ফুরফুরে: ইংল্যান্ডের অনুশীলনে রুট।
‘বাজ়বল’ মানে শুধুই মারকাটারি ব্যাটিং নয়। প্রথাগত চিন্তা-ভাবনা থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু করে দেখানোর তাগিদকে ‘বাজ়বল’ বলছে ইংল্যান্ড। প্রত্যেক দিন যার নতুন নতুন উদাহরণ দেখা যায় ইংল্যান্ডের অনুশীলনে।
বিশাখাপত্তনমে শেষ দু’দিন ধরে ইংল্যান্ড অনুশীলনের নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা আগে চলে আসছেন জো রুট। বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানকে ব্যাট করতে দেখা যায় বাঁ-হাতে।
অনেকেরই হয়তো বিশ্বাস হচ্ছে না। হওয়ার কথাও নয়। ডান হাতে ব্যাট করে টেস্টে যাঁর ১১,৪৪৭ রান, তিনি কেন নেটে বাঁ-হাতে ব্যাট করছেন?
ইংল্যান্ড শিবিরের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, স্পিনারদের লাইন ও লেংথ নষ্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে রুটের। পাশাপাশি, ফিল্ডিং সাজানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করে দিতে চান তিনি। ২০২২-এর ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাওয়ালপিন্ডিতে বাঁ-হাতে কয়েকটি বল খেলেছিলেন রুট। ঘূর্ণি পিচে বাঁ-হাতে ব্যাট করে মেরেছিলেন রিভার্স সুইপ। যা ডান হাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর সুইপ শটেরই মতো।
বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের অনুশীলন শুরু হওয়ার আগে স্থানীয় বোলারদের নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা বাঁ-হাতে ব্যাট করেন রুট। মারছিলেন সুইপ এবং রিভার্স সুইপ।
ইংল্যান্ড শিবিরের কেউ কেউ বলছেন, বিশাখাপত্তনমে ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে এ ভাবেই স্পিনারদের বিভ্রান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়কের। বাঁ-হাতে তাঁকে ব্যাট করতে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু কি থাকবে?
প্রথম টেস্টে হায়দরাবাদে সুইপ মারতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগ অঞ্চলে ক্যাচ তুলে ফিরে যান রুট। এ দিন এক স্থানীয় স্পিনারকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তুমি কী ফিল্ড সাজাবে?’’ স্থানীয় সেই বাঁ-হাতি স্পিনার জানিয়ে দেন, তাঁর জন্য রাখা হবে শর্ট ফাইন লেগ। অর্থাৎ ডান হাতি ব্যাটসম্যানের শর্ট ফাইন লেগ। তা শুনেই রুট বাঁ-হাতে ব্যাট তুলে নেন। এবং সেই বোলারকে পর পর সুইপ মারতে থাকেন (ডান হাতি ব্যাটসম্যানের রিভার্স সুইপ)। শর্ট ফাইন লেগের ফিল্ডারের গুরুত্ব কমানোর জন্যই এই ভাবে নিজেকে তৈরি করছেন রুট। বুধবার দেখে মনে হয়েছিল, রিভার্স সুইপকে আরও ধারালো করার জন্যই হয়তো এই অনুশীলন। কিন্তু ইংল্যান্ড শিবির যে অন্য কথা বলছে। রুটের বাঁ-হাতে ব্যাট করার সম্ভাবনা তারা উড়িয়ে দিচ্ছে না।
শুধুমাত্র বোলারের লাইন-লেংথে সমস্যা সৃষ্টি করার জন্যই নয়। ডান হাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে যদি তিনি বোঝেন তাঁর গুড লেংথ স্পটে বেশি ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা হলে স্টান্স পরিবর্তন করে নিতেই পারেন। ইংল্যান্ডের সহকারী কোচ মার্কাস ট্রেসকোথিকের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনার পরেই নাকি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রুট। ট্রেসকোথিক নিজেও আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার ছিলেন। বরাবরই স্পিন ভাল খেলতেন। প্রাক্তন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের পরামর্শেই কি রুটের এই পরিবর্তন?
পাকিস্তানের স্পিনারদের বিরুদ্ধে বাঁ-হাতে ব্যাট করার সাহস দেখানো এক রকম। কিন্তু ভারতের স্পিন বোলিং বিভাগ বিশ্বমানের। আর. অশ্বিন, অক্ষর পটেল, কুলদীপ যাদব অথবা ওয়াশিংটন সুন্দরের বিরুদ্ধেও কি এই সাহস দেখাবেন রুট? অবশ্য প্রথম ইনিংসে হায়দরাবাদের ঘূর্ণি পিচে ১৯০ রানে পিছিয়ে থাকা ইংল্যান্ডও যে জিততে পারে, তা কে-ই বা ভেবেছিলেন?
রুটের উপরে সবচেয়ে বেশি ভরসা করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। রুট যখন অধিনায়ক ছিলেন, তখন স্টোকসকে দলের এক নম্বর অলরাউন্ডারের সম্মান দিতেন। কিন্তু হাঁটুর সমস্যায় বল করা ছেড়ে দিয়েছেন স্টোকস। তাঁর নেতৃত্বে দলের সবচেয়ে বড় অলরাউন্ডার হয়ে উঠেছেন রুট। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘রুটকে আমি আগেও বলেছিলাম, অধিনায়ক থাকাকালীন বোলার হিসেবে ও নিজেকে বেশি ব্যবহার করেনি। হায়দরাবাদে চার উইকেট পাওয়ার পরে ওকে বলি, ‘বোলার হিসেবে তোমাকে তুলে ধরার শপথ নিয়েছিলাম। সিদ্ধান্তটা ভুল নয়।’ রুট খুব খুশি হয়েছিল।’’
বোলার রুট প্রথম টেস্টে সফল হয়েছে। এ বার ব্যাটসম্যান রুটের নিজেকে মেলে ধরার পালা। নতুন কোনও চমক কি অপেক্ষা করছে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy