কারিগর: ক্যারিকে ফিরিয়ে উচ্ছ্বাস জাডেজার। ছবি: গেটি ইমেজেস।
রবীন্দ্র জাডেজা মনে করেন, স্টিভ স্মিথের উইকেটই ম্যাচ তাঁদের দিকে ঘূরিয়ে দিয়েছিল। ম্যাচে জেতার পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে এসে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলব, স্মিথের উইকেটই টার্নিং পয়েন্ট। তার আগে পর্যন্ত বেশ ভালই খেলছিল ওরা। স্মিথ আউট হতেই খেলা ঘুরে যায়। ও রকম উইকেট তুলে নিতে পারলে সত্যিই মনোবল অনেক বেড়ে যায়।’’
জাডেজা একদম ঠিকই বলছেন। চেন্নাইয়ের রবিবারের ম্যাচ পেন্ডুলামের মতো দুলল। প্রথমে মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া খারাপ শুরু করেনি। তখন স্মিথ আর ওয়ার্নার ভালই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন দলকে। কিন্তু মাঝপথে ভারতীয় স্পিনের সামনে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল তারা। অস্ট্রেলিয়া এক সময় ১১০-২ ছিল। তখন মনে হচ্ছিল, তারা ভালই স্কোর তুলবে। কিন্তু সেখান থেকে ১১৯-৫ হয়ে যায়। সেখান থেকে ১৯৯ অলআউট। স্মিথের উইকেট ছবিটাই পাল্টে দেয়।
আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে বছরের পর বছর ধরে খেলার সুবাদে এখানকার পরিবেশ, পিচ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল জাডেজা। বলছিলেন, ‘‘দশ-বারো বছর ধরে এখানে খেলছি। এখানকার সব কিছুই জানা। এমন একটা চেনা মাঠে বোলিং উপভোগ করছিলাম।’’ ১০-০-২৮-৩। স্বপ্নের বোলিং নিয়ে কী বলবেন? জবাব, ‘‘সব সময় দলের জন্য অবদান রাখতে পারলেই খুশি। যে ভাবেই হোক অবদান রেখে যেতে চাই।’’
ভারতের স্পিন ত্রয়ীর সাফল্য, কোহলি-রাহুলের ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি চর্চায় চেন্নাইয়ের উইকেটও। জাডেজা বলে ফেললেন, প্রথমে বল করতে এসে মনে হয়েছিল টেস্ট ম্যাচের উইকেট। ‘‘বল ঘুরছিল, একটু থেমে থেমেও আসছিল। তাই ঠিক করি উইকেটের মধ্যে বল রাখব। হয় বল ঘুরবে নয়তো সোজা যাবে,’’ বলছেন তিনি। যদিও স্মিথকে আউট করেন স্বপ্নের বলে, যেটা ভাল ঘুরেছিল। তেমনই অশ্বিন উইকেট পান দুর্ধর্ষ ক্যারম বলে, যা লেগস্পিনের মতো ঘুরেছিল। জাডেজা বললেন, ‘‘স্মিথের বলটা ভাল ঘুরেছিল, ভাগ্য ভাল ছিল। তবে এটা ঠিক আমি খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় না গিয়ে বলটা জায়গায় রেখে যাব। পিচ যা করার করবে।’’
প্রথম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় দলকে হারানো যে মনোবল বাড়াবে, তা মেনে নিলেও জাড্ডু মানছেন না, ২০১১ বিশ্বকাপে যে দু’জন ক্রিকেটার ছিলেন সেই কোহলি আর অশ্বিন পুরো দলকে বেশি পরামর্শ দিচ্ছেন। ‘‘না, না, এমন কোনও ব্যাপার নেই। দলীয় বৈঠকে সকলেই বক্তব্য দিতে পারে। যার যেটা মনে হয়, সেটা তুলে ধরতে পারে।’’
সব জায়গাতেই কি এ বার চেন্নাইয়ের মতো পিচ আশা করছেন? সব ম্যাচেই কি তিন স্পিনারে খেলতে নামবে ভারত? জাডেজার জবাব, ‘‘দেখতে হবে, কোথায় কী ধরনের পিচ হচ্ছে। সব জায়গাতে নিশ্চয়ই এ রকম পিচ পাওয়া যাবে না। কিন্তু যদি দেখা যায়, পিচ এ রকম থাকছে আর বলও ঘুরবে, তা হলে তিন স্পিনারে খেলার কথা নিশ্চয়ই ভাবা যেতে পারে।’’
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, তিন জন স্পিনারের কী আলাদা ভূমিকা থাকে? জাডেজা দারুণ উত্তর দিলেন। যার সারমর্ম, ক্রিকেটকে যারা জটিল অঙ্ক হিসেবে দেখছে দেখুক। আমি তাদের দলে নেই। বলে দিলেন, ‘‘আলাদা ভূমিকা আবার কী? সকলেরই তো লক্ষ্য এক। যত সম্ভব উইকেট তোলা। প্রত্যেকেই বল করার সময় ভাবে আমি যেন সব চেয়ে বেশি উইকেট পাই। তার জন্য কাউকে দোষও দেওয়া যায় না। তাতে প্রতিপক্ষকে তাড়াতাড়ি আউট করে ফেলা যাবে।’’
এ বার প্রশ্ন হল, দুই রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার সময় ড্রেসিংরুমের আবহ কেমন ছিল? শান্ত সবাই নাকি উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল? জাডেজা রাখঢাক না করে বলে দিলেন, ‘‘প্রথমেই তিন উইকেট চলে গেলে উদ্বেগ তো হবেই। তবে এটাও জানতাম যে, বিরাট আর রাহুল আছে। কত বার ওরা এ রকম পরিস্থিতি থেকে দলকে উদ্ধার করেছে। আজও কী দারুণ খেলল। কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’’ কুলদীপ যাদবকে আপনি বা অশ্বিন অগ্রজ হিসেবে কী পরামর্শ দিচ্ছেন? জাডেজা বললেন, ‘‘ও নিজেই এত আত্মবিশ্বাসী যে, আমাদের কিছু বলার দরকার পড়ছে না। এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী ছিল। এ দিনও দারুণ বল করল। তিন জনে নিজেদের মধ্যে অনেক কথা বলি। নানা তথ্য আদানপ্রদান করি। সকলেই উপকৃত হয়।’’
এ সবের মধ্যে মনে পড়তে বাধ্য, অস্ট্রেলিয়ার হাতেও অ্যাডাম জ়াম্পা ছিল। তিনি কী করলেন? আট ওভারে ৫৩ রান দিয়ে কোনও উইকেট পেলেন না। চোখ বন্ধ করে সাঁতার কাটতে গিয়ে সুইমিং পুলের সিঁড়িতে ধাক্কা খেয়েছিলেন। এ দিন চোখ খোলা রেখে বল করে ধাক্কা খেলেন বিরাট-রাহুলে। প্যাট কামিন্সও নিশ্চয়ই এ বার বুঝেছেন, ভারতের বিরুদ্ধে সদ্যসমাপ্ত এক দিনের সিরিজ়ে ম্যাক্সওয়েলের উইকেট পাওয়া কত বড় ধোঁকা ছিল। কামিন্সরা এটুকু ধরতে পারলেন না যে, দ্বিপাক্ষিক সিরিজ়ে যা-ই ঘটুক না কেন, কোহলিরা অন্য খেলা খেলবেন বিশ্বকাপে! কী মনে করে জ়াম্পার আগে ম্যাক্সওয়েলকে বল করাতে আনলেন কামিন্স, বোঝা গেল না। কেমন ক্যাপ্টেন্সি, কে জানে। এই বুদ্ধি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জিতে ফিরলে অবাকই হতে হবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy