আনন্দবাজারের অফিসে বিশ্বকাপের সঙ্গে ঝুলন গোস্বামী। —নিজস্ব চিত্র।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ট্রফি প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে সোমবার বিকেলে কলকাতায় আনন্দবাজার পত্রিকার দফতরে নক্ষত্র সমাবেশ! খেলার জগতের ঝুলন গোস্বামী, শ্যাম থাপা, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শিশির ঘোষ, দিব্যেন্দু বড়ুয়ারা তো উন্মাদনায় ভাসলেনই। সন্ধ্যার দিকে আনন্দবাজারে এসে বিশ্বকাপের সামনে দাঁড়িয়ে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলেন বাংলার জনপ্রিয়তম চিত্রাভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসি পূর্ব ভারতের সংবাদমাধ্যমের জন্য একমাত্র আনন্দবাজার পত্রিকাকেই নির্বাচিত করেছে বিশ্বকাপের ট্রফি প্রদর্শনের স্থান হিসেবে। সারা ভারতে খুবই নির্বিবাচিত কয়েকটি জায়গায় এই ট্রফি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিকেল চারটে নাগাদ আইসিসি প্রতিনিধিরা ৬ নম্বর প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটে আনন্দবাজার দফতরে আইসিসি বিশ্বকাপ নিয়ে আসতেই সুদৃশ্য সেই ট্রফিকে স্বাগত জানান এবিপি সংস্থার সিইও (চিফ এগজ়িকিউটিভ অফিসার) ধ্রুব মুখোপাধ্যায়। আনুষ্ঠানিক ভাবে এর পরেই ট্রফি রাখা হয় এবিপি সংস্থার কর্মীদের এবং প্রধান অতিথিদের দর্শনের জন্য।
দুপুর থেকেই অবশ্য বাড়তে শুরু করেছিল বিশ্বকাপ আগমন ঘিরে উত্তেজনার পারদ। একই দিনে কলম্বোয় এশিয়া কাপে বিরাট কোহলি এবং কে এল রাহুলের জোড়া শতরানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাপট দেখাচ্ছিল ভারত। তাতে ২০১১-র পরে ফের দেশের মাঠে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ জয়ের প্রার্থনা বাড়তে থাকে।
মেয়েদের বিশ্বকাপে দু’বার ফাইনাল খেলা দেশের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামী সুদৃশ্য ট্রফির সামনে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন। বললেন, ‘‘বিশ্বকাপ মানেই বিশেষ অনুভূতি। অন্য কোনও কিছুর সঙ্গে তার তুলনা চলে না।’’ ভারতীয় দল কি পারবে দেশের মাটিতে ২০১১ বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে? ঝুলন বললেন, ‘‘বিশ্বকাপে ভারতীয় দল এ বার খুবই শক্তিশালী। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিরাট কোহলি ও কে এল রাহুল যে ভাবে ব্যাট করল তা দলকে বাড়তি ভরসা গেবে অবশ্যই। প্রথম চার জন ব্যাটসম্যানের ছন্দ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছিল, তা এই পাকিস্তান ম্যাচের পরে আশা করি শেষ হবে।’’ যোগ করলেন, ‘‘রাহুল প্রত্যাবর্তনের ম্যাচেই অসাধারণ শতরান করল। তবে ভারতীয় দলের তুরুপের তাস হতে পারে হার্দিক পাণ্ড্য। ব্যাটিং বিভাগের মূল স্তম্ভ ও-ই।’’
এখানেই না থেমে ঝুলন আরও বললেন, ‘‘ভারতীয় দলের স্পিন বিভাগ নিয়েও চিন্তা করার কোনও কারণ দেখছি না। কুলদীপ যাদব, অক্ষর পটেল, রবীন্দ্র জাডেজা থাকতে আর কারও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না।’’ এক অনুরাগী তাঁর কাছে স্বাক্ষর চাইতেই ঝুলন বলে উঠলেন, ‘‘এত তারকা থাকতে আমি কেন আগে স্বাক্ষর দেব?’’ সঙ্গে সঙ্গেই শ্যাম, ভাস্কর, শিশির, প্রশান্তরা বলে দিলেন, ‘‘তুমি বিশ্বকাপার। তাই তোমাকেই আগে অটোগ্রাফ দিতে হবে।’’
অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত একমত ঝুলনের সঙ্গে। ঝলমলে ট্রফির পাাশে দাঁড়িয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রীর মন্তব্য, ‘‘আমরা দু’বার বিশ্বকাপ জিতেছি। শেষবার ২০১১ সালে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে। সে বারও ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ হয়েছিল। এ বারও তাই। আমি খুবই আশাবাদী, রোহিত শর্মার হাতে বিশ্বকাপ উঠতে দেখব।’’ এই ভারতীয় দলে আপনার প্রিয় ক্রিকেটার কে? ঋতুপর্ণা বললেন, ‘‘বিরাট কোহলি।’’ যোগ করেন, ‘‘ভারতীয় দলে অনেক ভাল ক্রিকেটার আছে। অনেক নতুন ছেলেরাও এসেছে। সকলে ভাল খেলছে। আমি খুবই আশাবাদী ঘরের মাঠে ফের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন পূরণ করবেন আমাদের ক্রিকেটারেরা।’’ গ্র্যান্ডমাস্টার সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের বায়োপিক ‘দাবাড়ু’-তে অভিনয় করছেন ঋতুপর্ণা। তা মনে করিয়ে দিয়ে যোগ করলেন, ‘‘আমি নিজেও এখন খেলার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছি। সূর্যশেখরের বায়োপিকে অভিনয় করছি। ইডেনে অনেক বার আইপিএলের ম্যাচ দেখতে গিয়েছি। তাই ক্রিকেটও খুব প্রিয়। প্রার্থনা করব ভারত যেন কাপ জেতে।’’
বাংলার রঞ্জি ট্রফিজয়ী দলের অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও একমত ঝুলনের সঙ্গে। বললেন, ‘‘অঘটন না হলে ভারত বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলবেই। আমার মতে শেষ চারে ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। তবে ঘরের মাঠে খেলা হচ্ছে বলে ভারত-ই এগিয়ে থাকবে। এশিয়া কাপ ভারত জিততে পারলে তাদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকবে।’’ সম্বরণ অবশ্য মনে করেন বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে যুজ়বেন্দ্র চহালকে প্রয়োজন ছিল। বললেন, চহাল থাকলে বোলিংয়ে বৈচিত্র বাড়ত।’’ এর পরেই যোগ করেন, ‘‘এত কাছ থেকে বিশ্বকাপের ট্রফি দেখার অনুভূতিটাই আলাদা। ফুটবল, দাবা, ক্রিকেট সর্বস্তরের ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে মিলিত হওয়া বাড়তি পাওনা এবং অত্যন্ত আনন্দের।’’
ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ চলাকালীন ঝুলন ও সম্বরণের বিশ্লেষণ মন দিয়ে শুনছিলেন শ্যাম, ভাস্কর, প্রশান্ত, শিশির ও দিব্যেন্দু। বহু বড় ম্যাচে গোল করা স্ট্রাইকার শিশির বলছিলেন, ‘‘আমি ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটও খেলতাম নিয়মিত। পলাশ নন্দী, অরুণ লাল, অশোক মলহোত্র, শ্রীকান্ত কল্যাণী, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে অনুশীলন করতে দেখেছি। ফুটবলার না হলে হয়তো ক্রিকেটই খেলতাম। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় দল যে ভাবে খেলছে, তাতে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখাই যায়।’’ এর পরেই ঝুলনের দিকে তাকিয়ে শিশিরের সংযোজন, ‘‘ওকে আমি মেয়েদের রিচার্ড হ্যাডলি মনে করি।’’ বাইসাইকেল কিকের নায়ক শ্যাম থাপার কথায়, ‘‘বিশ্বকাপের পাশে দাঁড়ানোর অনুভূতিটাই অন্য রকম। এখানে আসতে পেরে তাই খুব খুশি। তবে সবচেয়ে খুশি হব ভারত বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলে।’’ ঝলমলে বিশ্বকাপে অভিভূত কিংবদন্তি গোলকিপার ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘অসাধারণ অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম। আশা করব, ভারত বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হবে। আমরা সকলে মিলে উৎসব করব।’’
মিডফিল্ড জেনারেল প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ক্রিকেট বিশ্বকাপের ট্রফিকে ঘিরে উন্মাদনা দেখে আমি অভিভূত। খেলা ছেড়ে দেওয়ার এত দিন পরেও সকলে যে ভাবে আমাদের নিয়ে মেতে উঠেছিলেন তা অতুলনীয়। মনে হচ্ছিল এখনও আমরা খেলা ছাড়িনি। ক্রিকেট, ফুটবল থেকে দাবা— সর্বস্তরের ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে অন্য রকম আবহ তৈরি হয়েছিল। আশা করব, বিরাটরা বিশ্বকাপেচ্যাম্পিয়ন হবে।’’
গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বলছিলেন, ‘‘অসাধারণ অনুভূতি। বিশ্বকাপের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সুযোগ সকলে পান না। বিরাট-রোহিতদের জন্য বিশ্বকাপ জয়ের শুভেচ্ছা রইল।’’ আনন্দবাজার দফতরে বিশ্বকাপ প্রদর্শনীতে এসেছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার ও বর্তমানে বাংলার সহকারী কোচ সৌরাশিস লাগিড়ী, প্রাক্তন বাংলা ক্রিকেটার শিবশঙ্কর পাল। ছিলেন টলিউডের সাহেব চট্টোরাধ্যায়ও। ছিলেন অভিষেক ডালমিয়া। সকলের মুখে একটাই কথা শোনা গেল। ১৯ নভেম্বর আমদাবাদে এই কাপটাই যেন ওঠে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের হাতে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy