রঞ্জিতে প্রথম শতরান সুদীপের। —ফাইল চিত্র
শতরান করেই হেলমেটটা খুললেন। এক হাতে হেলমেট অন্য হাতে ব্যাট। দুটোই উপরের দিকে তুলে বাংলার সাজঘরের দিকে তাকালেন। সকলে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর জন্য হাততালি দিলেন। রঞ্জিতে প্রথম শতরান। এমন অনুভূতি আগে কখনও হয়নি সুদীপ ঘরামি। আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর সেই উচ্ছ্বাস ধরা পড়ল।
ঝাড়খণ্ডের বোলারদের আক্রমণ ভোঁতা করে সুদীপ বললেন, “রঞ্জি খেলতে আসার আগে ইস্টবেঙ্গলের কোচ প্রণব নন্দী আমাকে বলেছিলেন নিজের মতো খেলতে, তাতেই শতরান আসবে। ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে নেমে প্রথম দিন শতরানটা পেয়ে গেলাম। মাঠ থেকে বেরিয়েই তাই ওঁকে ফোন করি। শতরানের পর আমার ছোটবেলার কোচ দেবেশ চক্রবর্তীর কথাও মনে পড়ছিল।”
গ্রুপ পর্বে সুদীপ রান পাচ্ছিলেন না। তার পরেও কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁর উপর ভরসা রাখে দল। সুদীপ বললেন, “দল আমার উপর বিশ্বাস রেখেছে। সেটা ফিরিয়ে দিতে পেরে ভাল লাগছে।” মাঠে সুদীপ যখন শতরান করেন সেই সময় ক্রিজে ছিলেন অনুষ্টুপ মজুমদার। অভিজ্ঞ অনুষ্টুপ কী বলেন সুদীপকে? বাংলার শতরানকারী বললেন, “রুকুদা (অনুষ্টুপের ডাক নাম) বলল এটাই শেষ নয়। বড় রান করতে হবে। দ্বিশতরান চাই।” সেটাই এখন লক্ষ্য সুদীপের। দলের জন্য বড় রান করতে চান তিনি।
২৩ বছরের সুদীপ ব্যাট করতে নামার আগে বাংলার ওপেনাররা বড় রান তুলে ফেলেছেন। সেটা সুবিধা করে দিয়েছিল বলে জানালেন সুদীপ। তিনি বললেন, “নিজের খেলাটা খেলতে চেয়েছিলাম। দল আমার পাশে ছিল। অভিদা (অভিমন্যু), রুকুদা আমাকে সাহায্য করছিল ব্যাট করার সময়। পরিস্থিতি বুঝতে সাহায্য করেছে ওরা। শুরুতে কিছুটা দেখে খেলছিলাম। তার পর বড় শট খেলতে শুরু করি।”
রবিবার বাংলা শিবির থেকে জানানো হয়েছিল সবুজ পিচ থাকবে। বোলাররা সাহায্য পেতে পারে। প্রথম দিনই বড় রান পাওয়া সুদীপ অবশ্য বললেন, “খুব ভাল উইকেট। আসলে ওদের বোলাররা ঠিক জায়গায় বল করতে পারেনি। আমাদের বোলিং আক্রমণ অনেক বেশি শক্তিশালী। ওরা ব্যাট করতে নামলে এত সহজে রান করতে পারবে না। আমরা খারাপ বল পেলেই মেরেছি।”
২০২০ সালে বাংলার হয়ে অভিষেক হয় সুদীপের। রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল ছিল সেটা। সেই ম্যাচে মাত্র ২৬ রান করেছিলেন তিনি। ম্যাচটি হেরে যায় বাংলা। হাত ছাড়া হয় রঞ্জি ট্রফি। দু’বছর পর ফের সুযোগ পেয়েছেন অরুণ লালের অ্যাকাডেমিতে বেড়ে ওঠা সুদীপ। এ বারের রঞ্জিতে গ্রুপ পর্বেও খেলেছেন তিনি। সেখানে খুব বেশি রান পাননি। তবু তরুণ ব্যাটারের উপর ভরসা রেখেছিল দল। সুদীপের ছোটবেলার কোচ দেবেশ বললেন, “বয়স ভিত্তিক একটা দল থেকে সুদীপকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমার সঙ্গে কর্তৃপক্ষের গণ্ডগোল ছিল। সেই কোপ পড়েছিল সুদীপের উপর। ক্লাব ওকে নিত না বলে আমার সঙ্গে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ঘুরত নেটে ব্যাট করার জন্য।”
ঘুরতে ঘুরতেই এক দিন অরুণ লালের নজরে এলেন সুদীপ। বাংলার কোচ নিজের অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করার সুযোগ দিলেন তাঁকে। ইস্টবেঙ্গল দলেও সুযোগ পেলেন সুদীপ। সুযোগ পেলেন বাংলা দলেও।
সুদীপের বাবা শ্রমিক ছিলেন। ছেলের যাতে কোনও কিছুতে অভাব না থাকে সেই চেষ্টা করে যেতেন অক্লেশে। এখন তিনি ঠিকাদার। ফলে কিছুটা আর্থিক উন্নতি হয়েছে। তিনি বললেন, “এক সময় সুদীপের পরিবারের খুব বেশি আয় ছিল না। ধীরে ধীরে এখন উন্নতি হয়েছে। সুদীপের বাবার যেমন আর্থিক দিক থেকে উন্নতি হয়েছে, সুদীপেরও তেমন ক্রিকেটের দিকে হয়েছে। সুদীপ টাকাপয়সা নিয়ে খুব একটা ভাবে না। সেটাই ক্রিকেটার হয়ে উঠতে ওকে সাহায্য করেছে।”
সোমবার রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে টস জেতে ঝাড়খণ্ড। বাংলাকে ব্যাট করতে পাঠায় তারা। প্রথম দিনেই অভিমন্যু ঈশ্বরনরা তুলে নেন ৩১০ রান। রান পেয়েছেন অভিমন্যু ঈশ্বরন, অভিষেক রামন এবং অনুষ্টুপ মজুমদার।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy