Advertisement
০৯ জানুয়ারি ২০২৫
Jasprit Bumrah

পাঁচ ম্যাচে ১৫০ ওভার! বুমরাহকে অতিরিক্ত ব্যবহার করেই বিপদ ডাকল ভারত?

মেলবোর্নে ক্লান্ত দেখানো বুমরাহ সিডনিতে শেষ ইনিংসে বলই করতে পারেননি। পিঠের পেশিতে চোট পেয়েছেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এখনও জানায়নি কত দিনের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হবে বুমরাহকে।

Jasprit Bumrah

জসপ্রীত বুমরাহ। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০১
Share: Save:

মেলবোর্ন টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষ ওভার। রোহিত শর্মা বল তুলে দিলেন জসপ্রীত বুমরাহের হাতে। শেষ উইকেটের আশায়। অধিনায়কের নির্দেশ মেনে বল হাতে দৌড় শুরু করলেন বুমরাহ। কিন্তু কোনও কিছু ঠিক হল না। প্রথম বলেই চার মারেন নাথান লায়ন। ওই ওভারে দু’টি নো বল করেন বুমরাহ। দু’টি চার মারেন লায়ন। ওভার শেষ হতেই বুমরাহকে দেখা গেল দুই হাঁটুতে হাত দিয়ে ঝুঁকে পড়লেন। মেলবোর্নের পড়ন্ত বিকেলে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল এক দিনে ২৩ ওভার বল করা ভারতীয় পেসারকে।

মেলবোর্নে ক্লান্ত দেখানো বুমরাহ সিডনিতে শেষ ইনিংসে বলই করতে পারেননি। পিঠের পেশিতে চোট পেয়েছেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এখনও জানায়নি কত দিনের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হবে বুমরাহকে। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। বুমরাহ সেই প্রতিযোগিতায় খেলতে না পারলে বড় ধাক্কা খেতে হবে ভারতকে। কিন্তু বুমরাহের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে?

ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ়ে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন হরভজন সিংহ। বুমরাহ চোট পাওয়ার পর ভারতের হয়ে ১০৩টি টেস্ট খেলা স্পিনার বলেন, “আখের রস বার করার মতো করে ব্যবহার করা হচ্ছে বুমরাহকে। ট্রেভিস হেড ব্যাট করতে আসুক বা স্টিভ স্মিথ অথবা মার্নাস লাবুশেন, সব সময় বল করতে ডাকা হচ্ছে ওকে। কত বল করবে বুমরাহ? এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হল যে শেষ ইনিংসে ও বলই করতে পারল না।”

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে বুমরাহ পাঁচ টেস্ট মিলিয়ে ১৫১.২ ওভার বল করেন। এর মধ্যে সিডনি টেস্টে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০ ওভার বল করেছিলেন তিনি। শেষ ইনিংসে চোটের কারণে বলই করতে পারেননি। ৩২টি উইকেট নেওয়া বুমরাহই ছিলেন ভারতীয় দলের আশা-ভরসা। তাঁর গড় ১৩.০৬। তিনটি ইনিংসে পাঁচ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ২০২৩ সাল থেকে বুমরাহ এখনও পর্যন্ত ৫৬০.১ ওভার বল করেছেন। খেলেছেন ৪২টি ম্যাচ। নিয়েছেন ১২৪টি উইকেট। গড় ১৫.২৬। পাঁচ বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন।

ভারত ২০২৩ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ১১১টি ম্যাচ খেলেছে। তার মধ্যে বুমরাহ ৪২টি ম্যাচ খেলেছেন। তাঁর থেকে বেশি ম্যাচ খেলেছেন মহম্মদ সিরাজ। ৫৭টি ম্যাচ খেলেছেন হায়দরাবাদের পেসার। তিনি ১০৪টি উইকেট নিয়েছেন। তাঁর গড় ২৭.৮৯। তিন বার ইনিংসে পাঁচ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন। বল করেছেন ৬৮৩.৫ ওভার। অর্থাৎ, বুমরাহের থেকে বেশি ম্যাচ খেলেছেন এবং বেশি ওভার বল করেছেন সিরাজ। কিন্তু উইকেট কম নিয়েছেন। বুমরাহ অনেক বেশি কার্যকর হয়ে উঠেছেন বল হাতে। কিন্তু মূল দুই পেসারকে এত বেশি বল করানো কি ঠিক হচ্ছে?

ভারতের হয়ে ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন বলবিন্দর সিংহ সাঁধু। প্রাক্তন পেসার যদিও বুমরাহদের পরিশ্রমের তথ্য মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “পরিশ্রম? ক’টা ওভার বল করেছে? ১৫০ মতো, তাই তো? পাঁচ ম্যাচের ন’ইনিংসে এই ওভার করেছে। অর্থাৎ, এক ইনিংসে ১৬ ওভার মতো করেছে। ম্যাচে ৩০ ওভার। এই ১৫-১৬ ওভার ও এক বারে করেনি। ছোট ছোট স্পেলে করেছে। এটা কি খুব বড় পরিশ্রম?” তাঁর সংযোজন, “ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট বলে কিছু হয় না। এগুলো অস্ট্রেলীয়দের কথা। আমি যে সময় বল করতাম, তখন ক্রিকেটারেরা শুধু নিজেদের শরীরের কথাই শুনত। আমি এই সব পরিশ্রমের কথা বুঝি না। আমরা এক দিনে ২৫-৩০ ওভার বল করতাম। কপিল (দেব) কেরিয়ার জুড়ে লম্বা স্পেলে বল করে গিয়েছে। বল করতে করতেই তো শরীর তৈরি হয়। এক জন বোলার যদি দিনে ২০ ওভার বল না করতে পারে, তা হলে তার ভারতের হয়ে খেলার কথা ভুলে যাওয়া উচিত।”

Jasprit Bumrah

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতকে প্রায় একাই টানছিলেন জসপ্রীত বুমরাহ। —ফাইল চিত্র।

বুমরাহের টেস্ট অভিষেক হয় ২০১৮ সালে। এখনও পর্যন্ত ৪৫টি ম্যাচ খেলেছেন ভারতীয় পেসার। এর মধ্যে চোটের কারণে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে ২০২৩ সালের অগস্ট পর্যন্ত খেলতে পারেননি তিনি। এক বছর চোটের কারণে মাঠের বাইরে ছিলেন বুমরাহ। ওই সময় ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় খেলতে পারেননি তিনি। খেলতে পারেননি আইপিএলেও।

ওই সময় ‘স্ট্রেস ফ্র্যাকচার’-এর কারণে খেলতে পারছিলেন না বুমরাহ। কী এই ‘স্ট্রেস ফ্র্যাকচার’? শরীরের কোনও এক জায়গায় ক্রমাগত চাপ পড়ার ফলে হাড়ে চিড় ধরে। এই ধরনের চোট কোমরের নীচের অংশে বেশি হয়। বুমরাহের কোমরে চোট লেগেছিল, যা সারতে এক বছর সময় লেগে যায়। এ বারে আবার বুমরাহ চোট পেয়েছেন পিঠের নীচের অংশে।

সুনীল গাওস্কর মনে করেন, বুমরাহকে বুঝে ব্যবহার করা উচিত। তিনি মনে করেন, তরুণদের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। তাতে আগামী প্রজন্ম তৈরি হবে। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, “ভারতে বহু পেসার রয়েছে। তারা সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষা করছে। বুমরাহের উপর বেশি চাপ তৈরি করা উচিত নয়। বাকিরা যদি বুমরাহকে সাহায্য করত, তা হলে হয়তো অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ জিততেও পারত ভারত।”

একটা সময় ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে দেখা যেত জেমস অ্যান্ডারসন, ক্রিস ওকস এবং স্টুয়ার্ট ব্রডকে একসঙ্গে সব ম্যাচ খেলানো হচ্ছে না। বিশ্রাম দিয়ে খেলানো হত। পাঁচ টেস্টের সিরিজ়ে সব ম্যাচ খেলতেন না তাঁরা। ভারত ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট’-এর কথা বললেও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি টেস্টেই খেলানো হয়েছে বুমরাহ এবং সিরাজকে। ভারতের প্রধান দুই পেসার বাংলাদেশ এবং নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠেও চারটি টেস্ট খেলেছিলেন। অর্থাৎ, টানা খেলে চলেছেন তাঁরা।

মহম্মদ শামি গোড়ালি এবং হাঁটুর চোটের কারণে ২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপের পর থেকে দলের বাইরে। আশা করা হচ্ছে, সাদা বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রত্যাবর্তন হবে তাঁর। কিন্তু শামি ফিরবেন আর বুমরাহ বসে যাবেন, এটা তো ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য ভাল নয়। দু’জন একসঙ্গে খেললে বিপক্ষের উপর যে কতটা চাপ তৈরি হয় তা এক দিনের বিশ্বকাপেই দেখা গিয়েছিল। সেই সুযোগ কি আবার হারাতে চলেছে ভারত?

অন্য বিষয়গুলি:

Jasprit Bumrah Team India India vs Australia Stress Fracture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy