চ্যাম্পিয়ন: ৫২ রানে অপরাজিত থেকে ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ দিলেন স্টোকস। ছবি: পিটিআই।
তিন-চার বছর ধরে ধীরে ধীরে নিজেদের একটা উচ্চতার দিকে নিয়ে চলেছে ইংল্যান্ড। সেটা যেমন লাল বলের ক্ষেত্রেও ঠিক, সাদা বলের ক্ষেত্রেও। টেস্ট ক্রিকেটে তাও ইংল্যান্ডের একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার জায়গা আছে। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে নির্দ্বিধায় মেনে নিতে হবে, ইংল্যান্ডই রাজা। সেটা শুধু একইসঙ্গে ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিজেদের দখলে রাখার জন্য নয়। যে ভাবে গত কয়েক বছর ওরা এই ফর্ম্যাটটা শাসন করছে, সেটা দেখেই এ কথা বলা যায়।
কোথায় ইংল্যান্ড বাকি দলগুলোকে পিছনে ফেলে দিল? কয়েকটা কারণের কথা আলাদা করে বলতেই হবে।
এক, ঠিক পথে একটা দল তৈরি করা। অইন মর্গ্যানের হাত ধরে ইংল্যান্ডের সাদা বলের ক্রিকেটে বিপ্লব শুরু হয়েছিল। নির্বাচকেরা বিশেষ নজর দিয়েছিল সাদা বলের ক্রিকেটের উপরে। এও শোনা যেত, মর্গ্যানের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিয়েই সে দেশে সাদা বলের ক্রিকেটকে প্রাধান্য দেওয়া হত। ১৮-২০ জন ক্রিকেটারকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। তার পরে সেখানে আরও কিছু নতুন নাম জোড়া হয়েছে। ফাইনালে খেলা ফিল সল্ট, হ্যারি ব্রুক যেমন। একটু পিছিয়ে গেলে লিয়াম লিভিংস্টোন, স্যাম কারনের উত্থানের কথাও বলতে হবে। দারুণ রিজ়ার্ভ বেঞ্চ হওয়ার কারণে জনি বেয়ারস্টো এবং শেষ দুই ম্যাচে মার্ক উড, দাভিদ মালান না খেললেও সমস্যা হয়নি জস বাটলারদের।
দুই, আগ্রাসী এবং বুদ্ধিমান ক্রিকেট। এটাও মর্গ্যানের সৃষ্টি করা মন্ত্র। শুরু থেকেই আগ্রাসন। প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে দেওয়া। সেই আগ্রাসনের মন্ত্র বাটলারও ধরে রেখেছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে স্মার্ট ক্রিকেট। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলা। যেটা রবিবারের ফাইনালে দেখা গেল স্যাম কারেন-বেন স্টোকসের খেলায়। মেলবোর্নের পিচে ঠিক কোন লেংথে বল ফেললে ব্যাটসম্যান সমস্যায় পড়বে, বুঝে নিতে একটুও দেরি হয়নি কারেনের। ফাইনালে ১২ রানে তিন উইকেট! ম্যাচের সেরার পুরস্কারের জন্য এই তরুণ অলরাউন্ডারকে ছাড়া আর কাউকে ভাবা যায় না।
তিন, বিগ বেনের উপস্থিতি। বেন স্টোকস হল এমন এক জন ক্রিকেটার, যে বড় মঞ্চে সব সময় নিজেকে মেলে ধরতে পারে। সেটা ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনাল হোক কী অ্যাশেজ় টেস্ট কী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এ দিনও সেটাই দেখা গেল। ইংল্যান্ড একটা সময় বেশ চাপে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে ম্যাচটা বার করে নিয়ে গেল স্টোকস। একটু চরিত্রবিরোধী ইনিংস খেলল। আস্কিং রেট বেশি না হওয়ার কারণে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিল। তার পরে সুযোগ বুঝে হাত খুলল। ২০১৬ সালে ইডেনে চার ছক্কা খেয়ে বিশ্বকাপ হাতছাড়া করেছিল স্টোকস। মেলবোর্নে শাপমুক্তি ঘটল।
এই বিশ্বকাপ সাফল্যের জন্য ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের পাশাপাশি দলের সাপোর্ট স্টাফকেও কৃতিত্ব দিতে হবে। হোমওয়ার্কটা দারুণ হয়েছিল ইংল্যান্ডের। এই ফাইনালের কথাই ধরা যাক। মহম্মদ রিজ়ওয়ান স্কোয়ার অব দ্য উইকেট খেলতে ভালবাসে। ইংল্যান্ডের পেসাররা ওকে ফুল লেংথ বল করে গেল। কারেনের সে রকমই একটা বল ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটে টেনে এনে বোল্ড হল রিজ়ওয়ান।
বাটলারের অধিনায়কত্বও দারুণ হয়েছে। ফিল্ডিং সাজানো থেকে বোলিং পরিবর্তনে যা ধরা পড়ছে। মেলবোর্ন বিশাল মাঠ। এখানে ঠিক জায়গায় ফিল্ডার না রাখলে ক্যাচ ধরা কঠিন। বাটলার ওর ডিপ মিউইকেট-লংঅনের ফিল্ডারকে ১৫ গজ ভিতরে রেখেছিল। ওখানেই কিন্তু গোটা তিনেক ক্যাচ গেল।
পাশাপাশি আদিল রশিদকে দারুণ সময় ব্যবহার করল। বাবর একটু সমস্যায় পড়ে ইংল্যান্ডের এই লেগস্পিনারের বিরুদ্ধে। এ দিন গুগলিটা বুঝেছিল একেবারে শেষ মুহূর্তে। তত ক্ষণে স্ট্রোক খেলে ফেলেছে আর ক্যাচ চলে গিয়েছে বোলারের কাছে। রশিদের ওই ওভারটাই কিন্তু ম্যাচ ঘুরিয়ে দিল। ১২ নম্বর ওভারে মেডেন উইকেট নিয়ে চলে গেল রশিদ। ভারত যে ভুলটা করেছিল, সেটা ইংল্যান্ড করেনি। অর্থাৎ, লেগস্পিনারকে বাইরে বসিয়ে রাখা। ২২ রানে দু’উইকেট নেওয়া রশিদের স্পেলও কিন্তু এই ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা ঠিক করে দেয়।
পাকিস্তানের দুর্ভাগ্য, ওই রকম একটা সময়ে শাহিন আফ্রিদি চোট পেয়ে গেল। ১১টা বল তখনও বাঁ-হাতি পেসারের বাকি ছিল। ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেট তোলা আফ্রিদি পুরো চার ওভার বল করলে ম্যাচ আরও জমত। ওই সময় অনিয়মিত অফস্পিনার ইফতিকার আহমেদকে বল দেওয়া ছাড়া বাবরের কোনও রাস্তা ছিল না। একটা ছয়, একটা চার মেরে খেলা ঘুরিয়ে দিল স্টোকস।
এক মাসের ক্রিকেট-দ্বৈরথ শেষে একটা কথা বলতেই হবে। যোগ্য দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy