নজরে: বিরাট-ধোনি কি হাসি ফোটাবেন সমর্থকদের মুখে? ছবি টুইটার।
পাকিস্তানের নতুন ব্যাটিং কোচ ম্যাথু হেডেন এ বার নিশ্চয়ই বুঝবেন ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচে ড্রেসিংরুমে কী ধরনের চাপ থাকে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট-সহ আরও কিছু ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ খেলার সুবাদে যা আমার ভাল ভাবে জানা। তার উপরে আজ, রবিবার ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। যেখানে অপরাজিত ভারত।
এই ম্যাচটা ক্রিকেটের ডার্বি। যেখানে কেউ এগিয়ে থাকে না। ম্যাচের দিন যে দল পরিস্থিতি দারুণ ভাবে সামলাতে পারে, তারাই জিতে ফেরে। সেই চাপ ইতিবাচক এবং নেতিবাচক, দু’ধরনেরই। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ভারত সফরের কথা। সে বার আমি গ্বালিয়র এবং কোচি—দু’টি চার দিনের ম্যাচে ১১ উইকেট পেয়েছিলাম। আমার বলে আউট হয়েছিল ইনজামাম-উল-হক, শাহিদ আফ্রিদি, মইন খানেরা। গ্বালিয়রে প্রথম দিন আমার বল দেখার পরে রাতে হোটেলে তাঁর ঘরে ডেকেছিলেন ওয়াসিম আক্রম। প্রশংসা করে বলের বেশ কিছু মোক্ষম গ্রিপ দেখিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরের দিন মাঠে বল করার সময়ে আফ্রিদি আবার বাছা বাছা কিছু ছাপার অযোগ্য শব্দও প্রয়োগ করেছিল আমাকে। এতে একজন নতুন খেলোয়াড়ের উপরে চাপ তৈরি হয়। সোজা কথায়, ক্রিকেট মাঠে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ মানে চাপ থেকে মুক্ত হতে পারে না সচিন তেন্ডুলকর থেকে লক্ষ্মীরতন শুক্ল প্রত্যেকেই। কিন্তু গত দু’দশকে সেই চাপ মোকাবিলা করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশির ভাগ সাক্ষাতেই জিতে ফিরেছে আমার দেশ। সে বারের আক্রম, আফ্রিদের মতো এই পাক দলে এমন কাউকে দেখছি না যে বিরাট কোহালি, রোহিত শর্মা, বুমরাদের বিরুদ্ধে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে। তাই এ বারও জিতব বলেই মনে হচ্ছে।
বিরাট কোহালির দলকে নিয়ে আমি কেন এতটা আত্মবিশ্বাসী, এ বার তা বলি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গত ১৪ বছরে ডারবান (২০০৭), জোহানেসবার্গ (২০০৭), কলম্বো (২০১২), ঢাকা (২০১৪), কলকাতায় (২০১৬)—যে পাঁচ বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলেছে ভারতীয় দল, সে পাঁচ বারই জিতেছে। এই ৫-০ এগিয়ে থাকার ব্যাপারটা বিরাটদের যেমন ইতিবাচক রাখবে, তেমনই চাপে রাখবে পাকিস্তান শিবিরকে। দ্বিতীয় কারণ অধিনায়ক বিরাট কোহালি। এই পাঁচবারের মধ্যে যে তিন বার বিরাট পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছে ওকে পাক বোলারেরা আউট করতে পারেনি। এই তিন ম্যাচে দু’টি অর্ধশতরান-সহ ১৬৯ রান রয়েছে। এই পাকিস্তান দলে এমন কাউকে দেখছি না যে বিরাট, রোহিত-সহ ভারতীয় ব্যাটারদের বিব্রত করতে পারে। তা ছাড়া, অধিনায়কের পদ থেকে এই প্রতিযোগিতার পরেই সরে দাঁড়াবে বিরাট। ভারতীয় দলকে অনবদ্য কিছু ইনিংস উপহার দেওয়ার জন্য এই প্রতিযোগিতাকে ও বেছে নেবেই। আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান ম্যাচ মানে কোহালি কতটা আগ্রাসী মেজাজে খেলে, তা ওর পরিসংখ্যানই বলছে।
তা ছাড়া, রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল, রবীন্দ্র জাডেজারা বিপক্ষের বাবর আজ়ম, মহম্মদ হাফিজ়দের চেয়ে ধারে ও ভারে অনেকটাই এগিয়ে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২৮৬৪ রানের মালিক ‘হিটম্যান’ রোহিত শর্মা স্বমূর্তি ধারণ করলে পাকিস্তানের ভোগান্তি হতে পারে। হ্যারিস রউফের গতি দিয়ে দুবাইয়ের পিচে কিন্তু ভারতকে কব্জা করতে পারবে না পাকিস্তান। তা ছাড়া, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির পিচে গত দু’বছর ধরে আইপিএল খেলার জন্য পিচ, পরিবেশ নিয়ে পাকিস্তানের মতো সম্যক ধারণা রয়েছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের। ফলে এই জায়গাতেও এগিয়ে রাখতে পারছি না পাকিস্তানকে।
বোলিংয়ের দিক দিয়ে বুমরার ইয়র্কার-সহ মোক্ষম সব অস্ত্র পাকিস্তানকে চাপে রাখবেই। যদি চূড়ান্ত দলে থাকে তা হলে এর সঙ্গে রবি শাস্ত্রীর দলের গোপন অস্ত্র হতে পারে রহস্য স্পিনার সি ভি বরুণ। ম্যাচের যে কোনও মুহূর্তেই বল করে দুবাইয়ের পিচে পাকিস্তানকে ঝটকা দিতে পারে বরুণ।
সব শেষে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির কথায় আসি। দু’টি বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক গত দেড় দশক ধরে জানে এই ম্যাচে ড্রেসিংরুমের চাপ সামলে কী ভাবে জয় তুলে আনতে হয়। ব্লটিং কাগজের মতো ও একাই ভারতীয় দলের অর্ধেক চাপ শান্ত মাথায় শুষে নিয়ে গোটা দলকে খোলা মনে মাঠে নামিয়ে দিতে দক্ষ। শেষ বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যে জয়টা পেয়েছে, সেটা ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে এই ধোনির নেতৃত্বেই। বিপক্ষের কে কী ভাবে ভয়ঙ্কর হয়, তা কী ভাবে সামলাতে হবে, সব ওর মগজে ঠাসা। বিরাট-ধোনির এই যুগলবন্দির জন্যই ভারতকেই এগিয়ে রাখছি রবিবারের মহারণে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy