়া খুব কঠিন হয়ে যায়।’’ যোগ করেন, ‘‘আমি শেষ দু’বছরে এ রকম পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। খুব দ্রুতগতিতে সব কিছু নিম্নগামী হয়ে পড়েছিল। তখন আমার মনে হত, যত বেশি পরিশ্রম আমি করছি রানে ফেরার জন্য, ততই রানহারিয়ে যাচ্ছে।’’
রান না পেতে থাকলে কী হয়, তা নিয়ে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন পন্টিং। ফাঁস করেছেন, ‘‘আমি বরাবর নিখুঁত থাকার ব্যাপারে এত সচেতন থেকেছি যে, সব সময় আরও বেশি চেষ্টা করে গিয়েছি। বুঝিনি, তাতে নিজের উপর চাপ বাড়িয়ে ফেলছি। যে ভাবে সফল হওয়ার সময় খেলেছি, সেই স্বাভাবিক ছন্দটাই নষ্ট করে ফেলেছিলাম। আমার মনে হয়, বিরাটের সঙ্গেও একই ব্যাপার ঘটেছে।’’ তাঁর আরও ব্যাখ্যা, ‘‘মানুষের প্রবণতাটাই তাই। যখন সময় ভাল হচ্ছে না, আরও চেষ্টা করি আমরা, আরও পরিশ্রম করি। আর যত বেশি চেষ্টা করি, তত বেশি কঠিন হয়ে যায় অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা।’’ সেই কারণেই তিনি মনে করছেন, ক্রিকেট থেকে লম্বা ছুটি নিয়ে কোহলি একদম ঠিক করেছেন।
কোহলির মন্তব্যের রেশ ধরেই পন্টিংয়ের আরও বিশ্লেষণ, ‘‘যে পরিমাণ ক্রিকেট এখনকার দিনে খেলতে হয়, বিশেষ করে আধুনিক ভারতীয় ক্রিকেটারদের, তাতে এমন ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হতেই পারে। মনে হতেই পারে আমি দারুণ চনমনে আছি, খুব ক্ষুধার্ত আছি, আসলে ভিতরে-ভিতরে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত।’’ যোগ করেন, ‘‘নিজে যখন ক্লান্ত, তখন নিজেকেই প্রথম বলতে হবে, আমি ক্লান্ত। বিশ্রাম দরকার। আমার শরীর এখন সেই অবস্থায় নেই যে, পরের দিন আবার ছুটব। আবার নিজেকে মাঠে নিংড়ে দেব।’’ এই কারণেই পন্টিংয়ের মনে হচ্ছে, কোহলি যে বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে অন্তরের ডাকে সাড়া দিয়েছেন, তা ভাল লক্ষণ। ‘‘বিরাটের জন্য এক সপ্তাহের বিশ্রাম খুব জরুরি ছিল। ও যে এক মাসের ছুটি নিল, তা দারুণ ব্যাপার। সব কিছু নতুন করে চিন্তাভাবনা করে, তরতাজা হয়ে ফিরতে পারল ও।’’
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় প্রথম একাদশে জায়গা হয়নি ঋষভ পন্থের। দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক পন্থ, কোচ পন্টিং। অনেকের মতো কোচও বিস্মিত। বলেছেন, ‘‘আমি সত্যিই খুব অবাক হয়েছিলাম। আমার মনে হয় ভারতের ষষ্ঠ বোলার দরকার ছিল, তাই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত। কিন্তু দিল্লি ক্যাপিটালসে অনেক দিন ধরে ওকে দেখার পরে বলব,পন্থ আমার প্রিয় ক্রিকেটারদের এক জন। অন্যদের চেয়ে ওর প্রতি একটু বেশিই নরম মনোভাব রয়েছে আমার।’’ যোগ করেন, ‘‘আমি জানি ও কতটা দক্ষ, কতটা ইতিবাচক মনোভাবের, কতটা মরিয়া ভাবে জিততে চায়।’’ আশা করছেন, বাদ পড়লেও দ্রুতই আবার নিজেকে প্রমাণ করবেন পন্থ। দিল্লি কোচের কথায়, ‘‘দীনেশ কার্তিক ওর জীবনের সেরা ফর্মে রয়েছে। তাই ওকে বসানো সত্যিই কঠিন। তবে আমি নিশ্চিত পন্থ দ্রুতই ফিরবে। ওর সেরা ফর্ম নিয়েই ফিরবে। পন্থের মতো দুর্ধর্ষ প্রতিভাকে বাইরে রাখা মানে বলতেই হবে অসাধারণ দল হাতেরয়েছে ভারতের।’’
পন্টিংয়ের প্রার্থনা মতো, দ্বিতীয় ম্যাচেই বুধবার হংকংয়ের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে ফেরেন পন্থ। বিশ্রাম দেওয়া হয় হার্দিক পাণ্ড্যকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy