Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪
India Under 19

১৬ বছর বয়সে অনাথ! ভারতের নতুন অনূর্ধ্ব-১৯ অধিনায়ক আমন ক্রিকেট ছেড়েই দিতে চেয়েছিলেন

মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাবা-মাকে হারিয়েছেন মহম্মদ আমন। এক সময় ক্রিকেট ছেড়েই দিতে চেয়েছিলেন। সেই আমনই ভারতের নতুন অনূর্ধ্ব-১৯ অধিনায়ক।

cricket

মহম্মদ আমন। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:২৯
Share: Save:

তাঁর অধীনে খেলবেন সমিত দ্রাবিড়। কে এই সমিত? ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক ও কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের পুত্র। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সমিতের অধিনায়কের নাম মহম্মদ আমন। কে এই আমন? উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের ছেলে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই হারিয়েছেন বাবা-মাকে। এক সময় তো ক্রিকেট ছেড়েই দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ক্রিকেট তাঁকে ছাড়েনি। সেই ক্রিকেটই তাঁকে দিয়েছে পরিচিতি।

২০২০ সালে কোভিডে মা সায়েবাকে হারান আমন। বাবা মেহতাব ছিলেন ট্রাকচালক। বেশ কিছু দিন রোগে ভুগে ২০২২ সালে মারা যান তিনিও। তখন আমনের বয়স মাত্র ১৬ বছর। তার আগে মনের আনন্দে ক্রিকেট খেলতেন। কিন্তু বাবা-মা চলে যাওয়ায় তিন ভাই-বোনের ভার তাঁর উপর পড়ে। বুঝতে পারছিলেন না কী করবেন? খেলা চালিয়ে যাবেন? না কি খেলা চাকরি সংসার চালানোর জন্য কাজ জোটানোর চেষ্টা করবেন?

এখনও সেই অন্ধকার দিন তাঁর সামনে টাটকা। সংবাদমাধ্যমে আমন বলেন, “বাবা চলে যাওয়ার পরে এক ধাক্কায় অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছিলাম। আমিই তখন পরিবারের কর্তা। দুই ভাই ও এক বোন রয়েছে। নিজেকে বুঝিয়েছিলাম, ক্রিকেট ছেড়ে চাকরির চেষ্টা করতে হবে। কিছু দিন সেই চেষ্টা করি। কিন্তু কোনও কাজ পাইনি। পেয়ে গেলে হয়তো জীবনটা অন্য রকম হযে যেত। হয়তো এটাই হওয়ার ছিল বলে কোনও কাজ পাইনি। তাই ক্রিকেটটাই চালিয়ে গিয়েছি।”

খালি পেটে রাত কাটিয়েছেন আমন। হাতে যে টুকু পয়সা এসেছে, তা ভাই-বোনদের জন্য খরচ করেছেন। কিছু জমানোর চেষ্টা করেছেন। সেই সঙ্গে ক্রিকেট খেলে গিয়েছেন। আমন বলেন, “খিদের থেকে বড় কষ্ট কিছু নেই। দিনের পর দিন খালি পেটে থাকতে হয়েছে। তাই আমি এখন খাবার নষ্ট করি না। জানি, খাবার জোগাড় করতে কতটা কষ্ট করতে হয়। কানপুরে বয়সভিত্তিক ট্রায়ালে যেতাম। ট্রেনে শৌচাগারের ধারে বসতাম। কোনও রকমে আধপেটা খেয়ে খেলতাম। এখন যখন বিমানে যাই, ভাল হোটেলে থাকি, ভাল খাবার খাই, তখন সেই সব দিনের কথা মনে পড়ে।”

সাহারানপুরের ক্রিকেট কোচ রাজীব গয়ালের অবদান রয়েছে আমনের কেরিয়ারে। তিনি না থাকলে হয়তো এত দূর এগোতে পারতেন না তিনি। রাজীবের কোচিংয়েই খেলেন তিনি। রাজীব আমনের মধ্যে প্রতিভা দেখেছিলেন। যতটা পেরেছেন সেই প্রতিভাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। রাজীব বলেন, “আমন এসে বলেছিল, ‘আমাকে একটা কাজ জোগাড় করে দিন। যে কোনও কাজ হলেই হবে। বাড়িতে এক পয়সা নেই।’ আমি ওকে বলেছিলাম, আমার অ্যাকাডেমিতে ছোটদের শেখাতে। ওকে মাসে মাসে বেতন দিতাম। তাতেই ওর সংসার চলত। প্রতি দিন আট ঘণ্টা করে পরিশ্রম করত আমন। তারই ফল পেয়েছে।”

শত কষ্টের মধ্যেই ক্রিকেট ছাড়েননি আমন। তার ফল পেয়েছেন। বিনু মাঁকড় প্রতিযোগিতায় উত্তরপ্রদেশের হয়ে ৩৬৩ রান করেন তিনি। আটটি ইনিংসের মধ্যে চারটিতে অর্ধশতরান করেন। অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যালেঞ্জার সিরিজ়ে ২৯৪ রান করেন। ৯৮ গড়ে রান করেন তিনি। ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলার ফল পেয়েছেন আমন। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ অধিনায়ক হয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে আগামী মাসে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিরুদ্ধে খেলবে ভারত।

তবে এখনও একটা কাঁটা খচখচ করে আমনের মনে। বাবা-মার কথা মনে পড়ে তাঁর। আমন বলেন, “আমার ক্রিকেট খেলা পছন্দ করত না বাবা। খালি বলত, ক্রিকেট বড়লোকদের খেলা। আমরা গরিব। আমি বাবার কথা শুনিনি। ২০১৬ সালে বাবার কাজ চলে যাওয়ার পরে বাড়ি বিক্রি করতে হয়েছিল। এখন আমার থাকা-খাওয়ার কোনও সমস্যা নেই। ক্রিকেট পরিচিতি দিয়েছে। বাবা-মা বেঁচে থাকলে কত আনন্দ পেত।” আলোর সন্ধান পেলেও সেই অন্ধকার মনের কোথাও যেন রয়েই গিয়েছে আমনের।

অন্য বিষয়গুলি:

India Under 19 Mohammad Amaan India Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE