ভক্ত: প্রথম টেস্টের পরে বুমরার থেকে ব্যাটে সই নিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার অফস্পিনার লায়ন। পার্থে। ছবি: বিসিসিআই
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে তাঁর নেতৃত্ব এবং আগুনে বোলিং অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছে ভারতকে। যশপ্রীত বুমরাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত সুনীল গাওস্কর থেকে সচিন তেন্ডুলকর। তারই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার এক ক্রিকেটার আবার বুমরার সই নিয়ে যান নিজের ব্যাটে। তিনি নেথান লায়ন।
সোমবার পার্থে হারার পরে ভারতীয় ড্রেসিংরুমের সামনে বুমরার সঙ্গে দেখা করেন অস্ট্রেলীয় অফস্পিনার। সেখানেই নিজের ব্যাটে বুমরার সই নেন লায়ন। সমাজমাধ্যমে দেওয়া ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ওই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, কী ভাবে উৎসবে মেতে উঠেছিলেন ক্রিকেটারেরা। মহম্মদ সিরাজ এসে জড়িয়ে ধরেন বুমরাকে। আর তার পরে বলতে থাকেন, ‘‘একাই ম্যাচ ঘুরিয়েছ।’’ ইতিমধ্যে পার্থে চলে এসেছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মাও। তাঁকে দেখা যায় মাঠ থেকে বেরনোর মুখে ক্রিকেটারদের আলিঙ্গন করতে।
এই উৎসবের মাঝেও অবশ্য সতর্কবাণী শুনিয়ে রেখেছেন বুমরা। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, কাজ এখনও শেষ হয়নি। বুমরা বলেছেন, ‘‘যে ভাবে আমরা সিরিজ়টা শুরু করলাম, তাতে অবশ্যই খুশি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কাজ এখনও অনেক বাকি। হার থেকে যে রকম সবাই শেখে, সে রকম জয়ের থেকেও শিক্ষা নেওয়ার আছে। সেই শিক্ষা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব।’’ বিশ্বের অন্যতম সেরা এই পেসার বলেছেন, ‘‘নিজে পাঁচটা উইকেট পাওয়ার চেয়েও আমি বেশি খুশি দল জেতায়। আমরা একটা নতুন দল নিয়ে খেলছিলাম। তবে সবাই নিজের দক্ষতার প্রতি আস্থা রেখেছিল। আমরা যা বলি, তা করে দেখানোর চেষ্টা করি। এই দলকে নিয়ে আমি গর্বিত।’’
পার্থ টেস্টে অভিষেক হয়েছে দুই তরুণের। অলরাউন্ডার নীতীশ কুমার রেড্ডি এবং পেসার হর্ষিত রানার। দু’জনেরই প্রশংসা করে বুমরা বলেছেন, ‘‘দু’জনের জন্যই আমি খুব খুশি। প্রথম টেস্টেও ওরা ঠান্ডা মাথায় খেলে গিয়েছে। কোনও রকম চাপ নেয়নি।’’ যোগ করেন, ‘‘ওরা দায়িত্ব নিতে তৈরি ছিল। আমাকে এসে সে কথা বলেওছে। কঠিন কাজ দিলেও সেই কাজ করার জন্য তৈরি ছিল। এটা দারুণ ইতিবাচক একটা দিক।’’
বুমরা যদি জয়ের এক নম্বর কারিগর হন, তা হলে তাঁর খুব কাছেই থাকবেন যশস্বী জয়সওয়াল। সেই এগারো বছর বয়স থেকে তাঁর লড়াইটা কখনও সহজ ছিল না। মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ক্লাব তাঁবুতে রাতের পর রাত কাটাতে হয়েছে। পানিপুরি বিক্রি করতে হয়েছে মেলায়। কিন্তু কখনওই লড়াই থেকে সরে আসেননি যশস্বী। তাঁর এই কঠিন জীবনযুদ্ধই তাঁকে বাইশ গজে লড়াই করার রসদ জোগায় বলে জানিয়েছেন এই তরুণ ব্যাটসম্যান।
অস্ট্রেলীয় চ্যানেলে নিজের উত্থানের কাহিনি শুনিয়ে যশস্বী বলেছেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে যে লড়াইটা করেছি, সেটাই আমাকে এখন আত্মবিশ্বাস জোগায়। নিজের উপরে আমার বিশ্বাস আছে। আমি মনে করি, যে কোনও পরিস্থিতি থেকে লড়াই করে ঠিক বেরিয়ে আসতে পারব।’’
পার্থ সেই লড়াই দেখেছে। প্রথম ইনিংসে শূন্য করার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে দুরন্ত ১৬১ রান করেছেন যশস্বী। ২২ বছরের এই তরুণের কথায়, ‘‘আমি লড়াই থেকে কখনও সরে আসি না। আমি লড়াই করতে চাই। লড়াই জিততে চাই।’’ ওই রকম কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে শৈশব কাটাতে হয়তো অনেকেই চাইবেন না। কিন্তু যশস্বী অন্য কথা বলছেন। তিনি মনে করেন, সেই লড়াই তাঁকে তৈরি করে দিয়েছে পরবর্তী জীবনের জন্য। বাঁ-হাতি ওপেনারের কথায়, ‘‘ছোটবেলায় ওই রকম জীবন কাটাতে পেরেছি বলে এক দিক দিয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করি।’’ যোগ করেন, ‘‘ওই জীবন আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে পেরেছি। অনেক কিছু শিখেছি। কী ভাবে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, কী ভাবে নানা ধরনের পরিস্থিতি সামলাতে হয়, তার শিক্ষা আমি ছোটবেলা থেকেই পেয়েছি।’’
পার্থে শতরানের পরে গ্যালারির দিকে চুম্বন ছুড়ে দেন যশস্বী। সেই মুহূর্ত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘একটু অদ্ভুত ভাবে শতরানটা পেয়েছিলাম।’’ জশ হেজ়লউডের বল আপারকাট করে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দেন তিনি। কিন্তু তখনও বোঝা যায়নি, ছয় হয়েছে না চার। শেষ পর্যন্ত ছয় হওয়ায় শতরান পূর্ণ হয়। যশস্বীর মন্তব্য, ‘‘ওই মুহূর্তটা উপভোগ করতে চাইছিলাম। যারা আমাকে ভালবাসে, তাদের উদ্দেশে চুমু ছুড়ে দিয়েছি।’’
জানা গিয়েছে, পার্থ-জয়ের পরে ব্যক্তিগত কাজে দেশে ফিরে আসছেন কোচ গৌতম গম্ভীর। ৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু অ্যাডিলেডে দিনরাতের টেস্টের আগে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy