হাসি উড়েছে গৌতম গম্ভীর। ভারতের কোচ হিসাবে শুরুটা খুব খারাপ হয়েছে তাঁর। ছবি: এএফপি।
মহাসমারোহে ভারতীয় দলের কোচ করা হয়েছিল তাঁকে। দায়িত্ব নিয়েই জানিয়ে দিয়েছিলেন, দলকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে তৈরি তাঁর পরিকল্পনা। কিন্তু ছ’মাসের মধ্যেই ফেঁসে গেল তাঁর দম্ভের বেলুন। ভারতের কোচের দায়িত্ব নিয়েই গৌতম গম্ভীর হারিয়ে দিয়েছেন তাঁর চার পূর্বসুরিকে। না, জয়ের নিরিখে নয়। হারের নিরিখে। প্রথম ১০টি টেস্টের মধ্যে গম্ভীর হেরেছেন ছ’টি। তাঁর আগের চার কোচের এই পারফরম্যান্স নেই। সকলকে ছাপিয়ে গিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটকে আরও গম্ভীর করে তুলেছেন কোচ গম্ভীর।
২০১১ সাল থেকে ভারতের কোচ হয়েছেন মোট ছ’জন। তাঁদের মধ্যে পাকাপাকি ভাবে কোচ হয়েছেন চার জন। রবি শাস্ত্রী এক বার দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ছিলেন। সঞ্জয় বাঙ্গার দু’বার ও ভিভিএস লক্ষ্মণ এক বার অন্তর্বর্তী কোচের দায়িত্ব সামলেছেন। তাই তাঁদের এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। পাকাপাকি ভাবে দায়িত্ব সামলানো চার কোচের প্রথম ১০ টেস্টের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে, তাঁদের থেকে কতটা পিছিয়ে রয়েছেন গম্ভীর।
ডানকান ফ্লেচার (জুন, ২০১১ থেকে মার্চ, ২০১৫)—
মোট চার বছর ভারতীয় দলের কোচের দায়িত্ব সামলেছেন এই বিদেশি। ভারতীয় ক্রিকেটে শেষ বিদেশি কোচ তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম ১০টি টেস্টের মধ্যে তিনটি জিতেছিলেন তিনি। হেরেছিলেন চারটি টেস্টে। ড্র হয়েছিল তিনটি টেস্ট। গম্ভীরের আগে শেষ চার কোচের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ তাঁরই পারফরম্যান্স। প্রথম ১০টি টেস্টে তাঁর জয়ের শতাংশ ৩০। কিন্তু গম্ভীরের থেকে কম টেস্ট হেরেছেন তিনি। তাঁর হারের শতাংশও ৩০।
ভারতের কোচ হিসাবে মোট ৩৯টি টেস্টের মধ্যে ১৩টি জিতেছিলেন ফ্লেচার। হেরেছিলেন ১৭টি। ন’টি টেস্ট ড্র হয়েছিল। খারাপ পারফরম্যান্সের জন্যই চাকরি গিয়েছিল ফ্লেচারের। তার পর আর কোনও বিদেশিকে প্রধান কোচের দায়িত্ব দেয়নি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
অনিল কুম্বলে (জুন, ২০১৬ থেকে জুন, ২০১৭)—
মাত্র এক বছর দায়িত্ব সামলেছেন। কিন্তু তাঁর মধ্যেই কুম্বলে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কোন মানের কোচ তিনি। প্রথম ১০টি টেস্টের মধ্যে সাতটি জিতেছিলেন তিনি। বাকি তিনটি টেস্ট ড্র হয়েছিল। প্রথম ১০টি টেস্টের একটিতেও হারেননি তিনি। গম্ভীরকে ধরে ভারতের শেষ পাঁচ কোচের মধ্যে সফলতম কুম্বলে। প্রথম ১০টি টেস্টে তাঁর জয়ের শতাংশ ৭০। তাঁর হারের শতাংশ শূন্য।
ভারতের কোচ হিসাবে ১৭টি টেস্টে কুম্বলের রেকর্ড বেশ ভাল। ১২টি টেস্ট জিতেছিল ভারত। ড্র হয়েছিল চারটি। কুম্বলের অধীনে মাত্র একটি টেস্ট হেরেছিল ভারত।
রবি শাস্ত্রী (জুলাই, ২০১৭ থেকে সেপ্টেম্বর, ২০২১)—
প্রথম বার ভারতের টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের পদ সামলালেও পরে পাকাপাকি ভাবে কোচ হয়েছিলেন শাস্ত্রী। প্রথম ১০টি টেস্টের মধ্যে তিনি জিতেছিলেন ছ’টি টেস্ট। দু’টি টেস্ট হেরেছিলেন ও বাকি দু’টি টেস্ট ড্র হয়েছিল। তাঁর আমলেই দু’বার অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে তাদের সিরিজ়ে হারিয়েছিল ভারত। এই কীর্তি ভারতের আর কোনও কোচের নেই। প্রথম ১০টি টেস্টে তাঁর জয়ের শতাংশ ৬০। তাঁর হারের শতাংশ ২০।
কোচ হিসাবে শাস্ত্রীর অধীনে ৪৩টি টেস্ট খেলেছিল ভারত। তার মধ্যে জিতেছিল ২৫টি। হেরেছিল ১৩টি। বাকি পাঁচটি টেস্ট ড্র হয়েছিল।
রাহুল দ্রাবিড় (নভেম্বর, ২০২১ থেকে জুন, ২০২৪)—
দায়িত্ব নিয়ে প্রথম ১০টি টেস্টের মধ্যে ছ’টি জিতেছিলেন দ্রাবিড়। হেরেছিলেন তিনটি টেস্ট। একটি ড্র হয়েছিল। অর্থাৎ, জয়ের নিরিখে কুম্বলের ঠিক পরেই রয়েছেন দ্রাবিড়। তিনিও শাস্ত্রীর মতোই প্রথম ১০টি টেস্টের ছ’টিতে জিতেছিলেন। প্রথম ১০টি টেস্টে তাঁর জয়ের শতাংশ ৬০। তাঁর হারের শতাংশ ৩০।
দ্রাবিড় ২৪টি টেস্টে দলকে কোচিং করিয়েছিলেন। তার মধ্যে ১৪টি টেস্টে জিতেছিল ভারত। হেরেছিল সাতটি। তিনটি টেস্ট ড্র হয়েছিল।
গৌতম গম্ভীর (জুলাই, ২০২৪ থেকে বর্তমান)—
দায়িত্ব নিয়ে ছ’মাসেই চাপে গম্ভীর। প্রথম ১০টি টেস্টের মধ্যে মাত্র তিনটি টেস্ট জিতেছেন তিনি। তার মধ্যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দু’টি জয় রয়েছে। ঘরের মাঠে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে প্রথম বার তিন টেস্টের সিরিজ়ে চুনকাম হয়েছে ভারত। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েও সিরিজ় হারতে হয়েছে। ১০ বছর পর আবার বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি হাতছাড়া হয়েছে ভারতের। গম্ভীরের অধীনে ১০টির মধ্যে ছ’টি টেস্ট হেরেছে ভারত। ড্র হয়েছে একটি। প্রথম ১০টি টেস্টে তাঁর জয়ের শতাংশ ৩০। তাঁর হারের শতাংশ ৬০। এই পরিসংখ্যান আরও খারাপ হতে পারত। ব্রিসবেনে ড্র হওয়া টেস্টও হারত ভারত। বৃষ্টি বাঁচিয়ে দিয়েছিল তাদের। নইলে পরিসংখ্যান দেখে আরও গম্ভীর হয়ে যেতেন কোচ গম্ভীর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy