ভারতের টেস্ট দল। ছবি: বিসিসিআই।
বৃষ্টির কারণে তিন দিন পিচ ঢাকা। স্বাভাবিক কারণেই পিচে স্যাঁতসেঁতে ভাব থাকবে। তার পর আকাশও মেঘলা। ক্রিকেট সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকা যে কেউ বলে দেবেন, এমন পরিস্থিতিতে টসে জিতলে চোখ বুজে আগে বোলিং নেওয়া উচিত। ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ঠিক তার উল্টো কাজটাই করলেন। টসে জিতে ব্যাট নিলেন। বিপক্ষের সামনে আত্মসমর্পণ করে দেশের মাটিতে লজ্জার সাক্ষী হল ভারত। ইনিংস শেষ হয়ে গেল ৪৬ রানে। দেশের মাটিতে টেস্ট খেলার ৯২ বছরের ইতিহাসে আগে যা কখনও হয়নি। দিনের শেষে নিউ জ়িল্যান্ডের স্কোর ১৮০/৩। এগিয়ে ১৩৪ রানে।
বিপক্ষ দলে টিম সাউদি, ম্যাট হেনরি, উইলিয়াম ও’রৌরকির মতো পেসারেরা রয়েছেন। অতীতে এঁদের বিরুদ্ধে বার বার বিপদে পড়েছেন ভারতীয়েরা। বৃহস্পতিবার একই জিনিস দেখা গেল। লর্ডস, ম্যাঞ্চেস্টার বা অকল্যান্ড নয়, মেঘলা আকাশ থাকলে এবং বিপক্ষ বোলারদের বল ঘুরলে দেশের মাটিতেও তাসের ঘরের মতো যে ভারতের ইনিংস ভেঙে পড়তে পারে তা এ দিন আবার দেখা গেল।
ভারতের ইনিংস টিকেছে মাত্র ৩১.২ ওভার। প্রতিটি ওভারই করেছেন নিউ জ়িল্যান্ডের পেসারেরা। স্পিনারদের বলই দিতে হয়নি। তাতেই ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড দিয়ে হিমস্রোত বয়ে গেল। টসে জিতে বল করলে যে সুবিধা নিতে পারতেন যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সিরাজেরা, সেই সুবিধা নিয়ে গেলেন সাউদি, হেনরিরা। দেখে মনেই হয়নি ভারত দু’টি টেস্ট জিতে এবং নিউ জ়িল্যান্ড দু’টি টেস্ট হেরে খেলতে নেমেছে। এতটাই স্পষ্ট ফারাক দু’দলের মানসিকতায়।
শুধুই কি টসে হার? একেবারেই নয়। এই পরিস্থিতি আগে ব্যাট করতে গেলে সবার আগে দরকার সাহস এবং ক্রিজ় কামড়ে পড়ে থাকার অনমনীয় জেদ। সেটাই কোনও ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে দেখা যায়নি। না হলে কেন রান করতে না পারায় সপ্তম ওভারেই সাউদিকে এগিয়ে এসে খেলতে যাবেন রোহিত! এটা কি টি-টোয়েন্টি যে শুরুতে না চালাতে পারলে পরের দিকে ব্যাটারেরা চাপে পড়বেন?
গোটা ইনিংসে ভারতকে ভোগাল খারাপ শট খেলার প্রবণতা। কিউয়ি বোলারেরা যত না ভাল বল করেছেন তার থেকে খারাপ শট খেলে তাদের হাতে উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন ভারতীয়েরা। রোহিতদের বোঝা উচিত ছিল তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলতে নামেননি। বিপক্ষ দলে বিশ্বসেরা কিছু বোলার রয়েছেন। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে এ ভাবে বেইজ্জত হতে হল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। প্রাক্তন ক্রিকেটার সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই ফেললেন, “মানছি বেঙ্গালুরুতে মেঘলা আকাশ ছিল। পিচ থেকে পেসারেরা সাহায্য পেয়েছে। কিন্তু তাই বলে ঘরের মাঠে ৪৬ অল আউট মেনে নেওয়া যায় না। এটা লজ্জার। যে ভাবে ব্যাটারেরা আউট হয়েছে তা কুৎসিত। তবে প্রশংসা করতে হবে নিউ জ়িল্যান্ডের। ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে ওরা যথেষ্ট পরিকল্পনা করেই নেমেছে।”
টেস্টে কোহলির ফর্ম আবার কবে ফিরবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আলোচনা বসতে পারে। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক আবার সেই ‘ব্যাড প্যাচ’-এর মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। ২০১৯-এর শেষ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত যা তাঁকে ভুগিয়েছিল। কোহলি না হয় ব্যর্থ, বাকিরাই বা তার সদ্ব্যবহার করলেন কোথায়। শুভমন গিল না খেলায় সরফরাজ খানকে তুলে আনা হয়েছিল চারে। তিনি তিন বল খেলেই ফিরলেন। অধৈর্য হয়ে উইকেট দিলেন যশস্বী জয়সওয়াল, ঋষভ পন্থেরাও। পাঁচ জন ব্যাটার শূন্য করলেন। নিউ জ়িল্যান্ডেরও প্রশংসা প্রাপ্য। ভাল কিছু ক্যাচ ধরেছেন তাঁরা। কাজে লাগিয়েছেন অর্ধেক সুযোগকেও।
ভারতের ভাগ্যও খারাপ বলতে হবে। ইনিংসের মাঝে বৃষ্টি নামল। তাতে কাজ আরও কঠিন হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, ভারতের ইনিংসের সময় আগাগোড়া মেঘলা আকাশ এবং হাওয়া দিল। কিন্তু নিউ জ়িল্যান্ড ইনিংস শুরু করতেই মাঠে উঠল খটখটে রোদ। পিচও অনেক সোজা হয়ে গেল। তার পুরোপুরি ফয়দা তুললেন কিউয়ি ব্যাটারেরা।
শুরু থেকেই আগ্রাসী খেলা শুরু করলেন ডেভন কনওয়ে এবং টম লাথাম। ১৩তম ওভারেই বিনা উইকেটে ভারতের রান টপকে যায় তারা। নিউ জ়িল্যান্ডের ফিল্ডারেরা যেখানে ভাল সব ক্যাচ নিয়েছেন সেখানে ভারতের অবস্থা ভয়াবহ। ১৩তম ওভারে সিরাজের বলে লাথামের শট দ্বিতীয় স্লিপ দিয়ে যাচ্ছিল। ভয় পেয়ে সরে গেলেন রাহুল। তার পর হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন।
নিউ জ়িল্যান্ডের প্রথম উইকেট পড়ল ১৮তম ওভারে। লাথামকে ফেরান কুলদীপ। তার পর আবার যে কে সেই। কনওয়েকে সবচেয়ে বেশি ছন্দে লাগছিল। আইপিএলের সুবাদে ভারতের বিভিন্ন মাঠ ভালই চেনা। চিন্নাস্বামীর পিচে পছন্দের শটগুলি খেলছিলেন তিনি। উইল ইয়ং (৩৩) ফেরার পরেও চাপে পড়তে হয়নি নিউ জ়িল্যান্ডকে।
যত ক্ষণ ক্রিজ়ে ছিলেন তত ক্ষণ ভারতীয় বোলারদের শাসন করে গেলেন কনওয়ে। সেই আগ্রাসী হতে গিয়েই শতরান হাতছাড়া হল তাঁর। রাউন্ড দ্য উইকেটে অশ্বিনের বলে আগে থেকে ঠিক করে রাখা শট খেলতে গেলেন। বলের লাইন পুরোপুরি মিস্ করে বোল্ড হলেন। তবে দিনের শেষ পর্যন্ত আর রক্তক্ষরণ হল না কিউয়িদের। ক্রিজ়ে রাচিন রবীন্দ্র (২২) এবং ড্যারিল মিচেল (১৪)।
অবস্থা যা তাতে এই টেস্ট বাঁচাতে হলে ভারতকে অলৌকিক কিছু করে দেখাতে হবে। অথবা বাকি তিন দিনের অন্তত দু’দিন বৃষ্টিতে ভেস্তে যেতে হবে। তৃতীয় দিন নিশ্চিত ভাবেই নিউ জ়িল্যান্ডের লিড আরও বাড়বে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় ব্যাটারেরা কী ভাবে এই অপমানের প্রত্যুত্তর দেন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy