অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। ছবি: টুইটার
মাত্র তিন সপ্তাহ আগের কথা। ব্রেট লি-র সঙ্গে পডকাস্টে আড্ডা মারতে বসেছিলেন অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। সম্ভবত সেটিই ছিল তাঁর শেষ সাক্ষাৎকার। সেখানে চিরবিতর্কিত মাঙ্কিগেট নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন সাইমন্ডস।
২০০৮ সালে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় ওই ঘটনা ঘটে। সিডনিতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে প্রাক্তন অফস্পিনার হরভজন সিংহের সঙ্গে বাগযুদ্ধে জড়ান সাইমন্ডস। ক্রিকেট মাঠে স্লেজিং-পাল্টা স্লেজিংকে ঘিরেই জন্ম মাঙ্কিগেট বিতর্কের। সাইমন্ডসের অভিযোগ ছিল, হরভজন তাঁর প্রতি বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য করেন। যে অভিযোগকে ঘিরে উত্তাল হয়েছিল ক্রিকেট দুনিয়া। ম্যাচ রেফারির শুনানিতে যেতে হয় সচিন তেন্ডুলকরকে পর্যন্ত। হরভজনের সঙ্গে সাইমন্ডসের বাগযুদ্ধ শুরু হয়েছিল কয়েক মাস আগেই অস্ট্রেলিয়ার ভারত সফরের সময় থেকে।
সাইমন্ডস জানিয়েছেন, ‘‘কয়েক জন সতীর্থ জানায় যে হরভজন আমাকে বাঁদর (মাঙ্কি) বলে ডেকেছে। এটা শুনে প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলাম। যারা বিষয়টা আমাকে জানিয়েছিল, তারা সেই ঘটনায় আমার পাশেই ছিল। খেলা শেয হওয়ার পর আমি সোজা ভারতের সাজঘরের সামনে চলে যাই। ভারতীয় দলের কোচকে ডেকে বলি, ‘বস এটা এখানেই শেষ হওয়া উচিত। আমরা কয়েক জন কিছু কুৎসিত নাম পেয়েছি আপনার ছেলেদের সৌজন্যে। সেগুলো যদি বলতে আরম্ভ করি।’’
সাইমন্ডসের দাবি, তাঁরা ক্রিকেট খেলেই সেই অপমানের জবাব দিয়েছিলেন। বলেছেন, ‘‘ভারত আমাদের দেশে এসেছিল নতুন বছরের টেস্ট খেলতে। মনে আছে ম্যাচের শেষ ওভারে মাইকেল ক্লার্ক ভারতের শেষ উইকেটটা তুলে নিয়েছিল। মনে হয় আমার খেলা সেটাই সেরা টেস্ট। ম্যাচের শেষ দিনেই সকালের দিকে আমার সঙ্গে হরভজনের ঘটনাটা ঘটে। তার পর ম্যাচের শেষ ওভারে আমরা জিতেছিলাম অবিশ্বাস্য ভাবে।’’
সেই বিতর্কের জল গড়িয়েছিল ম্যাচ রেফারির ঘর পর্যন্ত। লি-কে সাইমন্ডস বলেছেন, ‘‘বিকাল সা়ড়ে পাঁচটা নাগাদ খেলা শেষ হয়েছিল। কিন্তু আমরা রাত একটা পর্যন্ত স্টেডিয়ামেই ছিলাম। ম্যাচের পরেই আমাদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন ম্যাচ রেফারি মাইক প্রোক্টর। আমাদের জয়ের উৎসবই শুধু শেষ হয়ে যায়নি। তারপর ওই সব মিথ্যে... তুমি জান আমি কী বোঝাতে চাইছি।’’
অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অলরাইন্ডারের দাবি, সেই ঘটনা তাঁকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করেছিল। বলেছেন, ‘‘স্টাম্প মাইক্রোফোনে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। একটার পর একটা বিষয় উঠে আসছিল। আমার উপর চাপ বাড়ছিল। স্বাভাবিক থাকতে প্রচুর মদ খেতে শুরু করেছিলাম। সে সময় অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক রিকি পন্টিং আমাকে ভীষণ সমর্থন করেছিল। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেডেনরাও পাশে ছিল। ওরা এখনও আমার খুব ভাল বন্ধু।’’
হরভজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সমর্থনে তেমন কোনও প্রমাণ ছিল না অস্ট্রেলিয়া দলের কাছে। সাইমন্ডস প্রাক্তন সতীর্থকে বলেছেন, ‘‘আমি বিষয়টা ঠিক মতো সামলাতে পারিনি। ভেবেছিলাম সহজেই আমরা জিতে যাব। মনে আছে, আমাদের আইনি পরামর্শদাতারা বলেছিলেন, কেন আমরা হরভজনের বিরুদ্ধে অভিযোগকে আরও দৃঢ় করছি না। কেন আমরা হালকা ভাবে নিচ্ছি বিষয়টাকে। আমাদের দলে অন্তত পাঁচজন ছিল, যারা হরভজনের কথা শুনেছিল। ওঁরা প্রশ্ন তুলে বলেন, তা হলে কেন তুলনামূলক হালকা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’
সাইমন্ডস আরও বলেন, ‘‘মনে আছে পরের ম্যাচের আগে পন্টিং এবং আইনজীবীর সঙ্গে একটা বৈঠক করেছিলাম। পান্টারকে বলেছিলাম, ‘এই বিষয়গুলো কি ঠিক হচ্ছে?’ আমাকে খুবই আঘাত দিয়েছিল ওই ঘটনা। রিকি বলতেই পারে, ওই ঘটনার পর সাইমন্ডস আর আগের মতো নেই।’’
সে সময় অধিনায়ক হিসেবে দলকে স্বাভাবিক রাখার গুরু দায়িত্ব পন্টিংই নিয়েছিলেন। সাইমন্ডস জানিয়েছেন, সেই বিতর্কে দলের অনেকে জড়িয়ে পড়ায় তাঁর মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করত। কারণ তার পর থেকেই অস্ট্রেলিয়া দলের পারফরম্যান্সও ধীরে ধীরে খারাপ হতে শুরু করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy