সফল: রাজা বিরাটের চাণক্য ছিলেন শাস্ত্রী। সেই জুটি অতীত। ফাইল চিত্র।
বিরাট কোহলির টেস্ট নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন রবি শাস্ত্রী। আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় সোমবার সদ্য প্রাক্তন ভারতীয় কোচ বলে দিলেন, টেস্ট অধিনায়কত্বের বিচারে কোহলির আশেপাশেও কাউকে দেখতে পাচ্ছেন না।
শাস্ত্রীর কথায়, ‘‘যে রকম উচ্চ মান টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে বিরাট তৈরি করে দিয়ে গেল, তাতে একটাই কথা বলব। লাল বলের অধিনায়কত্বে কিং কং কোহলি। অন্য কাউকে তুলনাতেও আনতে পারছি না।’’ অধিনায়ক কোহলির আবির্ভাব এবং উত্থান তিনি হেড কোচ থাকাকালীন। অস্ট্রেলিয়ায় মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যখন টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা করে চমকে দিলেন ড্রেসিংরুমকে, ভারতীয় দল র্যাঙ্কিংয়ে সাত নম্বরে পড়ে ধুঁকছে। ডানকান ফ্লেচার কোচ। সদ্য টিম ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দিয়েছেন শাস্ত্রী। সেখান থেকে নেতৃত্বের ব্যাটন হাতে তুলে নিয়ে দলকে ৪২ মাস ধরে এক নম্বরে রেখে গিয়েছেন বিরাট। সব সময় স্নেহশীল অভিভাবকের ভূমিকায় পাশে পেয়েছেন শাস্ত্রীকে। রাজা বিরাটের চাণক্য ছিলেন তিনি। বলে ফেলছেন, ‘‘এটাকে স্বপ্নের যাত্রা না বললে কোনটাকে বলব? আর শুধু আমি কেন? বিশ্ব ক্রিকেটে যে কাউকে জিজ্ঞেস করুন। সকলে একই কথা বলবে। টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে প্রভাবশালী অধিনায়কের নাম কোহলি।’’
লাল বলে যেমন বিরাটকে বেছে নিচ্ছেন এক নম্বর হিসেবে, তেমনই তাঁর চোখে সাদা বলে কে? শাস্ত্রীর কথায়, ‘‘সাদা বলে দু’টো নাম সবার উপরে থাকবে। প্রথমে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। যার ট্রফি ক্যাবিনেটে সবই আছে। দেশের হয়ে দু’টো বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, আইপিএল দলের হয়ে একাধিক খেতাব। দ্বিতীয় নাম কপিল দেব, যার নেতৃত্বে আমরা প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিলাম।’’
মাত্র তিন-সাড়ে তিন মাসে নাটকীয় ভাবে সব ধরনের ক্রিকেট থেকেই সরে গেলেন অধিনায়ক কোহলি। তাঁর কী মনে হচ্ছে? কী ভাবে সব রাতারাতি পাল্টে গেল? শাস্ত্রী বললেন, ‘‘গত দু’মাস আমার সঙ্গে বিরাটের কথা হয়নি। তবে কথা হলে নিশ্চয়ই জানতে চাইব, দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে ঠিক কী ঘটেছিল? কে ওর সঙ্গে কথা বলেছে আর কে বলেনি?’’ যোগ করলেন, ‘‘সত্যিটা জানতে চাই। কী ঘটল? প্রাক্তন কোচ হিসেবে সত্যিটা জানতে চাওয়ার অধিকার আমার আছে।’’
সাত বছর ধরে তাঁদের জুটি নানা শৃঙ্গ জয় করেছে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম বার অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে টেস্ট সিরিজ় জয়। ইংল্যান্ডে ২-১ এগিয়ে থাকা অবস্থায় কোভিড আতঙ্কে ম্যাঞ্চেস্টারে টেস্ট স্থগিত হয়ে যায়। অ্যাডিলেড, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন থেকে লর্ডস, ওভাল সর্বত্র রাজ করেছে এই ভারতীয় দল। অ্যাডিলেডে ৩৬ অলআউটের পরেও কোহলিকে ছাড়া, প্রধান দলের একাধিক ক্রিকেটার চোট পাওয়া অবস্থাতেও অজিঙ্ক রাহানের নেতৃত্বে গত বছর অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে এসেছে ভারত। ‘‘এই তো অ্যাশেজ হয়ে গেল। অস্ট্রেলিয়ায় অন্য দেশগুলোর অবস্থা দেখলে নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারছেন, নিজেদের দল এই সব দেশে কী ধরনের ক্রিকেট খেলে এসেছে,’’ ভারতীয় মিডিয়ার প্রতি কিছুটা কটাক্ষের সুরেই যেন হুল ফোটালেন শাস্ত্রী।
এর পরেই ফিরলেন বিরাটে। ‘‘অধিনায়ক হিসেবে বিরাটের সবচেয়ে বড় অবদান, বিদেশের মাঠে দুঃসাহসিক পাইলট হয়ে ওঠা। ভয়ডর বলে কিছু দেখেছেন ওর চোখে কখনও?’’ সম্ভ্রম মেশানো প্রশ্ন করেন শাস্ত্রী। যোগ করেন, ‘‘এই যে সারা পৃথিবীতে টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে যে সম্মান ও আদায় করে নিয়েছে, তা ক’জন ক্রিকেটার পেরেছে? সেটা পেরেছে বিদেশে ডাকাবুকো পারফরম্যান্স করার জন্যই।’’
আগ্রাসী অধিনায়ক, আগ্রাসী কোচ। শাস্ত্রী মেনে নিচ্ছেন, ‘‘বিরাটের দর্শন, মনোভাবের সঙ্গে আমার অনেকটাই মিল রয়েছে। তাই হয়তো সম্পর্কটা আরও নিবিড় হয়েছিল।’’ কী ছিল তাঁদের মিশন? প্রাক্তন অলরাউন্ডারের জবাব, ‘‘বিদেশে টেস্ট খেলতে গিয়ে আমরা বার্তা দিতে চেয়েছিলাম, দেশটা যতই তোমাদের হোক, আমরা নিজেদের আগ্রাসী ক্রিকেট ছেড়ে নড়ছি না। আমরা এখানে জিততে এসেছি। জয়ের নেশায় ছুটতে গিয়ে যদি দু’একটা ম্যাচ হারতে হয়, ঠিক আছে।’’ দ্রুত যোগ করলেন, ‘‘আর এই মনোভাবের সবচেয়ে বড় পতাকাবাহক হয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে অধিনায়ক বিরাট।’’
শাস্ত্রী কিছুটা হতাশ দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ় হার দেখে। নিশ্চয়ই তিনি আশা করেছিলেন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে এত ভাল করে আসার পরে ডিন এলগারদের দেশে শেষ সীমান্ত জয় সম্পূর্ণ হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ় না জেতার অধরা স্বপ্ন পূরণ হবে। তবে টিম থেকে দূরে বসে সিরিজ় হার নিয়ে মন্তব্য করতে চান না।
অধিনায়ক বিরাটের ট্রফি ক্যাবিনেটে বিশ্বকাপ বা আইসিসি খেতাব না থাকাটা যে যন্ত্রণার, তা অবশ্য স্বীকার করে নিচ্ছেন। ‘‘বিরাটের অধিনায়কত্বে সাদা বলেও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ়ে নানা কীর্তি রয়েছে। শুধু বিশ্বকাপ বা আইসিসি ট্রফি নেই, সেটা একটা অপূর্ণতা অবশ্যই।’’ বলেই তাঁর সংযোজন, ‘‘তবে ভারত অধিনায়কদের মধ্যে কারই বা বিশ্বকাপ আছে? শুধু তো দু’টো নাম। কপিল দেব আর ধোনি! বাকিরা কি সবাই খারাপ অধিনায়ক?’’
বিরাট হঠাৎ কেন সব ছেড়েছুড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, জানেন না। তবে সাত বছর কাটিয়ে আসা অধিনায়ককে সেলাম করছেন অন্য কারণে। ‘‘কোনও দলকে অসম্মান করছি না। কিন্তু নয়, দশ আর জ্যাক আসছে ভারতে (এর পর দেশের মাটিতে ভারত খেলবে র্যাঙ্কিংয়ে শেষের দিকে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে)। কোহলির টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে জয়ের শতকরা হার লাফিয়ে বাড়তে পারত। কিন্তু সে সব পরিসংখ্যানের কথা না ভেবে ছেড়ে চলে গেল।’’
অধিনায়ক হিসেবে ৬৯টি টেস্টের ৪০টিতে জিতেছেন বিরাট। বিদেশে ১৬টি জিতেছেন, যা আর কারও নেই। জয়ের শতকরা হার প্রায় ষাট শতাংশ। শাস্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘সিক্সটি পার্সেন্ট মানে জানেন তো? ফার্স্ট ক্লাস! যখন কেউ ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে আসে, তার পাশে ৩৫ শতাংশ, ৪০ শতাংশ, ৪৫ শতাংশের মার্কশিট নিয়ে কী করে আর কথা বলা যায়?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy