আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। —ফাইল চিত্র।
সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। অচলাবস্থা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ ঘিরে। অমীমাংসিত ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব। ২২ গজ ছেড়ে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেটের লড়াই ঠান্ডা ঘরে। সমস্যা সমাধানের আশায় ক্রিকেটপ্রেমীরা।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রাক্তন সচিব জয় শাহ আইসিসির চেয়ারম্যানের কার্যভার গ্রহণ করেছেন গত ১ ডিসেম্বর। তার আগে পর্যন্ত আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মতপার্থক্য দূর করতে পারেননি আইসিসি কর্তারা। ফলে ঘোষণা করা যায়নি প্রতিযোগিতার সূচিও। গত শুক্রবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে আইসিসি বোর্ডের বৈঠক থাকলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। ১৫ মিনিটেই শেষ হয়ে যায় বৈঠক। ভারত এবং পাকিস্তানের ক্রিকেট কর্তাদের ভাবার জন্য সময় দিয়েছেন আইসিসি কর্তারা। দায়িত্ব নেওয়ার পর এখনও মন্তব্য করেননি জয়। তবে বিসিসিআই সচিব হিসাবে তাঁর দেওয়া যুক্তি সুবিধাজনক জায়গায় রেখেছে ভারতকে।
আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক পাকিস্তান। ২০২১ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে (পিসিবি) প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায়িত্ব দেয় আইসিসি। কিছু দিন আগে বিসিসিআই লিখিত ভাবে আইসিসিকে জানিয়েছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পাকিস্তানে ভারতীয় দলকে পাঠানো সম্ভব নয়। কারণ, পাকিস্তানে দল পাঠানোর অনুমতি নয়াদিল্লি দিতে নারাজ। পাকিস্তানে গেলে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় সরকারের এই অবস্থান।
প্রতিযোগিতা হোক হাইব্রিড মডেলে। আইসিসি কর্তারা ভারতের বক্তব্য জানায় পিসিবিকে। তার পরই শুধু জটিলতার। পিসিবি প্রথমে জানায় তারা হাইব্রিড মডেল মানবে না। কিন্তু আইসিসিও হাইব্রিড মডেলের উপর জোর দেয়। পরিস্থিতি তাদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বুঝে সুর নরম করে হাইব্রিড মডেলে রাজি হয়েছে পিসিবি। তবে সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে পাল্টা শর্ত।
পিসিবির শর্ত, তারা হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন করতে রাজি। তবে ২০৩১ সাল পর্যন্ত ভারতে আইসিসির যে চারটি প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা, সেগুলিও হাইব্রিড মডেলে আয়োজন করতে হবে। উল্লেখ্য, ২০২৫ সালে মহিলাদের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের আয়োজক ভারত। ২০২৬ সালে ভারত এবং শ্রীলঙ্কা যৌথ ভাবে আয়োজন করবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০২৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক ভারত। আর ২০৩১ সালে এক দিনের বিশ্বকাপ বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ ভাবে আয়োজন করবে ভারত। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে চাপে পড়ে যাওয়া পিসিবি মান বাঁচাতে ভারতের উপর পাল্টা শর্ত চাপানোর চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য, ভারতের এই অবস্থানের জন্য গত বছরের এশিয়া কাপও হাইব্রিড মডেলে আয়োজন করতে বাধ্য হয়েছিল পিসিবি।
পাকিস্তানের দেওয়া শর্ত ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন জটিলতা। বিসিসিআই কর্তারা পিসিবির দেওয়া শর্ত মানতে নারাজ। বিসিসিআইয়ের যুক্তি, ভারতে যে চারটি প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা, সেগুলি হাইব্রিড মডেলে আয়োজনের কোনও প্রশ্নই উঠতে পারে না। কারণ, ভারতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও সমস্যা নেই। সব দেশের দল নির্বিঘ্নে ভারত সফর করছে। কখনও কোনও দলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়নি। তা ছাড়া, ২০২৩ সালে এক দিনের বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে আসা পাকিস্তান ক্রিকেট দলকেও কোনও রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। বাবর আজ়ম, মহম্মদ রিজ়ওয়ানেরা বিভিন্ন জায়গায় খেতে বা কেনাকাটা করতে গিয়েও সমস্যায় পড়েনি। তাই হাইব্রিড মডেলে প্রতিযোগিতা আয়োজনের কোনও যুক্তি নেই।
বিসিসিআই এবং পিসিবি দু’পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড়। নতুন করে কোনও পক্ষের তরফেই সুর নরমের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। বিষয়টা দু’দেশের ক্রিকেট বোর্ডের কাছে অনেকটা সম্মানের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতা প্রদর্শনের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। পরস্পরবিরোধী অবস্থানের প্রেক্ষিতে ঝুলে রয়েছে আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভাগ্য।
আইসিসি কর্তারা চেষ্টা করছেন যত দ্রুত সম্ভব চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে কেন্দ্র করে জটিলতা দূর করার। দু’দেশের বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তাঁরা। তাঁদের আশা, দু’পক্ষই যুক্তিসঙ্গত এবং বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেবে। বিসিসিআই এবং পিসিবির মতামত জানার পর আবার আইসিসির বোর্ড বৈঠক হওয়ার কথা। তার পর আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি ঘোষণা হবে। ক্রিকেটের স্বার্থে দু’দেশকে সঙ্গে নিয়েই চলতে চায় বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy