Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Chetan Sharma

ইডেনে বসেই কি বোর্ডকে ইস্তফাপত্র চেতনের? ক্যামেরাকাণ্ডের আগেও প্রশ্ন ছিল তাঁর মনোনয়নে

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন চেতন শর্মা। বৃহস্পতিবার রঞ্জি ফাইনাল দেখতে ইডেনে এসেছিলেন তিনি। তা হলে কি ইডেন থেকেই ইস্তফাপত্র পাঠালেন তিনি?

Picture of Chetan Sharma

বিসিসিআইয়ের নির্বাচক প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন চেতন শর্মা। ক্যামেরাকাণ্ডে নাম জড়ানোর পরেই ইস্তফাপত্র চেতনের। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:১১
Share: Save:

বৃহস্পতিবার ইডেন গার্ডেন্সে বাংলা বনাম সৌরাষ্ট্র ফাইনালের মাঝে হঠাৎ দেখা গিয়েছিল চেতন শর্মাকে। তখনও তিনি দেশের ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচক প্রধান। আর সেই কারণে ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা প্রতিযোগিতার ফাইনাল দেখতে তিনি আসতেই পারেন। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাও স্বাভাবিক ছিল না। কারণ, তার দু’দিন আগেই একটি ‘স্টিং অপারেশন’-এর জেরে বিতর্কের কেন্দ্রে তিনি। শুক্রবার জানা গেল, বোর্ডকে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন চেতন। তা হলে কি ইডেনে বসেই ইস্তফাপত্র পাঠালেন তিনি?

শুক্রবার অবশ্য ইডেনমুখো হননি চেতন। দুপুরের দিকে তাঁর আসার কথা রয়েছে। তিনি আসবেন কি না তা নিশ্চিত নয়। আবার তিনি কলকাতা ছেড়েছেন কি না, তা-ও জানা যায়নি। সেই কারণেই মনে করা হচ্ছে, কলকাতা থেকেই বোর্ডকে ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন অন্যতম বিতর্কিত এই নির্বাচক প্রধান। বৃহস্পতিবার তিনি যখন ইডেনে বসে বাংলা বনাম সৌরাষ্ট্রের খেলা দেখছেন, তখন কি তাঁর মনে ইস্তফার ভাবনা এসেছিল? তার উত্তর অবশ্য চেতনই একমাত্র দিতে পারবেন। তবে যে ভাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানালেন, তাতে ধরে নেওয়া যেতে পারে, আগে থেকেই ভাবনাচিন্তা করছিলেন।

ঠিক কী কারণে চাকরি গেল চেতনের?

কিছু দিন আগে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ‘স্টিং অপারেশন’-এ নাম জড়িয়েছিল চেতনের। সেখানে দলের অন্দরের অনেক গোপন কথা ফাঁস করেছিলেন তিনি। প্রধান নির্বাচক চেতনকে স্টিং অপারেশনের ওই ভিডিয়োয় বলতে শোনা যায়, “সৌরভ এবং বিরাটের মধ্যে একটা ইগোর লড়াই ছিল। সৌরভ এক সময় ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বিরাট সেই সময় নেতা ছিলেন। কে বড়, তা নিয়ে একটা লড়াই ছিল।”

এ ছাড়াও গোপন ক্যামেরায় চেতন দাবি করেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ে চোট পুরোপুরি না সারিয়েই খেলেছিলেন বুমরা। তিনি একটি ইঞ্জেকশন নিয়েছিলেন। ছোটখাটো চোটের ক্ষেত্রে খেলোয়াড়রা অনেক সময় এ রকম ইঞ্জেকশন নেন। বুমরা ব্যথা কমিয়ে খেলতে গিয়ে নিজের চোট আরও বাড়িয়ে ফেলেছেন। যে কারণে এখনও ভুগছেন তিনি। যদিও সেই সব ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।

গোপন ক্যামেরায় মুখ খোলার পর থেকে বিতর্কের কেন্দ্রে চেতন। ক্রিকেট বোর্ড এবং ক্রিকেটারদের নিয়ে এমন মন্তব্য বোর্ড যে ভাল ভাবে নেয়নি, তা নিশ্চিত। বোর্ডের এক সূত্র সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, “এর পর আর কোনও ক্রিকেটার বা নির্বাচকের সঙ্গে হৃদ্যতা থাকবে না সাংবাদিকদের। বিশ্বাসের জায়গাটাই চলে গিয়েছে।” কিন্তু এই প্রথম কি বিতর্কে জড়ালেন চেতন? ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক হওয়ার পর থেকে তো বার বার আলোচনার কেন্দ্রে তিনি।

২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রথম বার নির্বাচক কমিটির প্রধান করা হয় তাঁকে। কিন্তু মাত্র ২ বছর নিজের পদে থাকতে পেরেছিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের ব্যর্থতার পরে ‘শাস্তি’ হিসাবে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে গোটা নির্বাচক কমিটিকে অপসারিত করে বোর্ড। অথচ তার কয়েক মাস পরে যখন বিসিসিআই নতুন নির্বাচক কমিটি নিয়োগ করার জন্য আবেদনপত্র নিচ্ছে, তখন আবার আবেদন করেন চেতন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তাঁকেই আবার কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, আবার নির্বাচক প্রধান করা হয় তাঁকে।

এই ঘটনার পরে বোর্ডের অন্দরের জল্পনা শুরু হয়েছিল যে, কর্তাদের ‘অঙ্গুলিহেলন’-এই আরও এক বার নির্বাচক প্রধান হয়েছেন চেতন। তিনি ছাড়া কিন্তু অপসারিত বাকি নির্বাচকদের কেউ জায়গা পাননি। প্রশ্ন উঠেছিল, তবে কি পুরোটাই লোকদেখানো? আগে থেকেই ঠিক ছিল যে, চেতনই আবার দায়িত্বে ফিরবেন?

কিন্তু পরের বারও নিজের চাকরি ধরে রাখতে পারলেন না চেতন। তার প্রধান কারণ, হয়তো ক্যামেরার সামনে একটু বেশি কথা বলে ফেলা। এমন নয় চেতন যা বলেছেন, তা ভারতীয় ক্রিকেটের অজানা। কিন্তু চেতন ক্যামেরার সামনে কথা বলেছেন। তাঁর কথায় সরাসরি প্রশ্ন উঠেছে ভারতীয় ক্রিকেট এবং ক্রিকেট বোর্ডের উপর। তাই পরের দেওয়াল লিখন স্পষ্ট ছিল। আর কলকাতার ইডেনে বসেই হয়তো সেই দেওয়াল লিখনে সিলমোহর দিয়ে দিলেন চেতন।

অন্য বিষয়গুলি:

Chetan Sharma India Cricket BCCI Eden Gardens
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE