ইডেনে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এক দিনের সিরিজ় জিতল ভারত। জয়ের উল্লাস কোহলি, সিরাজদের। ছবি: বিসিসিআই
ইডেনে দেখা গেল বোলারদের দাপট। দু’দলের বোলাররাই ভাল বল করলেন। তবে ব্যাটারদের যুদ্ধে বাজিমাত করল ভারত। বলা ভাল, ধৈর্যের পরীক্ষায় পাশ করলেন লোকেশ রাহুল, হার্দিক পাণ্ড্যরা। বল হাতে যদি মদম্মদ সিরাজ ও কুলদীপ যাদব ভারতের নায়ক হন, তো ব্যাট হাতে মিডল অর্ডারে রাহুল-হার্দিক জুটি ভাল খেললেন। রাহুল অর্ধশতরান করলেন। ফলে প্রথমে গুয়াহাটি, তার পর কলকাতা, পর পর দু’টি এক দিনের ম্যাচ জিতে সিরিজ় জিতলেন রোহিত শর্মারা।
গুয়াহাটিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুগতে হয়েছিল। তাই শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শনাকা ভেবেছিলেন, ইডেনে প্রথমে ব্যাট করে ভারতকে চাপে ফেলে দেবেন। কিন্তু তিনি জানতেন না, ভারতীয় দলে কুলদীপ রয়েছেন। যিনি এই মাঠকে হাতের তালুর মতো চেনেন। কুলদীপের ঘূর্ণিতে মাথা ঘুরল শ্রীলঙ্কার। শুরুটা ভাল করেও মাঝের ওভার পর পর উইকেট পড়ল। শেষ পর্যন্ত ২১৫ রানে অলআউট হয়ে গেল শ্রীলঙ্কা। দলে ফিরে ৩ উইকেট নিলেন ভারতের বাঁ হাতি চায়নাম্যান বোলার। ৩ উইকেট নিলেন সিরাজও।
ইনিংসের শুরুটা ভাল করেছিল শ্রীলঙ্কা। নিজের প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমে নুয়ানিদু ফার্নান্ডো যথেষ্ট পরিণত ব্যাটিং শুরু করেন। সাবলীল দেখাচ্ছিল তাঁকে। দলের অপর ওপেনার আবিষ্কা ফার্নান্ডোও ভাল খেলছিলেন। কিন্তু পাওয়ার প্লে-তে আবার নিজের হাতের জাদু দেখালেন মহম্মদ সিরাজ। আবিষ্কাকে আউট করলেন তিনি।
দ্বিতীয় উইকেটের জন্য ভাল জুটি বাঁধেন নুয়ানিদু ও কুশল মেন্ডিস। পেসাররা তাঁদের সমস্যায় ফেলতে পারছিলেন না। হার্দিক পাণ্ড্য ও উমরান মালিকের গতি ব্যবহার করে রান করতে থাকেন তাঁরা। নিজের অভিষেক ম্যাচেই অর্ধশতরান করেন নুয়ানিদু।
পেসাররা উইকেট তুলতে না পারায় কুলদীপের হাতে বল তুলে দেন রোহিত। নিজের প্রথম ওভারে মেন্ডিসকে ৩৪ রানের মাথায় আউট করেন কুলদীপ। পরের ওভারেই ধনঞ্জয় ডি সিলভাকে সাজঘরে ফেরান অক্ষর পটেল। শ্রীলঙ্কার ইনিংসকে বড় ধাক্কা দেন শুভমন গিল। তাঁর থ্রোয়ে ৫০ রান করে রান আউট হন নুয়ানিদু।
শ্রীলঙ্কার বড় ভরসা ছিলেন অধিনায়ক শনাকা। কিন্তু এই ম্যাচে ভাল খেলতে পারলেন না তিনি। কুলদীপের বল উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হলেন তিনি। ওয়ানিন্দু হাসরঙ্গ কয়েকটি বড় শট খেললেও ২১ রান করে সাজঘরে ফিরলেন। নির্দিষ্ট ব্যবধানে উইকেট পড়ছিল শ্রীলঙ্কার। জুটি বাঁধতে পারছিলেন না তাঁরা।
শেষ দিকে নেমে দুনিথ ওয়েল্লালাগে, চামিকা করুণারত্নেরা কিছু রান করেন। ব্যাটের খোঁচায় লেগে ইডেনের দ্রুত আউটফিল্ড কিছু বলকে বাউন্ডারি পার করায়। ফলে শ্রীলঙ্কা ২০০-র গণ্ডি পেরোয়।
দেখে মনে হচ্ছিল, ইডেন গার্ডেন্সে শ্রীলঙ্কার করা ২১৫ রান সহজেই তাড়া করে নেবে ভারত। কিন্তু ব্যর্থ ভারতের টপ অর্ডার। পছন্দের ইডেনে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা দু’জনেই রান পেলেন না। পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই ভারতের ৩ উইকেট পড়ে যায়। ফলে রান তাড়া করতে নেমে একটু চাপে পড়ে যায় ভারত। রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভাল করেছিলেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত ও শুভমন। তাড়াহুড়ো করছিলেন না তাঁরা। খারাপ বলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসেও পেসারদের সাহায্য করছিল ইডেনের পিচ। সুইং করছিল। কোনও বল লাফাচ্ছিল।
ভারতকে প্রথম ধাক্কা দিলেন করুণারত্নে। ১৭ রানের মাথায় রোহিতকে আউট করলেন তিনি। তার পরে খেলার গতির বিপরীতে আউট হলেন অপর ওপেনার শুভমন। লাহিরু কুমারাকে পর পর দু’টি চার মেরে তৃতীয় চার মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি। তবে তখনও কুমারার চমক বাকি ছিল। তাঁর ভিতরের দিকে ঢুকে আসা বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরলেন কোহলি। মাত্র ৪ রান করলেন তিনি।
ভাল দেখাচ্ছিল শ্রেয়স আয়ারকে। লোকেশ রাহুলের সঙ্গে জুটি বাঁধার চেষ্টা করেন তিনি। কয়েকটি বড় শট খেলেন। কিন্তু ২৮ রানের মাথায় কাসুন রাজিথার একটি ভিতরের দিকে ঢুকে আসা বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হলেন তিনি।
৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে জুটি বাঁধেন রাহুল ও হার্দিক। ধীরে ধীরে দলের রানকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। জরুরি রান কম থাকায় খুব একটা সমস্যা হচ্ছিল না। প্রতি ওভারে রানের গতি কম থাকলেও ধীরে ধীরে জয়ের দিকে এগোচ্ছিল ভারত। কিন্তু ৩৬ রানের মাথায় হার্দিক আউট হয়ে গেলে আবার চাপে পড়ে যায় ভারত। দলকে জেতানোর ভার পুরো এসে পড়ে রাহুলের উপর।
নিরাশ করলেন না রাহুল। শেষ কবে এত দায়িত্ব নিয়ে তিনি খেলেছেন তা মনে করতে কষ্ট হচ্ছিল। এক এক সময় তো মনে হচ্ছিল, টেস্ট ক্রিকেট খেলতে নেমেছেন বুঝি। কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে খেললেন রাহুল। প্রথমে অক্ষর ও পরে কুলদীপকে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় দলকে জয়ের দিকে নিয়ে গেলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত ৩৮ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে গেল ভারত। রাহুল ১০৩ বলে ৬৪ রান করে অপরাজিত থাকলেন। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করল ভারত। ২-০ সিরিজ় জিতে গেল তারা। আগামী রবিবার তিরুঅনন্তপুরমে সিরিজ়ের শেষ ম্যাচে খেলতে নামবে দু’দল। নিয়মরক্ষার সেই ম্যাচে দলের রিজার্ভ বেঞ্চকে ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে রোহিতদের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy