নেপালের বিরুদ্ধে হাসি ফুটল ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার মুখে। ছবি: পিটিআই
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে নেপালকে ১০ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে জায়গা করে নিল ভারত। বৃষ্টির কারণে ভারত-পাকিস্তান খেলা ভেস্তে গিয়েছিল। নেপালের বিরুদ্ধেও সেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। কাট-অফ সময়ের ৫ মিনিট আগে খেলা শুরু করতে পারেন আম্পায়ারেরা। প্রথমে ভারতের সামনে লক্ষ্য ছিল ৫০ ওভারে ২৩১ রান। বৃষ্টির কারণে লক্ষ্য কমে দাঁড়ায় ২৩ ওভারে ১৪৫ রান। সহজেই সেই রান তুলে নেন রোহিত শর্মারা। ফলে ৩ পয়েন্ট নিয়ে পাকিস্তানের পরে গ্রুপ এ থেকে দ্বিতীয় দল হিসাবে সুপার ফোরে যায় ভারত। পাকিস্তানের পরে এ বার ভারতের কাছে হেরে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিতে হল নেপালকে।
টসে জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক রোহিত। নেপালের বিরুদ্ধে শুরুটা খুব ভাল হতে পারত ভারতের। দলের দুই পেসার মহম্মদ শামি ও মহম্মদ সিরাজ সুযোগ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু প্রথম পাঁচ ওভারেই তিনটি সহজ ক্যাচ ছাড়েন ভারতীয় ফিল্ডারেরা। শামির প্রথম ওভারের ষষ্ঠ বলে ক্যাচ ফেলেন শ্রেয়স আয়ার। অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়েছিলেন কুশল ভুর্তেল। প্রথম স্লিপে ক্যাচ গিয়েছিল। শ্রেয়স বলের গতিপথই বুঝতে পারেননি। ডান হাত বাড়ালেও বল তালুবন্দি করতে পারেননি তিনি।
দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেও একই দৃশ্য। এ বার ক্যাচ ফেলে দেন বিরাট কোহলি, যিনি দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার হিসাবে পরিচিত। মহম্মদ সিরাজ়ের বলে কভারের দিকে শট খেলেছিলেন আসিফ শেখ। কোহলি ১০০ বারে ৯৯ বারই এই ক্যাচ নেবেন। কিন্তু এই ম্যাচে বল তাঁর হাতে জমা হয়েও ফস্কে বেরিয়ে গেল। তৃতীয় ক্যাচটি ফেলেন ঈশান কিশন। এ বারও শামির বলে। পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে লেগসাইডের সামান্য বাইরে বল করেছিলেন শামি। ভুর্তেলের ব্যাটে লেগে বল গিয়েছিল উইকেটকিপারের দিকে। হালকা মনোভাব নিয়ে ক্যাচ ধরতে গিয়েছিলেন কিশন। বল তাঁর বগলের তলা দিয়ে গলে চার হয়ে যায়।
ভারতের খারাপ ফিল্ডিংয়ের সুযোগ নেয় নেপাল। দুই ওপেনার দলকে ৫০ পার করান। নেপালকে প্রথম ধাক্কা দেন শার্দূল ঠাকুর। নিজের প্রথম ওভারেই কুশলকে ৩৮ রানের মাথায় আউট করেন শার্দূল। ভারতের স্পিন জুটি বল করতে আসার পরে সমস্যায় পড়ে নেপাল। বিশেষ করে রবীন্দ্র জাডেজার সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করে নেপালের মিডল অর্ডার। পর পর উইকেট পড়তে থাকে। একটি স্পেলে ৩ উইকেট নেন জাডেজা।
এক দিকে ধরে খেলছিলেন আসিফ। অর্ধশতরান করেন তিনি। আসিফই নেপালের প্রথম ব্যাটার যিনি ভারতের বিরুদ্ধে অর্ধশতরান করলেন। যদিও তার পরে বেশি ক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি তিনি। ৫৮ রান করে সিরাজের বলে আউট হন আসিফ। ৫ উইকেট পড়ার পরে মনে হচ্ছিল তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে নেপালের ইনিংস। কিন্তু সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন নীচের সারির তিন ব্যাটার। গুলশন ঝা ২৩, দীপেন্দ্র সিংহ ২৯ ও সোমপাল কামি ৪৮ রান করেন। তাঁদের অবশ্য সাহায্য করে ভারতের ফিল্ডিং। জঘন্য ফিল্ডিং করেন দলের ফিল্ডারেরা।
শুধু এক জন বা দু’জন নন, ভারতীয় দলের প্রায় সবাই খারাপ ফিল্ডিং করলেন। একমাত্র রবীন্দ্র জাডেজা ছাড়া বাকি সবার হাত গলে রান হল। বিরাট, শ্রেয়স, হার্দিক পাণ্ড্যেরা ভাল ফিল্ডারের তালিকায় পড়েন। তাঁরাও যেন খারাপ ফিল্ডিং করার প্রতিযোগিতা করছিলেন। কে কত রান দিতে পারেন। ৩০ গজ বৃত্তের ভিতরে বিরাট, হার্দিকেরা বল ছাড়লেন। আবার বাউন্ডারিতে বল গলাতে দেখা গেল শার্দূল ঠাকুর, কুলদীপ যাদবদের।
কয়েকটি ক্ষেত্রে তো ভারতের ফিল্ডিং দেখে হাসতে দেখা যায় নেপালের ব্যাটারদেরও। এক বার শার্দূলের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল বাউন্ডারিতে চলে গেল। এক বার পিছলে পড়ে চার রান দিলেন কুলদীপ। একটি ক্ষেত্রে ভারতীয় ফিল্ডারদের দোষে ৩ রান নিল নেপাল। প্রথম মিড অফে বল ধরতে ভুল করেন হার্দিক। তিনি এক বারে বল ধরতে পারলে রান আউট হতে পারতেন নেপালের ব্যাটার। যত ক্ষণে হার্দিক বল ধরে উইকেটে দিকে ছোড়েন তত ক্ষণে ক্রিজে পৌঁছে গিয়েছেন ব্যাটার। বল স্টাম্পে লেগে অন্য দিকে চলে যায়। ফলে দ্বিতীয় রান নিতে যান দুই ব্যাটার। শর্ট থার্ডম্যান থেকে এ বার নন স্ট্রাইকিং এন্ডে বল ছোড়েন কুলদীপ। সেই বল উইকেটে না লেগে মহম্মদ সিরাজের কাছে যায়। তিনিও এক বারে বল ধরতে পারেননি। ফলে আরও এক রান নেন দুই ব্যাটার।
একটি ক্ষেত্রে কভারে বল ধরে উইকেটরক্ষক ঈশান কিশনের দিকে বল ছোড়েন শ্রেয়স। কিন্তু ঈশান সেই বল ধরতেই পারেননি। দস্তানার বেশ খানিকটা দূর দিয়ে বল চলে যায়। ফলে আরও একটি অতিরিক্ত রান হয়। এ ভাবে ফিল্ডিংয়ের দোষে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ রান অতিরিক্ত দেয় ভারত। যত বার ফিল্ডারেরা ভুল করছিলেন তত বার মেজাজ হারাচ্ছিলেন অধিনায়ক রোহিত। তাঁর চোখমুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল কতটা বিরক্ত তিনি। শেষ পর্যন্ত ৪৮.২ ওভারে ২৩০ রানে অল আউট হয়ে যায় নেপাল। ভারতের হয়ে জাডেজা ও সিরাজ ৩টি করে উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন শামি, হার্দিক ও শার্দূল।
২৩১ রান তাড়া করতে নেমে ২.১ ওভারে যখন ভারতের রান বিনা উইকেটে ১৭, তখনই আবার বৃষ্টি শুরু হয়। বেশ কিছু ক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে। সময় নষ্ট হওয়ায় ভারতের লক্ষ্য কমে দাঁড়ায় ২৩ ওভারে ১৪৫ রান। তাতে অবশ্য সমস্যা হয়নি ভারতের। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রান না পেলেও নেপালের বিরুদ্ধে ছন্দে খেললেন ভারতের দুই ওপেনার। ওভার কমে যাওয়ায় আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেন তাঁরা। রোহিত ও শুভমন দু’জনেই হাত খুলে খেললেন। নেপালের বোলারেরা অনেক চেষ্টা করলেও উইকেট নিতে পারছিলেন না। ৩৯ বলে অর্ধশতরান করেন রোহিত। ১৪ ওভারের মধ্যে ১০০ রানে জুটি গড়েন তাঁরা। দ্রুত খেলা শেষ করার চেষ্টা করছিলেন ভারতের দুই ওপেনার। শুভমনও নিজের অর্ধশতরান পূর্ণ করেন। শেষ পর্যন্ত ১৭ বল বাকি থাকতে ১০ উইকেটে ম্যাচ জিতে যায় ভারত। রোহিত ৭৪ ও শুভমন ৬৭ রান করে অপরাজিত থাকেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy