রোহিত বনাম আফ্রিদি।
কিরণ মোরেকে নকল করে জাভেদ মিয়াঁদাদের সেই ব্যাঙের মতো লাফ!
বেঙ্কটেশ প্রসাদের দিকে ব্যাট হাতে আমির সোহেলের তেড়ে যাওয়া এবং তার পরেই সোহেলকে আউট করে আপাত শান্তশিষ্ট প্রসাদেরও পাল্টা গর্জন।
গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে শাহিদ আফ্রিদির প্রায় হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম।
বন্ধু শোয়েব আখতারের হঠাৎ ক্ষেপে গিয়ে গালাগাল করা আর পাল্টা ছক্কা মেরে হরভজন সিংহের হুঙ্কার।
অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে শ্রীলঙ্কার ডাম্বুলায় এশিয়া কাপ। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ঠোকাঠুকিতে আগুনের ফুলকি উড়েছে বারবার। বিশ্বকাপের মঞ্চে এমনকি এমন পোস্টার নিয়েও উদয় হয়েছেন ভক্তরা যেখানে লেখা, ‘‘খালি ওদের হারাও। তার পরে কাপ জিতলে হবে বোনাস।’’
ভারতে ম্যাচ হেরে বাড়ি ফিরতে গিয়ে এখনকার পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে শুনতে হয়েছে, ‘‘দাঁড়াও, দিনের বেলায় দেশে ফিরতে হবে না। বিমানবন্দরে প্রচুর লোক জড়ো হচ্ছে বলে আমরা শুনেছি। রাতের অন্ধকারে তোমাদের ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’
ছিয়ানব্বই বিশ্বকাপে অজয় জাডেজার ব্যাটিং তাণ্ডবে বেঙ্গালুরুতে হারার পরে একই অবস্থা হয় ওয়াসিম আক্রমের। চোট পাওয়া আক্রম সেই ম্যাচে খেলতে পারেননি। দেশে এমনই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, বাড়ি থেকে ফোন আসে, ‘‘এখন এখানে ফেরার দরকার নেই। লন্ডন চলে যাও।’’
শারজায় জাভেদ মিয়াঁদাদের সেই শেষ বলের ছক্কাঘাতের পরে ভারতীয় দলের কী অবস্থা হয়েছিল, তা নিয়েও মজাদার কাহিনি রয়েছে। দিল্লিতে বাজার করতে আসা লম্বা, সাদা চুলদাড়ির বৃদ্ধকে দেখে এক ব্যক্তি বলে উঠলেন, ‘‘আরে তুমি চেতন শর্মা না?’’ সে তো অবাক। এত ছদ্মবেশ নেওয়ার পরেও ব্যাটা ঠিক ধরে ফেলল কী করে? ফিসফিস করে পাল্টা প্রশ্ন করল যে, ‘‘ধরেছ তো ঠিকই। কিন্তু আমাকে চিনলে কী করে?’’ দ্রুত সেই ব্যক্তির জবাব, ‘‘চিনলাম কারণ আমি যে মদন লাল!’’ জনতার রোষের ভয়ে সতীর্থ বোলারও ছদ্মবেশী। ছিয়াশির শারজায় সেই অভিশপ্ত ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান দেন এঁরা দু’জন।
তখন সোশ্যাল মিডিয়া নামক ‘সুপার স্প্রেডার’ ছিল না যে, ঘৃণার ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মহামারির চেহারা নিয়ে নেবে। তাতেই ওই অবস্থা হত। এখন বিমানবন্দরে হানা দিয়ে আর কেউ ঘেরাও করে না, টুইটারে লাভা উদ্গীরণ শুরু হয়ে যায়।
একটা সময়ে শারজায় যে ভাবে জিততে ভুলে গিয়েছিল ভারতীয় দল, বিশ্বকাপে ঠিক তেমনই অবস্থা পাকিস্তানের। স্কোরলাইন ভারতের পক্ষে ১২-০। গরিষ্ঠ মত হচ্ছে, রবিবার ১৩-০ না হলেই অঘটন হবে। মহাতারকা আর ম্যাচউইনারে বোঝাই ভারত। রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল, বিরাট কোহালি, সূর্যকুমার যাদব, ঋষভ পন্থ, হার্দিক পাণ্ড্য, রবীন্দ্র জাডেজাদের থামানোর মতো গোলাবারুদ কোথায় পাকিস্তানের? সেই ইমরান, মিয়াঁদাদ, আক্রম, ওয়াকার ইউনিসদের জমানা তো কবেই অতীত। একটা সময়ে পাক হার্টথ্রবদের পোস্টার ঝুলত ভারতের টিনএজারদের পড়ার ঘরে। এখনকার বাবর আজ়ম, হাসান আলিদের ক’জনই বা চেনে? নিউ মার্কেটে দিনদুপুরে শপিং করতে গেলেও তাঁদের ঘেরাও হওয়ার ভয় থাকবে না।
তা হোক, ক্রিকেটীয় যুক্তিতে বাবরদের উপেক্ষা করলে ঠকতে হতে পারে। ভারত-পাক দ্বৈরথ কখন কার মধ্যে স্ফুলিঙ্গ তৈরি করে দেবে, কেউ জানে না! কে কখন রাজা হয়, কে ফকির বলা যায় না। ঠিক যেমন ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে হয়েছিল। মহাতারকা দলের দর্পচূর্ণ করে ওভালে বিজয়োৎসব করেছিল সরফরাজ়ের পাকিস্তান। যশপ্রীত বুমরার ‘নো’ বলে জীবন পেয়ে ফখর জ়মান শেষ করে দিয়ে যান কোহালিদের স্বপ্ন। সেই জ়মান এই দলেও আছেন। সেই সঙ্গে বাবর আজ়মের মতো প্রতিভাসম্পন্ন ব্যাটার, যাঁকে বলা হচ্ছে কোহালিকে পাকিস্তানের উত্তর। ঠিক যে ভাবে এক সময় ইমরান বলেছিলেন, ইনজ়ামাম-উল-হক হচ্ছে সচিন তেন্ডুলকরের ভারতকে পাকিস্তানের উত্তর।
বাবর বনাম বুম বুম বুমরা উত্তেজক দ্বৈরথ হতে যাচ্ছে। শাহিন শাহ আফ্রিদির মতো বাঁ-হাতি পেসার আছেন। যাঁর ইয়র্কার মনে করাচ্ছে পাক বোলিংয়ের ‘টু ডব্লিউ’ ওয়াসিম-ওয়াকারকে। রোহিত-রাহুল ওপেনিং জুটিকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেন শাহিনরা। এর সঙ্গে যোগ করতে হবে আইপিএলে ব্রাত্য থাকা, সম্প্রতি নিউজ়িল্যান্ডের সফর বাতিল করে দেশে ফিরে যাওয়া, ক্ষিপ্ত পাকিস্তানের আঙুল তোলা ভারতের দিকে, নিজেদের দেশে ক্রিকেট খেলতে না পারার যন্ত্রণা। ওহ্, আরও আছে। এই বিশ্বকাপের বিজ্ঞাপন। যেখানে ভারতীয় সমর্থক রীতিমতো কটাক্ষের সুরে পাক সমর্থককে মনে করিয়ে দিচ্ছে, বিশ্বকাপে কখনও তোমরা আমাদের হারাওনি। এক দিকে কোহালির আত্মবিশ্বাসী, হার-না-মানা, আগ্রাসী ভারত। অন্য দিকে, খোঁচা খাওয়া, প্রতিভায় ভরপুর তপ্ত পাকিস্তান। জমজমাট মহারণের অপেক্ষা।
এ দিন একটি ভিডিয়ো খুব ছড়িয়ে পড়েছে টুইটারে। অনুশীলন শেষে সাইডলাইন দিয়ে যাওয়ার সময়ে পাকিস্তানের এক তরুণ ক্রিকেটার শ্রদ্ধাবনত ভাবে আলাপ করছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে। ভিডিয়োর সত্য-মিথ্যা যাচাই করা যায়নি তবে মুহূর্তে আবেগের বলয় তৈরি হয়ে যায় ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে। ‘মেন্টর মাহি’র এমনই দুর্নিবার আকর্ষণ যে, সীমান্তের কাঁটাতারের বাঁধনও উপড়ে যাচ্ছে। দ্বৈরথের আগে ভারত-পাক মৈত্রীর অসাধারণ ছবি।
এক-এক সময় আবার মনে হচ্ছে, হালফিলে কাশ্মীরের বুলেট লাহৌরের লেগস্পিনের চেয়ে বেশি করে চর্চায় থেকেছে। ইসলামাবাদ-দিল্লি তরজা মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে খেলা কভার ড্রাইভের চেয়ে জোরালো শব্দে আছড়ে পড়েছে। মরুশহরে মহারণের আগে বরং মনে করিয়ে দেওয়া যাক, এই শিঙা ফোঁকাফুঁকি আসলে বুলেটের নয়, ব্যাট-বলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy