এক দিনের বিশ্বকাপের ট্রফি। —ফাইল চিত্র।
বিশ্বকাপের প্রায় প্রতিটি ম্যাচের টিকিটই নাকি শেষ। অনলাইনে টিকিট কাটতে গেলে এমনই অভিজ্ঞতা হচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। অথচ কিছু ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে আবার নতুন করে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে অনলাইনে। ‘হাউসফুল’ বা ‘সোল্ড আউট’ ঘোষণা করে দেওয়ার পরেও কী করে বিক্রি করা হচ্ছে টিকিট? যে সব ম্যাচের টিকিট আগেই শেষ বলে জানানো হয়েছে, সেই সব ম্যাচেও দেখা যাচ্ছে গ্যালারির বড় অংশ ফাঁকা। স্বভাবতই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। হতাশ সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরা।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড এবং নিউ জ়িল্যান্ড। সেই ম্যাচের বেশ কিছু দিন আগেই অনলাইনে জানিয়ে দেওয়া হয়, সব টিকিট শেষ। আবার খেলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে জানানো হয়, কিছু টিকিট রয়েছে। সঙ্গে স্টেডিয়ামের গ্যালারির একটি ছবি দেওয়া হয়েছিল। গ্যালারির ৮০ শতাংশের বেশি অংশ ধূসর করে দিয়ে জানানো হয়েছিল, সেই আসনগুলির টিকিট আগে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। অথচ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে স্টেডিয়ামের ৮০ শতাংশের বেশি আসন ফাঁকা পড়ে ছিল। এমন ঘটনা ঘটেছে একাধিক ম্যাচের ক্ষেত্রে। এমনকী দিল্লিতে ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচেও গ্যালারির বেশ কিছু অংশ ফাঁকা ছিল। অর্থাৎ, টিকিট বিক্রি নিয়ে আইসিসি বা বিসিসিআইয়ের দাবির সঙ্গে বাস্তবের ছবি মিলছে না। এখানেই উঠছে প্রশ্ন। কোথায় যাচ্ছে বিশ্বকাপের হাজার হাজার টিকিট? সব টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ার দাবি করার পরেও কী ভাবে নতুন করে টিকিট বিক্রি হচ্ছে? বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রি নিয়ে ক্রিকেট কর্তাদের উপর ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। পরের পর ম্যাচে একই ঘটনার পরেও কোনও সদুত্তর নেই আইসিসি বা বিসিসিআই কর্তাদের কাছে। অনলাইনে টিকিট বিক্রির আইসিসির সহযোগী সংস্থারও মুখ বন্ধ। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
বোর্ড কর্তাদের দাবি ছিল, উদ্বোধনী ম্যাচের ৩০ থেকে ৪০ হাজার টিকিট বিতরণ করা হয়েছে মহিলাদের। সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হওয়ার উপলক্ষে মহিলাদের বিনামূল্যে টিকিট দেওয়ার দাবি করা হয়েছিল স্থানীয় বিজেপি নেতাদের তরফে। অথচ ইংল্যান্ড-নিউ জ়িল্যান্ড ম্যাচে সেই ছবিও দেখা যায়নি।
টিকিট বিক্রি শুরু নিয়েও বিসিসিআইয়ের ঘোষণা ঘিরে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল বলে অভিযোগ ক্রীড়াপ্রেমীদের। প্রথমে জানানো হয়েছিল ২৭ জুন থেকে টিকিট বিক্রি হবে। পরে আবার জানানো হয়েছিল ৯ অগস্ট থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ শুরুর ৪২ দিন আগে ২৩ অগস্ট থেকে শুরু হয়েছিল অনলাইনে টিকিট বিক্রি। তা-ও প্রস্তুতি ম্যাচ এবং ভারতের ম্যচগুলি বাদে। ৩১ অগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে বিক্রি করা হয়েছে ভারতের ম্যাচগুলির টিকিট। সেমিফাইনাল, ফাইনালের টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে। ক্রিকেটপ্রেমীদের অভিযোগ, বিশ্বকাপের টিকিট নিয়ে প্রথম থেকেই পরিকল্পনাহীনতা বা অস্বচ্ছতা চলছে। অনলাইনে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য কত সংখ্যক টিকিট দেওয়া হচ্ছে, তা জানানো হচ্ছে না।
বিসিসিআইয়ের তরফে বলা হয়েছে, বিশ্বকাপের একটা বড় অংশের টিকিট সংরক্ষিত। স্পনসর, বিভিন্ন অর্থনৈতিক সহযোগী, আইসিসি এবং বিসিসিআইয়ের অতিথি, প্রাক্তন ক্রিকেটার, বিভিন্ন অনুমোদিত সংস্থা এবং ক্লাব, সংস্থার সদস্য, স্থানীয় পুলিশ এবং সরকারের জন্য বরাদ্দ রয়েছে টিকিট। যেমন কলকাতার ইডেন গার্ডেনের আসনসংখ্যা ৬৫ হাজার। সাধারণ মানুষের জন্য থাকছে ৩২ হাজার টিকিট। আবার চিপকের ৩৭ হাজার আসনের মধ্যে ১৩ হাজার টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের। আমদাবাদের ১ লক্ষ টিকিট রয়েছে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য। তা ছাড়া সাধারণ মানুষের জন্য টিকিটও ছাড়া হচ্ছে ধাপে ধাপে। সংশ্লিষ্ট ম্যাচের দিন বিক্রির জন্যও সরিয়ে রাখা হচ্ছে টিকিটের একটা অংশ। অনলাইনে বিক্রির সংস্থা হাতে যে সংখ্যক টিকিট পাচ্ছে, তার ভিত্তিতে জানাচ্ছে বিক্রি হয়ে যাওয়ার কথা।
বোর্ডের এই তথ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। দাবি অনুযায়ী, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের এই ১ লক্ষ টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। অথচ সে দিন মাঠে ছিলেন মাত্র কয়েক হাজার সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমী। তবে কোথায় যাচ্ছে বিশ্বকাপের টিকিট? ভারতের ম্যাচ বাদেও অনেক ম্যাচের টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না। বলা হচ্ছে, সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। অথচ সেই সব ম্যাচেও দেখা যাচ্ছে অর্ধেক আসনই ফাঁকা। অর্থাৎ, সংরক্ষিত টিকিটের একটা বড় অংশ নষ্ট হচ্ছে প্রায় প্রতি ম্যাচেই। সৌজন্য টিকিট পেয়েও খেলা দেখতে আসছেন না অনেকেই। কিন্তু নিয়মের জন্য সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদেরও বিক্রি করা যাচ্ছে না সেই সব টিকিট। জৌলুস হারাচ্ছে বিশ্বকাপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy