মহম্মদ আজহারউদ্দিন। — ফাইল চিত্র।
মহম্মদ আজহারউদ্দিনকে সমন পাঠাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থায় (এইচসিএ) আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের বিরুদ্ধে। সেই মামলাতেই তাঁকে সমন পাঠিয়েছে ইডি। হায়দরাবাদের ইডি দফতরে তাঁকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অতীতে এইচসিএ-র সভাপতি ছিলেন আজহার। সেই সময়ে তিনি সংস্থার তহবিলের টাকা নয়ছয় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই প্রথম বার তাঁকে সমন পাঠাল ইডি। বৃহস্পতিবারই তাঁকে হাজির হতে বলা হয়েছে।
প্রায় ২০ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ রয়েছে আজহারের বিরুদ্ধে। ডিজ়েল জেনারেটর, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র কেনা এবং উপ্পলের রাজীব গান্ধী ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ক্যানোপি কেনার জন্য ওই টাকা বরাদ্দ ছিল। সেই টাকারই হদিশ নেই।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার সভাপতির পদ থেকে আজহারউদ্দিনকে সরিয়ে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওকে সংস্থার কাজকর্ম দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ক্রিকেট সংস্থার মধ্যে যে দুর্নীতি এবং নির্বাচন নিয়ে সমস্যা চলছিল তা ঠিক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রাওকে। সভাপতি হিসাবে আজহারের বিতর্কিত অধ্যায়ের শেষ হয়েছিল সেখানেই।
হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থা বনাম চারমিনার ক্রিকেট ক্লাবের মামলা যে বেঞ্চ শুনছিল, সেই বেঞ্চের বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কৌল, বিচারপতি মনোজ মিশ্র এবং বিচারপতি অরবিন্দ কুমার জানিয়েছিলেন, নির্বাচন নিয়ে জটিলতা অবিলম্বে শেষ করতে হবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে নির্বাচন সংগঠিত করতে হবে।
বেঞ্চের নির্দেশে বলা হয়েছিল, “যে ডামাডোল সংস্থার অন্দরে চলছে, তা দ্রুত শেষ করে সঠিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হোক, এটাই আমরা চাই। সমস্যা দূর করার জন্যে এই আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাগেশ্বর রাওকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওঁর যা সাহায্য দরকার, তা দিতে হবে। সব খরচ সংস্থাকেই বহন করতে হবে। যদি আদালতের তরফে তিনি কোনও নির্দেশ চান, তা হলে সেই আবেদন করা যাবে।”
তার পর ক্রিকেট প্রশাসন থেকে সরে এসে আবার রাজনীতির ময়দানে নেমেছিলেন আজহার। তেলঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম বার লড়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্বাচনে কংগ্রেস জিতলেও তিনি বাজিমাত করতে পারেননি। তাঁর উপর অনেক আস্থা, আশা-ভরসা রেখেছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু রাজনীতির উইকেটে ব্যর্থই হন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক। ঘরের মাঠে ডাহা ফেল করে তাঁর ‘কব্জির মোচড়’। প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) মগন্তি গোপীনাথের কাছে ‘ক্লিন বোল্ড’ হয়ে যান প্রাক্তন ক্রিকেটার। হারেন ৬৪২১২ ভোটে।
তেলঙ্গানার জুবিলি হিল্স থেকে বিধানসভা নির্বাচনে লড়েন ‘আজ্জু’ (ক্রিকেট দুনিয়ায় এই নামেই পরিচিত তিনি)। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়— এই তিন রাজ্যে যখন গেরুয়া ঝড় চলছিল, তখন কংগ্রেস একমাত্র আশার আলো দেখিয়েছিল তেলঙ্গানা। তবে দলের ‘হাত’ মজবুত হলেও নেতৃত্বকে আশাহত করেন প্রাক্তন অধিনায়ক। ভোটগণনার শুরু থেকে এগিয়ে ছিলেন আজহার। আট রাউন্ড পর্যন্ত এগিয়ে থাকলেও নবম রাউন্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী বিআরএস প্রার্থী গোপীনাথের থেকে দেড় হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে পড়েন। সেই ব্যবধান কমেনি। বরং রাউন্ড যত এগিয়েছে, তত বেড়েছে।
সেই নির্বাচনের পর পরই আজহার জানিয়েছিলেন, এটি তাঁর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লড়াই। একই সঙ্গে জোরগলায় দাবি করেছিলেন, জুবিলি হিল্সের মানুষ তাঁকে খুবই পছন্দ করেন। এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁরা তাঁর পাশেই থাকবেন। কিন্তু আজহারের সেই দাবি ভুল প্রমাণ করে তাঁর নিজের ‘গড়’ই। দল তাঁর উপর আস্থা রাখলেও আস্থা রাখতে পারেননি জুবিলি হিল্সের ভোটদাতারা। ফলে রাজনীতির ময়দানে জয়ের ‘ট্রফি’ তুলে নেন বিআরএস প্রার্থী গোপীনাথ।
পর পর দু’টি লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন আজহার। প্রথম বার ২০০৯ সালে উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ আসনে। দ্বিতীয় বার ২০১৪ সালে রাজস্থানের টঙ্ক-সওয়াই মাধোপুর আসনে। মোরাদাবাদে বাজিমাত করতে পারলেও টঙ্কে কিন্তু হারের মুখ দেখতে হয়েছিল আজহারকে। তার পরে ২০১৮ সালে তেলঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় আজহারকে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে হায়দরাবাদ বা সেকেন্দ্রাবাদ আসনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে জোর জল্পনা চলে। কিন্তু শেষমেশ তিনি ভোটে লড়েননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy