বেন স্টোকস (বাঁ দিকে) এবং প্যাট কামিন্স। ছবি: রয়টার্স
লর্ডস টেস্টে জনি বেয়ারস্টোর আউট ঘিরে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার যে বিরোধিতা শুরু হয়েছে তা থামার লক্ষণ নেই। উত্তপ্ত আবহেই হেডিংলেতে ৬ জুলাই থেকে শুরু হতে চলেছে তৃতীয় টেস্ট। তার আগে ইংল্যান্ডকে কটাক্ষ করে ক্রিকেটে নজর দিতে বললেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ভাবতে বারণ করলেন ‘স্পিরিট অফ ক্রিকেট’ নিয়ে। সেই ‘আদেশ’ মেনে নিয়ে ২৪ ঘণ্টা আগেই দল ঘোষণা করে দিল ইংল্যান্ড। এ দিনই প্রকাশ্যে এসেছে স্টিভ স্মিথের মা-কে হেনস্থা করার ঘটনা, যে কারণে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছে অস্ট্রেলিয়া দল।
তৃতীয় টেস্টের আগে কামিন্স বলেছেন, “একটা অক্রিকেটীয় বিষয় নিয়ে অহেতুক আলোচনা হচ্ছে। মনে হচ্ছে সবারই যেন কিছু বলার রয়েছে। আমাদের মধ্যে কোনও আলোচনা হয়নি। ওটা আউটই ছিল। যদি অন্য কারও জুতোয় পা গলাতে হয়, তা হলে বিপক্ষের কথা না ভেবে নিজেদের কথা ভাবা দরকার।”
বেয়ারস্টোর আউটের পর তাঁর দল যে ভাবে সমালোচনা এবং পরিস্থিতি সামলেছে, তাতে খুশি কামিন্স। বলেছেন, “আমাদের দল নিজেদের উপরেই নজর দেয়। ভাল খেলতে না পারলে আমরা নিজেদের নিয়ে আলোচনা করি। দেখি কোথায় ভুল হচ্ছে এবং শোধরানোর চেষ্টা করি। কখনও দেখবেন না পিচ বা বিপক্ষকে দোষ দিচ্ছি। গোটা সফরে যে ভাবে আমার দল পরিস্থিতি সামলেছে তাতে আমি গর্বিত।”
ইংল্যান্ড এখনও বেয়ারস্টোর কোনও দোষ দেখতে পাচ্ছে না। কিছু দিন আগে নিজের কলামে স্টুয়ার্ট ব্রড লিখেছিলেন, ওই আউট নিয়ে সারা জীবন আক্ষেপ থাকবে কামিন্সের। সেই প্রসঙ্গে অসি অধিনায়ক হাসতে হাসতে বলেছেন, “তা হলে আমাকে কয়েক বছর পরেই প্রশ্নটা করুন। আসলে ওই ধরনের আউটের ক্ষেত্রে স্পিরিট অফ ক্রিকেটের কোনও প্রসঙ্গই আসে না। খুব সহজ একটা স্টাম্পিং ছিল।”
বুধবার সেই আউট নিয়ে কথা বলতে এসে ব্রডের ভাষা শোনা গেল জো রুটের মুখেও। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক বললেন, “ওই ঘটনা নিয়ে ম্যাচের পর স্টোকস অনেক কথা বলেছে। দল হিসাবে আমরা একটা নির্দিষ্ট পথে ক্রিকেট খেলতে চাই। ক্রিকেটার হিসাবে আপনি নিজে কেমন ভাবে খেলতে চান সেটা আপনার উপরেই নির্ভর করছে। নিয়মের মধ্যে থেকেই বেয়ারস্টো আউট হয়েছে। যদি মেনে নেন তা হলে খুব ভাল। কিন্তু অন্য কোনও দল অন্য ভাবে ক্রিকেট খেললে সেটাকে সমালোচনা করার কোনও অধিকার আপনার নেই।”
কামিন্সের মতে, হেডিংলেতে দর্শকদের তীব্র কটাক্ষের শিকার হতে পারেন তাঁরা। তবে দলের খেলায় কোনও প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তিনি। বলেছেন, “মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে খেলা দেখতে আসে। আমি কোনও দিন কোনও খেলা দেখতে গিয়ে খেলোয়াড়দের অপমান করিনি। কিন্ত আমার মতো সবাই ভাববে না। আশা করি দর্শকদের ভয়ঙ্কর অভ্যর্থনার মুখোমুখি হব। পেশাদার ক্রিকেট খেলতে গেলে এগুলো মেনে নিতেই হবে।”
ইংল্যান্ডের দল
প্রত্যাশিত ভাবেই বাদ গেলেন জেমস অ্যান্ডারসন। খারাপ পারফরম্যান্সের মূল্য চোকাতে হল তাঁকে। জশ টাংকেও বাদ দিয়েছে ইংল্যান্ড। অলি পোপ চোটের কারণে ছিটকে গিয়েছেন। বদলে তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েছেন ক্রিস ওকস, মার্ক উড এবং মইন আলি।
বাড়তি নিরাপত্তা চায় অস্ট্রেলিয়া
লর্ডসে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার জনি বেয়ারস্টোকে আউট করার পরে দু’দলের মধ্যে বিবাদ চরমে ওঠে। তাতে যোগ দেন ইংরেজ সমর্থকেরাও। সাজঘরে যাওয়ার সময় লর্ডসের লং রুমে হেনস্থার মুখে পড়েন ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খোয়াজা। ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’-এ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, হেনস্থা করা হয় স্টিভ স্মিথের মা গিলিয়ানকেও। তিনি যে স্মিথের মা, সেটা নাকি জানতেন না সমর্থকেরা। শুধুমাত্র তিনি অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থন করছেন বলে কটূক্তির মুখে পড়তে হয় তাঁকে। খেলার মাঝেই স্টেডিয়াম ছেড়ে চলে যান গিলিয়ান। দলের এক সাপোর্ট স্টাফের বাচ্চা ছেলে ভয়ে কেঁদে ফেলে। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাইছে না অস্ট্রেলিয়া। হেডিংলে বেয়ারস্টোর ঘরের মাঠ। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে তাঁর সমর্থন অনেক বেশি থাকবে। লর্ডসে যে ভাবে তিনি আউট হয়েছেন তাতে হেডিংলেতে আরও উগ্র হয়ে উঠতে পারেন ইংরেজ সমর্থকেরা। সেই চিন্তা অসি ক্রিকেটারদের। একই চিন্তা প্রশাসনেরও। ইতিমধ্যেই পশ্চিম ইয়র্কশায়ার পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন হেডিংলে কর্তৃপক্ষ। গ্যালারিতে যাতে কোনও অযাচিত ঘটনা না ঘটে সে দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে পুলিশকে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকবে মাঠে। হেডিংলে স্টেডিয়ামের এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘লর্ডসে কী হয়েছে সেটা আমরা দেখেছি। মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের তিন সদস্যকে নির্বাসিত করা হয়েছে। সেখানকার লং রুমেই যদি এই হয় তা হলে হেডিংলেতে আরও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের। আমরা চাই না কোনও খারাপ ঘটনা ঘটুক। তাই আগে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’ অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেডিংলে কর্তৃপক্ষ। খেলা চলাকালীন রেস্তরাঁ বা পাবে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে স্টিভ স্মিথদের। শুধু ক্রিকেটেই মন দিতে বলা হয়েছে। এই আবহে হেডিংলে টেস্টের শুরুটা কেমন হয় সে দিকেই নজর সবার।
লং রুমের নতুন ভিডিয়ো
লং রুমে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে একটি নতুন ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। ওই নতুন ভিডিয়োয় আরও একটু ভাল ভাবে দেখা গিয়েছে যে সে দিন কী হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার এক দৈনিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উসমান খোয়াজাকেই আক্রমণের নিশানা করেন এমসিসির সদস্যেরা। তাঁকে উদ্দেশ্য করেই বিভিন্ন কটূক্তি উড়ে আসে। সেই শুনেই নিরাপত্তারক্ষীদের ডাকতে থাকেন খোয়াজা। পরে এক সমর্থকের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। নিরাপত্তারক্ষীদের উদ্দেশে কিছু সমর্থককে চিহ্নিত করে উপরে উঠে যান খোয়াজা।
অ্যান্ডারসনের পাল্টা জবাব
দল থেকে বাদ পড়ার আগেই সমালোচনার জবাব দিয়েছিলেন জেমস অ্যান্ডারসন। ইংল্যান্ডের দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এ অ্যান্ডারসন লিখেছেন, “সত্যি কথা বলতে প্রত্যেকেই চায় বড় সিরিজ়ে ছাপ রাখতে। গত ১০ বছরে টানা দুটো টেস্টে এত খারাপ খেলেছি বলে মনে পড়ছে না। কোনও না কোনও সময় দলকে সাহায্য করেছি। এখনও আমার মনে হয় না খুব খারাপ বল করছি। স্রেফ একটা খারাপ সময় যাচ্ছে। অ্যাশেজ়ে তেমনটা কেউই প্রত্যাশা করে না। ১৮১টা টেস্টে মাত্র দুটো ম্যাচে আমার খারাপ সময় যাচ্ছে।” আবারও পিচকে দোষ দিতে চাননি অ্যান্ডারসন। তবে এটাও জানিয়েছেন, দু’টি টেস্টের পিচের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি। অতীতে পাটা পিচে উইকেট নিয়েছেন বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে। এ বারই শুধু ছন্দ খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি বলেছেন, “গত ২০ বছর ধরে ব্যাটারের কাছে বল ফেলে সেটা সুইং করানোর চেষ্টা করেছি পিচের সাহায্য নিয়ে। কিন্তু তাতে কাজ না হলে খুব হতাশ লাগে। নিজের খেলা নিয়ে আরও ভাবনাচিন্তা করতে হবে আমাকে। কোচেদের সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং দেখতে হবে আমার বোলিংয়ে নতুনত্ব কিছু আনা যায় কি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy