রাকেশ তিওয়ারি। —ফাইল ছবি
একের পর এক অভিযোগ ঘিরে জর্জরিত বিহার ক্রিকেট। অভিযোগের সিংহভাগই বিহার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএ) সভাপতি রাকেশ তিওয়ারির বিরুদ্ধে। দল থেকে কোচ নির্বাচন সব কিছুই নাকি নিজের ইচ্ছা মতো করতে বাধ্য করেন বিহার রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ। তাঁর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে সরব অনেকেই।
রাজ্য সংস্থায় বিতর্কের প্রভাব পড়েছে বাইশ গজের ফলাফলেও। এ বছর রঞ্জি ট্রফিতে একটিও ম্যাচ জিততে পারেনি বিহার। শুধু তাই নয়, পয়েন্ট টেবলে নাগাল্যান্ড, মণিপুর, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশের মতো নতুন দলগুলিরও নিচে শেষ করেছে বিহার। অরুণাচল প্রদেশের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে বিহারের প্রথম একাদশে আটটি পরিবর্তন হয়। অভিযোগ বিসিএ সভাপতির নির্দেশ মতোই পরিবর্তন হয় প্রথম একাদশে।
সংস্থার ফাটল প্রকাশ্যে আসে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অনূর্ধ্ব ১৯ প্রতিযোগিতায়। বিহার থেকে দু’টি দল নথিভুক্ত করার জন্য পাঠানো হয়। দু’পক্ষই নিজেদের বিসিএ-র প্রকৃত প্রতিনিধি বলে দাবি করে। শেষ পর্যন্ত রাকেশের পছন্দের দলই খেলার সুযোগ পায়।
বিহারের প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটার এবং এখনকার কোচ তরুণ কুমার এই অরাজকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, চলতি মরসুমে বিহারের হয়ে মোট ৬২ জন ক্রিকেটার খেলেছেন সিনিয়র পর্যায়। তিন বার দলের কোচ বদল হয়েছে। এক বার বদল হয়েছে নির্বাচকমণ্ডলী। তরুণের অভিযোগ, ‘‘রাকেশ প্রায় দিনই বিভিন্ন ক্রিকেটারকে দলে নেওয়ার অনুরোধ করতেন। ওঁর প্রস্তাবিত ক্রিকেটাররা সকলেই কোনও আমলা, নেতা, মন্ত্রী বা বড় ব্যবসায়ীর ছেলে। ওঁর এমন নির্দেশ মানতে না পারায় আমাকে বহিষ্কার করা হয়। সৈয়দ মুস্তাক আলি প্রতিযোগিতায় এমন কয়েক জন ক্রিকেটার খেলেছে, যারা কখনও ক্লাব ক্রিকেটও খেলেনি।’’
সোচ্চার হয়েছেন আর এক প্রাক্তন ক্রিকেটার নিখিলেশ রঞ্জন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাকে বলা হয় ক্রিকেটারদের দক্ষতা দেখার কোনও দরকার নেই। কার ছেলে সেটাই তাদের যোগ্যতা। এই নির্দেশের প্রতিবাদ করায় বিজয় হজারে ট্রফির মধ্যেই আমাকে রাজ্য দলের কোচের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। আমার সহকারী ছিল প্রবীণ কুমার। তৃতীয় ম্যাচের আগেই ওকে প্রধান কোচ করে আমাকে সহকারী করে দেওয়া হয়। এর পর চতুর্থ ম্যাচ শুরুর আধ ঘণ্টা আগে দলের ম্যানেজার আমাকে ডেকে হোটেলে ফিরে যেতে বলেন। জানিয়ে দেন বিহার দলে আমার কোনও দরকার নেই। আমি যেন ব্যাগ নিয়ে বাড়ি চলে যাই।’’
বিহারের আর এক ক্রিকেট কর্তা কুমার অরবিন্দের দাবি, ‘‘দল নির্বাচনের আগে নির্বাচকদের নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠাতেন সভাপতি। জানিয়ে দিতেন কাদের দলে রাখতে হবে। ওই নির্দেশ মানা সম্ভব ছিল না। দলের তালিকায় সই না করায় আমাকেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।’’ করোনার দোহাই দিয়ে বিজয় হজারে ট্রফিতে ২৫ জনের দল করে বিহার। সঙ্গে স্ট্যান্ডবাই তালিকায় রাখা হয় আরও ১৫ জনকে।
আগেই রাকেশের বিরুদ্ধে দিল্লির সংসদ মার্গ থানায় শ্লীলতাহানি এবং ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেন নয়ডার একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার এক কর্মী। মহিলাদের একটি টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতার বিপণনের দায়িত্ব ওই সংস্থাকে দিয়েছিল বিসিএ। সেই সংস্থার টাকা আটকে রেখেছিলেন রাকেশ। দিল্লির একটি পাঁচ তারা হোটেলে সংস্থার এক মহিলা ডিরেক্টরকে টাকা দেওয়ার জন্য ডাকেন রাকেশ। সে সময় শ্লীলতাহানি এবং ধর্ষণের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ।
রাকেশ অবশ্য সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, রঞ্জি ট্রফির শেষ ম্যাচের আগেই আমাদের সব আশা শেষ হয় যায়। তাই কয়েক জন ক্রিকেটারকে দেখে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল কোচ এবং অধিনায়ককে। বিহারে প্রচুর মানুষ। সমাজের বিভিন্ন স্তর। সকলেই নিজেদের প্রতিনিধিকে দেখতে চান দলে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’’ শ্লীলতাহানি এবং ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেছেন। রাকেশের বক্তব্য, ‘‘দিল্লি পুলিশ তদন্ত করছে। আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাননি ওঁরা। ওই সংস্থাই বিসিএ-র সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করেছিল। অভিযোগকারী মহিলাই এখন জামিনে রয়েছেন সেই মামলায়।’’
রাকেশ বিহার বিজেপির প্রথম সারির নেতা। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। দলের একাধিক শীর্ষ নেতার ঘরে তাঁর অবাধ যাতায়াত। এই রাজনৈতিক সংযোগের সুবাদেই নাকি তিনি যা ইচ্ছে তাই করে চলেছেন বলে অভিযোগ বিহারের ক্রিকেট কর্তাদের একংশের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy